- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

নীমা তেনজিনদের স্বপ্ন কি সার্থক হবে ?

২৯ আগস্ট তিপ্পান্ন বছর বয়স্ক তিব্বতী জওয়ান নীমা তেনজিন পশ্চিম লাদাখের প্যাংগঙ হ্রদের দক্ষিণ তীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটা অপারেশন চলাকালীন নিহত হয়েছেন। লাদাখের রাজধানী লেহ্‌ শহরের পাঁচ কিলোমিটার দূরে চোগলামসার গ্রামে এক তিব্বতী শরণার্থী পরিবারের সন্তান নীমা তেনজিন, ঘরে রয়েছে তাঁর স্ত্রী আর তিন সন্তান।

তাঁকে জওয়ান বা সৈন্য বলা ভুল হবে। কারণ তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন না। গত তেত্রিশ বছর ধরে তিনি ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’ নামক এক গুপ্ত-বাহিনীর ‘বিকাশ রেজিমেন্ট’-এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের পর ভারত সরকার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সহায়তায় এই গুপ্ত-বাহিনী গঠন করেছিল। চীন তিব্বত দখল করার পর স্বাধীনতার জন্য তিব্বতের লাসায় এক বিদ্রোহ হয়েছিল। সেই বিদ্রোহ চীনা রাষ্ট্র কঠোর হস্তে দমন করে। তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামা গোপনে ভারতে পালিয়ে আসেন। পাশাপাশি হাজার হাজার তিব্বতী পরিবার এদেশে চলে আসে। আশ্রিত সহায়সম্বলহীন শরণার্থী যুবকদের জড়ো করে এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়। নীমা তেনজিন ছিলেন এই বাহিনীর সদস্য।

কীভাবে তাঁর মৃত্যু হল? সরকারিভাবে খোলাখুলি কোনো কারণ জানানো হয়নি। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা যায় দুটি তথ্য : অপারেশন চলাকালীন পাহাড়ের ওপর পোঁতা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে নীমার মৃত্যু হয়েছে; দ্বিতীয় তথ্য, চীনা সৈন্যদের গুলিতে ওঁর মৃত্যু হয়েছে।

শহীদ নীমা তেনজিন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নীমা তেনজিনকে কবরস্থ করা হয়েছে। ওঁর শবাধারের ওপর ভারতীয় জাতীয় পতাকার পাশে তিব্বতের জাতীয় পতাকাও রাখা হয়েছিল। ভারতের জয়ধ্বনির পাশাপাশি উপস্থিত তিব্বতী জনতা ‘জয় তিব্বত’ ধ্বনিও দিতে থাকে।

 

আচ্ছা, ভেবে দেখা যাক বিষয়টা। যদি ভারতীয় সেনাবাহিনী অথবা তার সহায়ক কোনো বাহিনীর এক কাশ্মীরি জওয়ানের মৃত্যু হত, তাহলে কি কাশ্মীরের পতাকা শবাধারে রাখা হত? কোনোদিনই হয়নি তা। আর ৬ আগস্ট ২০১৯ সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর তো কাশ্মীরের সমস্ত সরকারি ভবনের ওপর থেকে কাশ্মীরের নিজস্ব পতাকাটাও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ তিব্বতী জনসমাজ লড়ছে চীনের দখলমুক্ত হয়ে তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য; আর কাশ্মীরি জনসমাজ লড়ছে ভারত, পাকিস্তান আর চীনের দখলদারি থেকে কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য।

নীমার মতো তিব্বত থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে আসা তিব্বতী যুবকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভয়ঙ্কর দুর্গম পাহাড়ি জনমানবহীন সীমান্ত এলাকায় ভারতের হয়ে লড়াই চালিয়ে যায়। তাদের একটাই স্বপ্ন — তিব্বত একদিন স্বাধীন হবে।

৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ চীনা সংবাদপত্র ‘দ্য গ্লোবাল টাইমস’-এর এক প্রবন্ধে লেখা হয়েছে : “সীমান্ত প্রশ্নে চীনের স্বার্থকে আঘাত করার জন্য কেবল ভারতের কামানের খোরাক হিসেবে এই নির্বাসিত তিব্বতীরা কাজ করে … ভারতের কি ‘তিব্বতের বিচ্ছিন্নতাবাদ’কে স্বীকৃতি দেওয়ার সাহস আছে? আর তিব্বত যে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, একথা অস্বীকার করার সাহস ভারতের আছে?”

এর আগে ১৫ জুন সীমান্ত-সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল। চীনা সেনাদের হতাহতের পাকা খবর পাওয়া যায়নি। ৪ সেপ্টেম্বর অরুণাচলের উত্তর সুবনসিরি থেকে তাগিন জনসমাজের পাঁচ যুবক জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে চীনা সরকার ঘোষণা করে যে তারাই ওঁদের অপহরণ করেছে। ভারত-তিব্বত সীমান্তে অশান্তি লেগেই রয়েছে।