- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

রেলের অন্দরেই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে কর্মচারিরা। বাইরে জনগণ উত্তাল রেল চালানোর দাবীতে।

 

রেলকর্মচারীদের সাথে কথাবার্তার ভিত্তিতে ধীমান বসাকের পাঠানো প্রতিবেদন। শান্তিপুর। ১২ অক্টোবর, ২০২০।#

সাত মাস বন্ধ রেল। ভারতীয় জনগণের লাইফলাইন। স্রেফ ট্রেন বন্ধ বলে কয়েক লাখ শ্রমিক মার্চের শেষ থেকে কয়েক হাজার মাইল পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। স্রেফ ট্রেন চলেনি বলে কয়েক লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে, পেশা বদলে কোনোরকমে দিন গুজরান করতে বাধ্য হয়েছেন। ট্রেন কিন্তু চলেছে। বরাবর। কখনো শ্রমিক স্পেশাল নাম নিয়ে, কখনো স্টাফ স্পেশাল ডাকনামে। কিন্তু নামডাকের বাইরে রয়ে যাওয়া বিশাল মেহেনতি মানুষ তাতে চড়ার সুযোগ পায়নি। এরপরেও পাবে কিনা সন্দেহ। তাই হয়তো কালিনারায়ণপুর থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে পানিফল নিয়ে উঠে পড়েন চাষি, শান্তিপুরের হাট ধরবে বলে। তাই হয়তো দিন কয়েক আগে, ৮ অক্টোবর, সোনারপুর স্টেশনে কয়েকশ’ মানুষ সহ্য করতে না পেরে রেলগাড়ি লক্ষ্য করে দুমদাম পাথর ছুড়তে শুরু করে।

রেলের বেসরকারিকরণ

ভারতীয় রেলের যাত্রার শুরুর দিন থেকে ১৯৯০-১৯৯১ সাল পর্যন্ত কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। রেললাইনের আয়তন বেড়েছে, ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে, স্টেশনের সংখ্যা বেড়েছে, তার সাথে সাজুয্য রেখে কর্মচারীর সংখ্যাও বেড়েছে। ১৯৫০-১৯৫১ বর্ষে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ১৩ হাজার ৬০০। ১৯৯০-১৯৯১ বর্ষে সেই সংখ্যা পৌঁছায় ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ –এ।

১৯৯১ সালে পি ভি নরসিমা রাও-এর নেতৃত্বে মনমোহন সিং এর হাত ধরে ভারতীয় অর্থনীতিতে নয়া উদারনীতিবাদের প্রবেশ। অর্থাৎ সরকারি নিয়ন্ত্রণের আগল খুলে বেসরকারি পুঁজিকে আহ্বান। রেল বেসরকারিকরণের ভাবনা। ফলস্বরূপ ২০১০-২০১১ বর্ষে রেল শ্রমিকের সংখ্যা নেমে আসে ১৩ লাখ ২৮,২০০ তে। অথচ এই সময়কালেই ট্রেনের সংখ্যা, স্টেশনের সংখ্যা ও রেলপথের আয়তন বহু অংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রেলে কর্মচারীর সংখ্যা ১২ লাখ ২৭ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

এটা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে শ্রমিকদের উপর কাজের বোঝা চাপিয়ে। লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যানদের ডিউটি আওয়ার্স ৮ ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে জোরজবরদস্তি ১২ ঘন্টা করা হয়েছে। রানিং স্টাফ অর্থাৎ গার্ড ড্রাইভারের সপ্তাহান্তে কোনো রেস্ট-ডে নেই। তারা ৩৬৫ দিনে ৩৬৫ দিন চাকরি করতে বাধ্য থাকেন। এবং তারা যে দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা ডিউটি করেন, সেই সময়ে কোনো রিসেস আওয়ার্স মঞ্জুর করা হয় না। তাদের কর্মস্থান, ইঞ্জিন, ব্রেকভ্যান বা ক্যাব – যাই হোক কোথাও কোনো ওয়াশরুম থাকেনা। প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে ৮-১০ ঘন্টা মনঃসংযোগে চিড় না ধরিয়ে তারা কর্তব্যপালনে অবিচল থাকেন। এদের মনঃসংযোগে খামতি মানেই দুর্ঘটনা, ফলস্বরূপ চাকরি থেকে বরখাস্ত। এহেন কর্মচারীদের, যারা নিজেদের রোজকার শারীরিক প্রয়োজনকে অস্বীকার করে রেলকে সেবা করে যাচ্ছেন চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনাকে নিত্যদিন মাথায় রেখে, অগ্রিম অবসরের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ ‘স্যালুট’ নামের এক স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প এনেছে। তাতে বলা আছে কাজের ধরনের জন্যই তারা ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকেন না। একারণেই তাদের স্যালুট এর মাধ্যমে অগ্রিম অবসরের পথ দেখানো হচ্ছে অর্থাৎ রেল বকলমে স্বীকার করে নিচ্ছে ড্রাইভারদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়। এই প্রকল্পে যে সুবিধার কথা বলা হয়েছে তা হল স্বাভাবিক অবসর পর্যন্ত যেকটি ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য তার অর্ধেক সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর শেষ বেসিক পে-এর সাথে যোগ করে পেনশন নির্দিষ্ট করা হবে। স্যালুট না বেইজ্জতি? কর্মাচারী কর্মক্ষম থাকুক আর না থাকুক কর্তৃপক্ষ সব শ্রমিকের জন্য অগ্রিম অবসরের প্রকল্প শীঘ্রই আনছে। কারণ বর্তমান সরকার বন্ধু পুঁজিপতিদেরকে রেল উপহার দিতে চায়। বেসরকারি মালিকেরা এত শ্রম নিয়ে রেল চালাবে না। তারা মুনাফা চায়। তাই সমস্ত নিরাপত্তা বিধি শিকেয় তুলে আগামীদিনে দুর্ঘটনা নিত্যদিনের সাথী করে চালকহীন ট্রেন চলবে।

 

ট্র্যাকম্যান :

১২ ঘন্টার ডিউটি শিফট। কাজের স্বার্থে যে যন্ত্রপাতি বইতে হয়, তার ওজন ২০ কেজি। রেল লাইন চেক করার স্বার্থে এই ভার নিয়ে ৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে চাকরি করতে হয়। যেমন গরমের তপ্ত দুপুরে, শীতের ভোরে প্রবল ঠান্ডায়। প্রতি মূহুর্তে ট্রেনে কাটা পড়ার সম্ভাবনা। প্রত্যেক বছর কর্মরত অবস্থায় ৩০০ ট্র্যাকম্যানের মৃত্যু হয়।

একই রুটে নতুন ট্রেনের সংযোজন :

প্রত্যেক রেল বাজেটে একই পথে একাধিক নতুন ট্রেনের যাত্রার কথা ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার মধ্যে যতটা ব্যাবসায়িক স্বার্থ বা যাত্রী স্বার্থ থাকে তার অনেক বেশি থাকে রাজনৈতিক স্বার্থ। সেই কারণেই বর্তমান পরিকাঠামোর ট্রেন বহন ক্ষমতার কথা একদমই বিবেচনা করা হয় না। এমনকি ট্র্যাক মেইনটেন্যান্সের জন্য পর্যাপ্ত সময়ও পাওয়া যায় না। এব্যাপারে শ্রমিক সংগঠনগুলো প্রশাসনের নীরব সমর্থক।

ট্রেন দুর্ঘটনা :

সময়ের সাথে সাথে ট্রেন দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমেছে। কারণ প্রযুক্তির উন্নয়ন। সিগন্যাল ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন। হাতাওয়ালা সিগন্যাল থেকে মাল্টিকালার লাইট সিগন্যাল। সিগন্যালিং ব্যবস্থায় সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে এল. ই. ডি. (লাইট এমিটিং ডায়োড)- এর ব্যবহার। এরপর এল অটোমেটিক সিগন্যালিং এর ব্যবহার। উন্নত মেসিনের (ডাইনামিক ট্র্যাক ট্যাম্পিং মেসিন, ব্যালাস্ট ক্লিন মেসিন, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং ট্যাম্পি মেসিন) সাহায্যে রেল ট্র্যাকের পর্যবেক্ষণ ও মেরামত লাইনচ্যুতির ঘটনাকে অনেক কমিয়েছে। আগে এই সমস্ত কাজ ম্যানুয়ালি করা হতো। এছাড়াও ইঞ্জিনে অ্যান্টি কলিসন ডিভাইস যুক্ত করা হয়েছে। ফলে কর্মচারীর সংখ্যা কমা সত্ত্বেও অ্যাকসিডেন্টের সংখ্যা আগের থেকে কমেছে।

প্রশাসন সবসময়ই মানুষের ব্যর্থতাকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখিয়ে দায় সেরেছে। মানুষ কেন ব্যর্থ হচ্ছে তা দেখতে চায়নি। চালক কখনও অন্যমনস্ক হতে পারেনা। কর্মচারী কখনও ভুল করতে পারে না – এই অবৈজ্ঞানিক প্রত্যাশা করেছে এবং আজও করছে।

 

সাল দুর্ঘটনা আহত মৃত্যু
২০০৬-৭ ১৯৫ ৪০২ ২০৮
২০০৭-৮ ১৯৪ ৪১২ ১৯১
২০০৮-৯ ১৭৭ ৪৪৪ ২০৯
২০০৯-১০ ১৬৫ ৩৯২ ২৩৮
২০১০-১১ ১৪১ ৪৬৩ ৩৮১

 

এই টেবিল থেকে দেখা যাচ্ছে যে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে কিন্তু হত ও আহতের সংখ্যা বেড়েছে।

১৪ ই নভেম্বর, ১৯৭৯ মুম্বাই বিটির মাতুঙ্গা ও সিওন স্টেশনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সি-৩৫ ট্রেনের পেছনে টি-৮১ ধাক্কা মারে। এই দুর্ঘটনায় টি-৮১ এর মোটরম্যান এইচ দে ও আরও ৮ জন মারা যান। ঘটনাস্থলেই মারা যান। টি-৮১ এর মোটরম্যান এইচ দে অসুস্থতার কারণেই হোক বা বাইরের থেকে ছোড়া পাথরের আঘাতেই হোক, উনি অজ্ঞান হয়ে ডেড ম্যান হ্যান্ডেলের উপরেই পড়ে থাকেন, ফলে ট্রেন চলতে থাকে এবং সি-৩৫ কে ধাক্কা মারে। রেল, এই দুর্ঘটনাকে ‘অ্যাক্ট অফ গড’ বলে অভিহিত করেছিল। সহকারী মোটরম্যান না দেওয়ার দায় স্বীকার করেনি।

১৯৭৪ সালের রেল ধর্মঘট :

দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিবাদে ৮ই মে থেকে ২৭ শে মে পর্যন্ত রেল শ্রমিকেরা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন। মূল দাবী ছিল, ট্রেন ড্রাইভারদের ডিউটি আওয়ার্স ৮ ঘন্টায় সীমিত করা। বেতন বৃদ্ধি। এক দশকের বেশি একই বেতনে চাকরি, যেখানে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মমাফিক বেতন বাড়ে।

 

বেসরকারিকরণের স্বপক্ষে রেলমন্ত্রকের যুক্তি :

১) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে

২) পরিষেবা অনেক আধুনিক ও উন্নত হবে

৩) বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশে রেল ব্যক্তি মালিকানাধীন

এই উদ্দেশ্যে রেলমন্ত্রক ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি জারি করছে, ঐসব বিজ্ঞপ্তিতে ১৯৭২ ও ১৯৮৭ সালের নিয়মের উল্লেখ করে কর্মচারীদের আগাম অবসরের বার্তা পাঠাচ্ছে। রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে ও ওয়ার্কশপে কর্মচারীদের (যাদের বয়স ৫৫ বছর বা কর্মজীবন ৩০ বছরের) তালিকা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। অবিলম্বেই তাদের অবসর গ্রহণের চিঠি ধরানো হবে। এই আকষ্মিক অবসর গ্রহণে ঐসব কর্মচারী ও তাদের পরিবার যে আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে সেকথা এই সরকারের ভাবনাতেই নেই। সরকার ১৯৭২ সালের নিয়মের সুযোগ নিচ্ছে যা পূর্বের কোনো সরকারই প্রয়োগ করেনি। আগের সরকার কর্মচারীদের স্বার্থের কথা ভেবে স্বেচ্ছাবসরের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। বর্তমান সরকারের কোনো ক্ষেত্রেই কোনো মানবিক মুখ দেখা যাচ্ছে না। সেটা শুধু সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রেই নয়, লকডাউন পিরিয়ডে ভিন্নরাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো, কৃষকের ঋণ মুকুব, নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র সংগ্রহে দুর্দশাগ্রস্ত আবালবৃদ্ধবনিতা, নোটবন্দীর সময়ে ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো বয়স্ক নাগরিক – কোনো ক্ষেত্রেই সরকারকে মানবিক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

এখন দেখা যাক রেলের বেসরকারিকরণের ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কতটা বাড়বে। বাস্তবে বহু রেল কর্মচারীর চাকরি যাবে। কিছু শিক্ষিত যুবক যুবতী সামান্য মাইনেতে অনিশ্চিত কিছু কাজ পাবে। তাদের কাজ-ঘন্টার কোনো সীমা পরিসীমা থাকবেনা। একাধিক কাজ করতে হবে। যেমন টিকিট যিনি বিক্রি করবেন, তিনিই আবার চা-কফি-টিফিন বিক্রি করবেন। বিমানসেবিকাদের মত। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা থাকবেনা। চলবে লাগামছাড়া শোষণ। নির্দিষ্ট বেতন ও সুনির্দিষ্ট চাকরির পরিবর্তে কিছু স্বল্প বেতনের অস্থায়ী চাকরি।

সরকারের দ্বিতীয় যুক্তি পরিষেবা আধুনিক ও উন্নত হবে। হ্যাঁ, হবে। ট্রেন-যাত্রা বিলাসবহুল হবে, সেই সাথে ব্যয়বহুলও হবে। তাই রেল পরিষেবা আমজনতার নাগালের বাইরে চলে যাবে। মুনাফার লোভে নিরাপত্তা জনিত নিয়মের সাথে আপোষ হবে। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাই আধুনিক ও বিলাসবহুল যাত্রা, যাত্রীদের কোন গন্তব্যে নিয়ে যাবে তা বলা মুশকিল।

সরকারের তৃতীয় বক্তব্য, বিশ্বের সমস্ত উন্নতদেশেই রেল ব্যক্তি-মালিকানাধীন।

সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, ফ্রান্সের মত কতিপয় উন্নত দেশ বাদে বাকি উন্নত দেশগুলিতে রেল সরকার চালায় না। এর মধ্যে জাপান ও কানাডা বাদ দিয়ে বাকি দেশগুলোতে রেল সরকারিকরণের ব্যাপক দাবী উঠছে। দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি। যখন তখন ট্রেন বাতিল। – এইসব নানাবিধ কারণে সেখানকার জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

সবচেয়ে সুলভ বৃহত্তম পরিবহণ ব্যবস্থা সরকার পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিয়ে দেশের ৭০ শতাংশ গরীব মানুষের কোন উপকারটা করবে এখন সেটাই দেখার।

আরো একটি সাম্প্রতিক ঘটনা

অমিতাভ সেনগুপ্ত। গত ২৬ শে সেপ্টেম্বর বেরিয়ে ছিলেন কাজে, নিজের স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে রেখে। তিনি রেলের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার, লিলুয়া ওয়ার্কশপে পোস্টেড। তাঁকে সেদিন জরুরী ভিত্তিতে ডানকুনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ইমিডিয়েট বস মিঃ ভার্মা তাঁকে অর্ডার করেন রেলের কোচের মাথায় উঠে কাজের ইন্সপেকশন করতে। অথচ ভুলে যান ২৫০০০ ভোল্টের কারেন্ট পাস করছে সেখান দিয়ে, সেটা অফ করাতে হবে। ফলস্বরূপ ঝলসে গেলো অমিতাভদার সারা শরীর। ছিটকে পড়লেন তিনি রেলের কোচের উপর থেকে রেললাইনের পাথরে। ঝলসে যাওয়া শরীর, ফেটে যাওয়া মাথায় তাঁকে ভর্তি করা হয় বি আর সিং হসপিটালে। গত ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলছিলো যমে-মানুষে টানাটানি। লড়ছিলেন অমিতাভদা, আমাদের সাহসী, অকুতোভয় অমিতাভদা। কিন্তু আর পারলেন না, ২ তারিখ রাত ১০টা ১০ মিনিটে তিনি হার মানলেন, ছেড়ে গেলেন অসহায় পরিবারকে। আজ পর্যন্ত তাঁর মৃতদেহ দাহ করতে পারেনি পরিবার। পোস্টমর্টেম করার নামে আটকে আছে দেহ। কলকাতা পুলিশ না জি.আর.পি.এফ. — কার দায়িত্ব তাই নিয়ে দেহ ফেলে রাখা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ, নির্বিকার। কোনো দায়িত্ব নেই তাদের, সিনিয়ার সেকশন অফিসারের মৃত্যু নিয়ে। মিঃ ভার্মা, যার আদেশপালন করতে গিয়ে আজ অমিতাভদা অমানুষিক কষ্ট পেয়ে মারা গেলেন, তিনি দিব্যি আছেন। তাকে সাসপেন্ড করে কোনো তদন্ত শুরু করার সময় ভারতীয় রেল এখনো পায়নি। কোনো তদন্ত নেই, নেই তদন্তের আশ্বাসও। তাঁর পরিবারের প্রতি নেই কোনো দায়িত্ববোধও। তাঁর পরিবার শোকে পাথর হয়ে রয়েছে। তাঁরা মনে করেন অমিতাভদা কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার। কিন্তু লড়াই করার মতো মানসিক অবস্থায় নেই তাঁদের। পরিবারের লোকেরা তাঁর মৃতদেহ সৎকারের অপেক্ষায়।