- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

রোজ বারো ঘন্টা ডিউটি। সপ্তাহে সাতদিন। সিকিউরিটি গার্ডের কাজে মাসমাইনে সাড়ে পাঁচ হাজার

বেনজির মানব। চিংড়িপোতা, মহেশতলা। ৩০ জুলাই, ২০২০।#

বজবজের সুভাষ উদ্যানে ময়লাডিপোতে গেঞ্জি ফ্যাক্টরি। ওখানে আমাদের গার্ডের কাজ। আমরা দুজন কাজ করছি। গেঞ্জির উপর প্রিন্ট হয়, এখন মাস্কের উপরও ছবি প্রিন্ট হচ্ছে। সেলাই হয় নিউ আলিপুরে। ফ্যাকট্রি ছোটো হয়ে গেছে, পাঁচ-ছ’জন কাজ করছে। একটা শেডের চাল উড়ে গেছে আমফান ঝড়ে। সেই শেড টা বন্ধ।
চিংড়িপোতা থেকে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিটের রাস্তা সাইকেলে। রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। বড়ো বড়ো গর্ত, ভারী ট্যাংকারগুলো যায়। অথচ রাস্তা সারায়না। তিরিশ দিন কাজ। কিন্তু পয়সাটা খুব কম। ঠিকেদার সস্তায় কাজ ধরে। আমরা পাই সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে। ১২ঘন্টা ডিউটি। আরেকজন ছুটি করলে ডাবল ডিউটি পাওয়া যায়। কাজ না করলে পয়সা নেই। লকডাউনের আগে কলকাতার দিকে কাজে যেতাম। আমি মালিকের হয়ে সমস্ত দেখাশোনা করতাম। তাতে রোজগার একটু ভালো হত। এখন কলকাতায় সাইটগুলো বন্ধ। হোটেল, ফ্যাকট্রি অনেক বন্ধ। রেস্টুরেন্টগুলোতে লোক কমিয়ে দিয়েছে। ফ্ল্যাটবাড়িতে করোনা ধরা পড়লে সিকিউরিটির লোককে বসিয়ে দিচ্ছে। মালিকের একবালপুরে বাড়ি, নিজেই বেরোচ্ছে না। আমার পক্ষে তো ওইসব এলাকায় ঘোরা সম্ভব নয়।


উচ্চমাধ্যমিক পাস করতে না করতে বাড়ির চাপে রোজগারের খোঁজে দু'দুবার বম্বে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে অসুস্থ হয়ে। বাবার তিন চার বিঘা জমিতে চাষের খাটনি শরীরে সয় না। শেষমেশ সিকিউরিটি গার্ডের কাজে গত ছ'মাস। বেথুয়াডহরীর জেইআই কোম্পানির ঠিকাদারের মাধ্যমে কৃষ্ণনগরের কাছে একটা গ্রামে এল এন্ড টি কোম্পানির ইলেট্রিক্যাল জিনিসপত্রের গোডাউনে পাহারা দিতে হয়। রোজ বারো ঘন্টা ডিউটি। মোট তিন জন গার্ড। শিফটে কাজ হয়। মাইনে সাত হাজার মাসে। প্রথম তিনমাস পোশাক বাবদ ছ'শ টাকা করে কেটে নিয়েছে। জুতো নিজের। কামাই করলে দৈনিক ২৩০ টাকা মত কেটে নেয়। খাওয়া খরচ নিজের। পি এফ বাবদ মাসে হাজার দেড়েক কেটে নেয়। একবছর টানা কাজ না করলে সে টাকা পাওয়া যায়না। বেশিরভাগই একবছরের আগেই কাজ ছেড়ে দেয়। নাকাশিপাড়ার দোগাছিয়া গ্রাম থেকে এই বান্ধববর্জিত জীবনে মানসিক অশান্তিতে ভুগতে থাকা বছর একুশের এই নিরাপত্তাকর্মী, জাতিতে মাহিষ্য, শুভঙ্কর মন্ডল বলছিলেন, নিজেকে চাঁদের পাহাড়ের শঙ্করের মত লাগে, কোম্পানির কাজ নিয়ে আফ্রিকার জঙ্গলে একা থাকার মত, শঙ্করের জীবনে তবু এডভেঞ্চার ছিল, আমার তা'ও নেই। 



রাতে কাজে আসছি, চারদিকে সিসি ক্যামেরা বসানো। আপনি ঘুমোতে পারবেন না। সারারাত বসে থাকি। বরাবর সিকিউরিটি কাজে মাইনে কম। যে যত কম পয়সায় কাজ ধরতে পারে। বয়স্ক লোকেদের পেয়ে যায়।