- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

করোনার বিধিনিষেধের মধ্যেও এবারের ঈদ বেশ অন্যরকম

শাকিল মহিনউদ্দিন, হাজি রতন। মেটিয়াবুরুজ। ৫ অগাস্ট, ২০২০।#

রকমারি বেলুন, পাটকাঠির বেড়া, চকমকি কাগজের বাহার ছিলনা। কিন্তু ছিল নিঃশব্দে পরব সেরে নেওয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছা। অবশ্য মাথায় ছিল করোনার ছোবলের কথা। কিম্বা লকডাউনে প্রশাসনিক ব্যারিকেডের কথা। কোমর ভাঙা অর্থনীতির হাল ইতিমধ্যেই এলাকার মন মানসিকতা দুমড়ে মুচড়ে একাকার করে দিয়েছিল। তার মধ্যেই চলছিল টুকটাক আয়োজন। কিন্তু শেষবেলার ঢল কিছুটা হলেও হিসেব পালটে দিল। খানাপিনার হরেক আইটেম না হলেও কাজ চালানো রান্নার খুশবুতে এলাকার হালকা বাতাসও ভারি হয়ে উঠেছিল। আহা! বিরিয়ানির সে কি সুবাস! কাবাব, কোর্মা, কিমা, কোপ্তা – প্রস্তুতি ছিল ভেতরে ভেতরে। কিন্তু উৎসবের ছোঁয়া যাদের মনকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে, সেই শিশুদের কিন্তু কোনো খামতি ছিলনা। ঈদের দিন পনের আগে থেকেই পশু দেখার জন্য ছোট হাতির পেছন পেছন দল বেঁধে ভিড় করা, গাড়ি থেকে পশুকে নামানোর দৃশ্য দেখে উৎকন্ঠিত, ভয় মিশ্রিত আনন্দ উপভোগ করা থেকে তারা কিন্তু বিরত ছিলনা। এরপর ঈদুজ্জোহার সেই দিনটা – নামাজ শেষে কোলাকুলি, আত্মীয়ের বাড়ি খাবার পাঠানো আর গরীব-দুঃস্থদের ঈদের শিন্নি বিতরণ করা তো ছিলই। কিন্তু লক্ষ্যণীয় ব্যাপার, এবারে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভিখারীদের খুব একটা ভিড় ছিলনা। অবশ্য নজরে পড়েছিল কয়েকটি টাটা সুমো ও অটো রিজার্ভ করে আসা কিছু ভিখারীদের। আক্রা ফটকের ফুলতলা, নয়াবস্তি, রাজাবাগানের বিরজু নালা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে লোকাল গরীব মানুষগুলোর থলি ভর্তি হয়েছিল ঈদের শিন্নিতে। এরপর তিনদিন ধরে চলল ব্যাপক খানাপিনা।কিন্তু এর মধ্যে এলাকার যুবদের ভূমিকা ছিল বেশ প্রশংসনীয়। পারস্পরিক সহযোগিতা, লকডাউনের বিধিনিষেধ মেনে কুরবানি করা কিম্বা এলাকাএ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যুবক ভাইরা যেভাবে কর্তব্য পালন করে গেল তা আগামী দিনে সচেতনতা ও পারস্পরিক উন্নয়নের একটা বার্তা দিয়ে গেল বলে মনে করি। শুধু তাই নয়, বদরতলা অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যের মধ্যে দিয়ে এবারের ঈদ পালিত হল। তাই এত কষ্টের মধ্যে থেকেও সবাই একপ্রকার খুশী।




এবারে ঈদের নামাজ সকাল ছ’টায়। কালাবাগা, নীচুপাড়ার অনেকেই সারারাত খড়ি নদীতে (জলঙ্গী) মাছ ধ’রে ভোরে স্নান সেরে ঈদগাহে জমায়েত হন। পাটচাষের লস কিছুটা মিটছে মাছ ধরে। কুরবানি অন্যান্য বারের থেকে কিছুটা কম। সুরাব ভাই বলছিলেন, এবার দিইনি। টাকাপয়সার টান। দিলে আমি একাই গোটা পশু দেব। সবার মন তো সমান নয়, ভাগে কুরবানি দিলে কারো মনে ভাগ নিয়ে খুঁতখুঁতানি থাকলে কি আর কুরবানি হয়? জাঁকজমকও বেশ কম। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তায় পাল্লা দিয়ে বাড়ে মোটরসাইকেল, আত্মীয় বাড়ি মাংসের ভাগ দিতে ও এমনিই মজামস্তি করতে। দুর্ঘটনা যাতে কম হয় সেকারণে প্রতিবারের মতই রাস্তার প্রত্যেক মোড়ে ইঁট, কাঠের গুঁড়ি, টেবিল বেঞ্চি দিয়ে ডিভাইডার বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
শালিগ্রামের কালাবাগা গ্রাম থেকে পর্ণবের ছবি ও প্রতিবেদন