- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বাঙালোর বিফের কদর রইল না আর কর্ণাটকের নয়া আইনে

বাদশা। বাঙালোর, কর্ণাটক। ১৪ জানুয়ারি, ২০২১।#

বাঙালোরের শিবাজীনগর রাসেল মার্কেট বহু পুরনো। মূলত গরুর গোস্তের জন্য বিখ্যাত এই মার্কেট।  বছর দুই আগে মহাবলীপুরমের একটা ফ্রেঞ্চ রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে জানতে পারি, সারা ভারতে বাঙালোরের বিফের একটা আলাদা মর্যাদা আছে। বাঙালোরে আমার বাড়ির আশেপাশে বিফের দাম ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা কিলো। এই মাংসই যখন গোয়ায় বা মহাবলীপুরমে গিয়ে পৌঁছায়, দামটা অনেক পালটে যায়। প্রচুর মুনাফা থাকে তাতে। সারা ভারত এখন অনেক কিছু নিয়েই ব্যস্ত। বিরাট কোহলি- অনুষ্কার মেয়ে হয়েছে- ইত্যাদি নানা কিছুতে। অথচ রাসেল মার্কেটের মত কর্ণাটকের হাজার হাজার কসাইখানার কর্মীরা কার্যত কপর্দক শূণ্য। কয়েক পুরুষের ব্যবসা বন্ধ, এখানকার বিজেপি সরকারের আনা গরু জবাই নিষিদ্ধ করার অর্ডিন্যান্সে।

তামিলনাড়ুতে শ্রী কৃষ্ণ গরুর গোস্তের দোকান। ছবি সৌজন্য- সাবির হোসেন

বাঙালোরে আমরা এখন যে জায়গা্টায় থাকি, তার নাম কাবাল বাইরা সান্দ্রা, আর টি নগরের মধ্যে পড়ে। এখানে অবশ্য কেউ রবীন্দ্রনাথ টেগোর নগর বলে চেনে না আরটি নগরকে। আমরা এখানে থাকি বলে শিক্ষিত, উদারমনা, বামপন্থী মানুষও খুব দুশ্চিন্তায় ভোগে। কারণ এখানে মুসলমানের সংখ্যা বেশি। ২০০৮  সাল থেকে এখানে আছি। একটা ফ্ল্যাটও কিনেছি সম্প্রতি। এবং এখানে থাকবও। আমাদের আশেপাশে কিন্তু মুসলমান মানুষ থাকেন না। ক্রিশ্চানও থাকেন না, হিন্দুও না। আমার আশেপাশে প্রচুর মানুষ থাকেন, যাদের মধ্যে কিছু মানুষ খারাপ, কিছু ভালো। আমার সবচেয়ে কাছের যে প্রতিবেশি, তার নাম যিশুকেষ্ট। চার্চ অফ সাউথ ইন্ডিয়া, সিএসআই এর একটা চার্চ, ঠিক আমার পাশের বাড়িটা। এই চার্চের দোরগোড়ায় এসে সবচেয়ে বেশি যারা ভিক্ষা চায়, তারা প্রত্যেকে মুসলমান। এই জায়গাটা আগে তুলনামূলক গরীব ছিল। এখন পাল্টাচ্ছে। অনেক অ্যাপার্ট্মেন্ট তৈরি হচ্ছে। পাঁচ ছ’বছর আগে এই এলাকাটা থেকে একটু দূরে যেখানে ভাড়া থাকতাম, সেখানেও প্রচুর মুসলমান মানুষ থাকতেন। বাঙালি আমি একাই ছিলাম না, মুর্শিদাবাদ থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন, থাকেন। বেকারিতে কাজ করেন, কিম্বা দর্জির। এই মহল্লায় সবাই আমায় ব্যানার্জি দা বলেই ডাকেন। এরা সুখে দুঃখে – দুটোতেই পাশে থাকেন। এখানে তামিল মুসলমান যেমন থাকেন, কন্নড় ক্রিশ্চানও থাকেন অনেক। গত সাত আট বছর ধরে আমার পরিবার যার কাছে সবচেয়ে ঋণী, মহম্মদ আবদুল্লা, তামিল, যার বাবা সোদপুরে রাজা খৈনির ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন, যার ছোটবেলা কেটেছে কলকাতায়, যার বউ হাওড়ার মেয়ে, যার বাড়িতে আলু দিয়ে বিফ রান্না হলে আমার বাড়িতে পাঠানো হয়, যারা আমার মা ছেলের নিয়মিত খোঁজ নেন, তাদের থেকেই আমরা চাল ডাল আলু কিনি। এই আবদুল্লার স্ত্রী আমায় জানালেন প্রথম, কর্ণাটকে অর্ডিন্যান্স জারি করে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার কথা।