- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

মার্কিন মুলুকে নির্বাচন : বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারের একজন সমর্থকের সঙ্গে কিছু আলাপ, কয়েক মাস আগে

শমীক সরকার। কলকাতা। ৫ নভেম্বর, ২০২০।#

মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলছে। আমরা দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি ট্রাম্পের ক্যারিকেচার। জো বিডেন বলে একজন হঠাৎ করেই ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হয়ে উঠেছে। ভারতীয় বংশোদ্ভুত কমলা হ্যারিস আবার তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট নমিনি। এইটুকুই আমরা দেখছি। কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই জো বিডেন লোকটি ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী তালিকায় ছিলই না প্রায় বলতে গেলে। ছিল বার্নি স্যান্ডার্স। ছিল এওসি আদ্যক্ষরের এক কমবয়সী মহিলা প্রার্থী।বার্নি স্যান্ডার্স আগের বারও ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবার দৌড়ে ছিল। শেষ মুহুর্তে হিলারি ক্লিন্টন তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। এবার যেমন হল জো বিডেন। বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থকরা বলে, বার্নি আসলে ডেমোক্র্যাট দলের লোকই নয়। সে আসলে একজন সোসালিস্ট। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী। কিন্তু মার্কিন প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানের দুই মুখ — রিপাব্লিক আর ডেমোক্র্যাট। বার্নিকে তাই কখনওই মেনে নেবেনা মার্কিন প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাম ও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী আন্দোলনের প্রসার দেখা গেছে। তারা বার্নি স্যান্ডার্সের প্রার্থীপদ সমর্থন করেছিল। এরকম এক আন্দোলনের শরিক, লেবার নোটস পত্রিকার সম্পাদক সৌরভ সরকার। তার সঙ্গে বেশ কয়েক মাস আগে কথা হয়েছিল বার্নি স্যান্ডার্সের প্রার্থীপদ ঘিরে। সেই কথোপকথনের একটা সম্পাদিত অংশ এখানে রইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে একটা পরিমাণ আইডিয়া তৈরি করার জন্য।

প্রথম প্রশ্ন ছিল সৌরভের কাছে, আমেরিকায় কি একটা বামপন্থী উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে? এই যে স্যান্ডার্স, এওসি-র জনসমর্থন, ডেমোক্রেটিক সোস্যালিস্ট অফ আমেরিকার সদস্য সংখ্যায় প্রচুর বৃদ্ধি, জ্যাকোবিন ম্যাগাজিনের পাঠক সংখ্যার বৃদ্ধি — এসব কীসের ইঙ্গিত?

উঃ — সামাজিকভাবে একটা সমাজ-গণতন্ত্রী/ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী উত্থান হচ্ছে আমেরিকায়। এই দুটো এক নয়, কিন্তু আপাততঃ এদের নীতিগত আদলটা একই। এই আন্দোলনের মধ্যে পুঁজিবাদ-বিরোধী একটা চরিত্র আছে একটা অংশের মধ্যে, এবং তারা সংখ্যালঘু। যদি আন্দোলন আরো এগোয়, তাহলে হয়ত এই অংশটা আরো শক্তিশালী হবে। এটা ঠিক মার্ক্সবাদী আদলের নয় এখনও, কিন্তু এর মধ্যে অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং শ্রেণী রাজনীতির কথা ভীষণভাবে আছে এবং আগে থেকেই ঘোষণা করা আছে — এটা বর্ণ-ন্যায়বিচারের পক্ষে, এলজিবিটি বা ভিন্ন-লিঙ্গ রাজনীতির পক্ষে, লিঙ্গ রাজনীতির পক্ষে ইত্যাদি। এর আদলটা হয়ত ইউরোপের সমাজতন্ত্রী বা সমাজ-গণতন্ত্রী ধারার মতো, এবং তাই ঠিক বামপন্থী হয়ত বলা যাবে না।

২) এই আন্দোলন শুরু হল কীভাবে?

উঃ – ২০০৭-০৮ সালে আমেরিকা যে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ে, তার উত্তরে একটা বৃহত্তর জন-আন্দোলন শুরু হয়েছিল। যার মধ্যে যেমন এই স্যান্ডার্স-এওসি-ডিএসএ-জ্যাকোবিন ইত্যাদিরা ছিল, তেমনি ট্রাম্পের সমর্থকরাও ছিল। এই ‘বাম’-রা এবং ‘ট্রাম্প’-রা — এদের নিজেদের মধ্যে যেমন মারাত্মক দ্বন্দ্ব রয়েছে, তেমনি এদের দু-পক্ষের  সঙ্গেই আবার মার্কিন নয়া-উদারবাদী প্রতিষ্ঠানেরও তীব্র দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে যুদ্ধটা তিনমুখী। একটা বড়ো অংশের মানুষ, মূলতঃ শ্রমিক শ্রেণীর যারা, তারা ক্লান্ত মার্কিন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে, সরকারের দুর্নীতি নিয়ে, কর্পোরেশনগুলির (অ্যামাজন বা স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানিগুলি এবং অতিধনী যারা) ক্ষমতা নিয়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যায় কোনো বাস্তব হস্তক্ষেপ না হওয়া নিয়ে — ইত্যাদি। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক আদলগুলি হয়ত আলাদা আলাদা। তাই আমেরিকার প্রেক্ষাপটে বামপন্থী পুনরুত্থান জরুরি, যাতে এই অবস্থায় সেটা সম্পূর্ণভাবে স্বৈরতন্ত্রী / ফ্যাসিবাদী দিকে চলে না যায় ট্রাম্প বা ফক্স নিউজ ইত্যাদিদের হাত ধরে।

একটি সহৃদয় রাষ্ট্রে মজুরদের চাই ১৫ ডলার আর সংগঠনের গ্যারান্টি। – স্যান্ডার্স। ছবি লেবার নোটস থেকে

৩) বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারে যে ইস্যুগুলো ছিল, তার মধ্যে ছিল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু — যেমন, ছাত্রদের ঋণ মুকুব, অতিধনীদের ওপর কর চাপানো, বাড়িভাড়ায় লাগাম। ইত্যাদি। তুমি কি বলতে পারবে, স্যান্ডার্সের কোন কোন ইস্যুগুলো সাধারণতঃ আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট-রিপাব্লিকানদের লড়াইতে যেসব ইস্যু থাকে, সেগুলোর চেয়ে একেবারে আলাদা ছিল?

উঃ – স্যান্ডার্সের শ্রমিক আন্দোলনের জন্য শক্তিশালী এবং নিঃশর্ত কাজ, শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানোই ছিল সেই জায়গা যেখানে স্যান্ডার্স আমেরিকার নয়া-উদারবাদী প্রতিষ্ঠান এবং স্বৈরতন্ত্রী জনপ্রিয়তাবাদী ঝোঁকের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। স্যান্ডার্সের মূল এজেন্ডা ছিল : সে পাঁচ বছরের প্রেসিডেন্সিতে আমেরিকায় শ্রমিকদের ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হবার হার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে, অর্থাৎ ২০ শতাংশে নিয়ে যাবে। স্যান্ডার্স সমর্থন করে নথিহীন শ্রমিকদের সম্পূর্ণ আইনীকরণ এবং এটাকে সীমান্ত সুরক্ষার যে বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে, তার থেকে বিচ্ছিন্ন করার পক্ষে। অপরপক্ষে ডেমোক্র্যাট-প্রতিষ্ঠান (জো বিডেন এবং কমলা হ্যারিস যে ডেমোক্র্যাট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি) নথিহীন শ্রমিকদের আইনীকরণকে সীমান্ত-সুরক্ষার চেয়ে আলাদা করতে চায় না, ফলতঃ তারা নথিহীন শ্রমিকদের আইনীকরণ-এ ইতস্ততঃ করে। এছাড়া স্যান্ডার্স কর্মক্ষেত্রে অভিবাসীদের জায়গা দেবার পক্ষে। স্যান্ডার্স ‘গ্রিন নিউ ডিল’ (জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এওসি-র র‍্যাডিক্যাল নিদান) এর পক্ষে, যার মাধ্যমে সে চায় ইউনিয়নভুক্ত ভালো চাকরি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে চাকরির গ্যারান্টী।


জানুয়ারি মাসে ফেসবুকে পোস্ট করা বার্নি স্যান্ডার্সের বাংলা পোস্টার

এই তফাতগুলো কেন? কারণ, বার্নি স্যান্ডার্স এবং আমেরিকার ‘বাম’ ও দক্ষিণ উভয়পক্ষের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য হল — বার্নি স্যান্ডার্স সামাজিক আন্দোলনের শক্তিতে বিশ্বাস করে। যখন সে প্রার্থী তালিকায় ছিল, লোকে বলত, এ যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়, তাহলে হবে আমাদের মূল-সংগঠক (organiser-in-chief). স্যান্ডার্স চাইত লড়াইটা প্রতিষ্ঠানের দু-দিকের সাথেই করতে, ‘বাম’ ও দক্ষিণ, যাতে অতিপ্রয়োজনীয় সংস্কারগুলি করা যায় এবং সমাজে বামপন্থার শক্তি বাড়ানো যায়।

দুর্ভাগ্যবশতঃ, আমেরিকার প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক আন্দোলন তাকে খুব একটা সমর্থন করেনি। যদিও কিছু ব্যতিক্রম আছে। ইউনাইটেড ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্কার্স, ন্যাশনাল নার্সেস ইউনিয়ন, ইউনাইটেড টিচার্স লক অ্যাঞ্জেলেস যারা জানুয়ারি মাসে একটা বড়োসরো স্ট্রাইক করেছিল, এরা সবাই স্যান্ডার্সকে সমর্থন করেছিল। শিক্ষক, নার্স, প্রাক্তন মিলিটারি, ওয়ালমার্টের শ্রমিক — এরা সবাই স্যান্ডার্সকে খুবই সমর্থন করত।

নির্দিষ্ট নীতিগুলি নিয়ে বলতে গেলে — আমেরিকার পুঁজিবাদ যে সমস্যাগুলির মোকাবিলা করছে — সেগুলি নিয়ে স্যান্ডার্স সরব। যেমন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার খরুচে এবং অকাজের চরিত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের আসল সঙ্কট, রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর ধনী এবং কর্পোরেশনগুলির কব্জা, ঋণ (ছাত্র ঋণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ঋণ) ইত্যাদি। এই দিক থেকে দেখলে, স্যান্ডার্স ডেমোক্র্যাটদের অন্যান্য প্রার্থীদের জন্য একটা মান তৈরি করে দিয়েছিল। এমনকি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্যও সে একটা মান তৈরি করে দিয়েছিল, যা থেকে অন্যরা কিছু কিছু নিয়েছে (যেমন স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কার)। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে ছাত্র ঋণ মুকুব বা অতিধনীদের করবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিকভাবে আমেরিকার আগ্রাসী মনোভাব কমানো — এইসব এমন কিছু নীতি সে ঊর্ধে তুলে ধরেছে, যা ঠিক সাধারণ বোধ বা কমন সেন্স নির্ভর সমাধান নয়, এবং যাতে উপকার হবে আমেরিকাবাসী তথা বাইরের মানুষদেরও।

৪) কালো, ল্যাটিনো, এশিয়ান বা লিঙ্গ রাজনীতির আন্দোলনের ভূমিকা কী ছিল?

উঃ বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারের সঙ্গে ২০১৬ সালে একবার কালো সমাজকর্মীদের ঝামেলা বেধেছিল, এবং আমি মনে করি কালো সমাজকর্মীরা ঝামেলা করে ঠিকই করেছিল। … যদিও স্যান্ডার্স বর্ণ-ন্যায়বিচারের প্রতি গভীরভাবে দায়বদ্ধ, কিন্তু কীভাবে সে বর্ণ-ন্যায়বিচারের আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করবে, সেখানে স্যান্ডার্সের কিছু সমস্যা ছিল। … আসলে স্যান্ডার্স চায় একটি বহুত্ববাদী শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন তৈরি করতে। …

৫) স্যান্ডার্সকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন তোমাদের, তাদের পরিবেশবাদী আন্দোলনগুলি সম্পর্কে অবস্থান কী? উল্টো করে বললে, পরিবেশবাদী আন্দোলনগুলির স্যান্ডার্সের ক্যাম্পেন সম্পর্কে অবস্থান কী?

উঃ – স্যান্ডার্স পরিবেশ আন্দোলন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার প্রতি সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ। এওসি-র গ্রিন নিউ ডিল স্যান্ডার্স সমর্থন করেছিল, সে তো আগেই বলেছি। আমি জানি না, পরিবেশ আন্দোলনগুলির সঙ্গে (যেমন সানরাইজ আন্দোলন ইত্যাদি) স্যান্ডার্সের আন্দোলনের সম্পর্ক কতটা গভীর, কিন্তু তারা পরস্পরকে সমর্থন করে বলে আমার ধারনা। আমার সমালোচনা হল, স্যান্ডার্স স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা-র চেয়ে। এটা হয়ত ও করেছে, কারণ আমেরিকার শ্রমিক শ্রেণী সবচেয়ে বেশি পীড়িত এখন ভঙ্গুর ও খরচসাপেক্ষ স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এখনই অতটা নয়। …

৬) আমেরিকা হল একটা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। অর্থাৎ এর আভ্যন্তরীন অর্থনীতি স্বাস্থ্য বেশিরভাগটাই নির্ভর করে এর বিদেশনীতি এবং সামরিক শক্তির জোরের ওপর দাঁড়ানো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য-র ওপর, যা সে বাকি দুনিয়ার ওপর খাটায়। স্যান্ডার্সের যে ক্যাম্পেন — তার কি ক্ষমতা আছে এই সাম্রাজ্যবাদী বিদেশনীতিকে চ্যালেঞ্জ করার? এই প্রশ্নটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের দেশ নানাদিক (প্রযুক্তি, অর্থনীতি, সামরিক) থেকে আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল এবং যত দিন যাচ্ছে এই নির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে।

উঃ স্যান্ডার্স বিদেশনীতি পরিবর্তনের পক্ষে এবং আমেরিকার নগ্ন আগ্রাসন বন্ধ করার পক্ষে (যেমন, ইয়েমেনে মার্কিন আগ্রাসন বন্ধ করায় সে বড়ো ভূমিকা নিয়েছিল)। কিন্তু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাঠামোগত পরিবর্তন সে করতে পারত না। এই সমস্যাটা অনেক গভীরের সমস্যা এবং আমি স্যান্ডার্সের সমর্থক হয়েও এইটাতে স্যান্ডার্সের সমালোচনা করার পক্ষে। এবং শুধু স্যান্ডার্স নয়, সমস্ত মার্কিন রাজনীতিকেরই সমালোচনা করা উচিত এই ইস্যুতে। উন্মুক্ত সীমান্ত-র আহ্বানের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল স্যান্ডার্স, ইজরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষে স্যান্ডার্স। যখন স্যান্ডার্সকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার সমাজতান্ত্রিক মডেল কী, সে উত্তর দেয়, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর। কিন্তু সে কিছুতেই কিউবা, বলিভিয়া বা মাও-এর কথা বলে না। স্বাস্থ্যব্যবস্থার মডেল কি জিজ্ঞেস করলে সে উদাহরণ দেয় “প্রধান দেশগুলি”-র, কিন্তু সবাই জানে, সে যেগুলোর কথা বলে, সেগুলো ধনী দেশ।

… স্যান্ডার্স অন্যদের তুলনায় বিদেশনীতিতে মোলায়েম, যেমন সে প্যালেস্তিনিয়ানদের মানবাধিকারের পক্ষে, বলিভিয়ার ক্যু-কে সে ক্যু-ই বলে, লাতিন আমেরিকার প্রতি আমেরিকা যে ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চনা করেছে, তা সে স্বীকার করে, কারণ সে অভিবাসনের দলিলে রেখেছে, গুয়াতেমালা বা হন্ডুরাসে সাহায্য পাঠানো প্রয়োজন এবং তার মাধ্যমে সে লাতিন আমেরিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে লাতিন আমেরিকা থেকে অনুপ্রবেশের ব্যাপারটা জড়িয়ে, তা স্বীকার করে।

… যদিও এগুলো কিছুই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী কাঠামোকে পরিবর্তন করতে পারবে না, খুব বেশি হলে তাকে একটু এদিক ওদিক করে নিতে পারত। কিন্তু আমার কথা অন্য। স্যান্ডার্স ব্যক্তিটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্যান্ডার্সের ক্যাম্পেনে এমন কিছু কিছু শক্তি আছে, যারা কিন্তু জেনুইন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। আমি তাদের ওপর আস্থা রাখার পক্ষে, স্যান্ডার্সের জোড়াতালি দেওয়া বিদেশনীতির ওপর নয়। যদি আমেরিকার মধ্যে সত্যিকারের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তির সঙ্গে বাইরের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তির ঐক্যের প্রশ্ন আসে, তাহলে স্যান্ডার্স স্টাইলের রাজনীতি যদি আমেরিকায় বিরাজ করে, তার মধ্যে থেকে করা সবচেয়ে সহজ। তা সে স্যান্ডার্সের বিদেশনীতি যতই বিদঘুটে হোক না কেন। …

করোনা লকডাউনের আগে বা শুরুর দিকে এই সৌরভ সরকারের সঙ্গে এই বাক্যালাপ হয়। তারপর তো স্যান্ডার্স ডেমোক্রেটিক পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে সরে যায়। এখন ভোট-ও হয়ে যেতে চলল। সৌরভকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কী বুঝছ? বলল, টাচ উড। ট্রাম্প হারছে। আমরা আপাততঃ চুপটি করে আছি। ঘাপটি মেরে আছি। ইলেকশন মিটে গেলেই রাস্তায় নেমে পড়ব মার্কিন এস্টাব্লিশমেন্টের বিরোধিতা নিয়ে। তা সে যে-ই জিতুক।