- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ফলতায় বর্ষার ধান চাষের হাল

আজ শ্রাবণ মাসের ১৫ তারিখ, গোটা ফলতা ব্লকের বেশিরভাগ জমিতেই রোয়া বাকি। মাঠে জল জমেনি। মাঝে একটা কোটালে (আষাঢ় মাসের শেষ কোটালে) জল উঠলেও সব জমি সে জল পায়নি। তার ফলে যারা চাষের ওপর একান্ত নির্ভরশীল তারা অনেকে বুঝে উঠতে পারেনি কী করবে। এবারে গরম পড়েছিল প্রচণ্ড। বৈশাখ মাসের দিকে যখন খোরোর ধান ওঠার সময়, তখন অল্পসল্প বা কখনো বৃষ্টির সাথে ঝড়। তাতে সাত তাড়াতাড়ি করে ধান তুলেছে লোকে। তারও আগে ফাল্গুনের শেষে আর চৈত্র মাসের দিকে শিলাবৃষ্টি হতে সবে থোড় আসা ধানের ক্ষতি হয়েছিল খুব। সার, বিষ, হাল সব দেনাদুনি করে, জমিও আগাম টাকায়, গতর খাটিয়ে আড়াই বিঘে জমি চাষ করে চার বস্তা ধান পেয়েছেন। তাও অনেক ধান চিটে হয়েছে, খোরাকিটাও হবে না, দেনা শোধ করা তো দূরের কথা।
চালু একটা শ্লোক আছে হিন্দু চাষিদের মধ্যে — কী জানি কী পাঁজি পুঁথি, আষাঢ় মাসের সাড়ে সাত দিনে অম্বুবাচি। আর এই অম্বুবাচির আশপাশের মধ্যেই বীজতলা তৈরি শেষ করে ফেলার কথা। ওই সময় থেকে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে তাপমান কমতে শুরু করে। এবারও সবেবরাতের পর ২১ আষাঢ় প্রথম ফলতা ব্লকে ভারী বৃষ্টি হল। তারপর মাঠে হালকা রস ছিল, কিন্তু তা হাল করার মতো নয়। এই শ্রাবণ মাসের ৪/৫ তারিখ থেকে বৃষ্টি নামল, ভালো করে তাতে জল জমল। তাও সমস্ত মাঠে নয়, ফলতা দোস্তিপুর রোডের ওপর ৪ নং-এ নেমে নিত্যানন্দপুর বা দিঘিরপার নস্করপুর রোডে। ভাতারের পোলের কাছে সহলা-কাঁটাফুলি/হরিশপুর এই সমস্ত মাঠ খালা প্রকৃতির, আর তাই জলের চাপটাও সমস্ত সময় বেশি থাকে।

ছবি ও খবর পার্থ কয়াল, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে

দিঘিড়পার বাজার থেকে আলমবিবি যাওয়ার পথে রাস্তার ডান দিকে ১৩ শ্রাবণ তোলা। বীজতলা করা অথচ জলের অভাবে রুইতে পারছেন না, এখানে রাস্তার কাজের জন্য মাটি কেটে খালা করা অংশে আগের দিনের বৃষ্টিতে জল জমলে তলার মাটি এত শক্ত যে টেনে তুলতে গেলে ছিঁড়ে যাচ্ছে। ডায়মন্ড হারবার রোডের কাছে এই মাঠের বেশির ভাগ জমি বিক্রি হয়ে গেছে।
ফলতার ন’পুকুরিয়া অঞ্চলে মাদ্রাসার মোড়ের সামনে তোলা মাঠে আগে পুরোটাই চাষ হত। এ বছর কিছুটা হাল হয়েছে, বাকিটা এখনও হয়নি (১৩ শ্রাবণ)। এখানে মানুষ রিক্সা টানা, মশারির ব্যবসা করলেও চাষের, বিশেষত ধান চাষের ওপর সম্বৎসরে ভরসা করে থাকে, অথচ এই অঞ্চল নয়া সবুজ বিপ্লবের কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প বিজিআরইআই-এর আওতায় পড়েনি।
সুজাপুরে রাস্তার ধারের জমি বিক্রি হয়ে গিয়ে খালের ওপর দিয়ে কালভার্ট হয়েছে। যারা একলপ্তে অনেকটা জমির মালিক, তারা আর চাষ করে না, অন্যকে দিয়ে চাষ করায়। বিনিময়ে টাকা নেয়। এবারে ধানের বাজারদর কম, লোকে টাকা দিতে পারবে সেই ভরসা করা যাচ্ছে না, তাই দাম ভালো পেলে কোম্পানির কাছে জমি বিক্রি করে দিচ্ছে।
‘কাগরি তলা’ (শক্ত জমিতে বীজ দেওয়া, বৃষ্টি হলে তা থেকে চারা বেরোয়) করেছেন রবীন জানা আষাঢ় মাসের শেষ সপ্তাহে। এই জমি রাস্তার পাশের খালের ধারে। এখানে জলের চাপ ভালো থাকে, আর যে বাঁশ দেখা যাচ্ছে, তার কাছ দিয়ে সেচের জন্য সোঁতা খাল আছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জমি রোয়ার কাজ করছেন হরিসাধন, এটা লাল স্বর্ণ ধান। পাশের জমিতেও কিছু লাল স্বর্ণ ধান পেয়ে চাষ করেছেন গৌতম। মাছের ব্যবসায় লস খাওয়ায় এইবার চাষে নেমেছেন, জমি আগাম নিয়ে।

 

 

 

 

 

 

 

 

তনুদা খোরোর সময় চাষ করেছেন, আর মাসুম ইট ভাটায় কাজ করেছেন, এখন সকালে মাঠে কাজ করছেন আর ফাঁকে মহিরামপুরের ফকিরপাড়া থেকে ওস্তাগরের কাজ নিয়ে এসে কাটিং করছেন, পার পিস ১ টাকা। এই ‘তিন জোড়’ কমদামি হাফপ্যান্ট হাওড়ার হাটে বিকোয়।
ভাতারে হরিশপুরের আগে ঝুমিয়া গ্রামের কাছে পুবের মাঠ, ১৩ শ্রাবণ।
লাল স্বর্ণ ধানের ‘পেকে তলা’ (পাঁকে বীজতলা) করা হচ্ছে ২৫ আষাঢ়। এই ধান বিজিআরইআই প্রকল্পে কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে পাওয়া। ফলতা মল্লিকপুরে।
১৪ শ্রাবণ রবীন জানার জমিতে ট্রাক্টরে হাল হচ্ছে।