- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

শুধু নেতা মন্ত্রীরা নয়, শিক্ষিত সমাজও মানি মার্কেটের গুড় খেয়েছে

রামজীবন ভৌমিক, কোচবিহার, ৩০ মে#

কোচবিহারে একের পড় এক চিট ফান্ড সংস্থায় তালা ঝুলছে । নতুন সংযোজন ব্লু শাইন কোম্পানি । তরাই, ডুয়ার্স, নিম্ন আসাম জুড়ে এদের ব্যবসা। গত ২৩শে মে কোচবিহার টাকা গাছের শঙ্করী রায় জমানো দশ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে অফিসে তালা বন্ধ দেখেন। কোচবিহার কোতয়ালী থানায় অভিযোগ জানান। এর পর সকল আমানত কারি কোচবিহারে অফিসের সামনে কান্নায় ভেঙে পরে , ডিএম অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। কিন্তু আমানত? গ্রামে, শহরতলিতে হঠাৎ একটা আর্থিক প্রতারনার সুনামী আছড়ে পড়েছে।
এসব জাঁকিয়ে বসতে নেতা মন্ত্রীদের পাশাপাশি আমাদের ভূমিকা কেমন ছিল? তার একটা টুকরো ছবি তুলে ধরছি। রয়াল গ্রপ অফ কোম্পানিস নামক চিট ফান্ড সংস্থার জন্ম কোচবিহারে। ব্যবসা উত্তরবঙ্গ এবং আসাম জুড়ে। রমরমা ব্যবসা। দীর্ঘ লাইন দিয়ে টাকা জমা পরছে। বছরের শুরুর দিকে হঠাৎ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-কর্ণধার মারা গেলেন। সংস্থা উঠে যাওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হল। মানুষের মনে আস্থা কমছে। সবাই আমানত তুলে নেবে কিনা ভাবছে। ঠিক এই সময়েই কোম্পানির উদ্ধার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হল কোচবিহার ‘স্কেটেড নাটোৎসব’।
৩-৫ এপ্রিল ২০১৩ কোচবিহারে ‘স্কেটেড নাটোৎসব’ হয়ে গেল। টিকিট ১৫০ টাকা। কোচবিহার রবীন্দ্রভবন চত্বর রয়াল গ্রুপ অফ কোম্পানিজ্‌ এর বড় বড় বিজ্ঞাপনে মুড়ে ফেলা হয়েছে। নাটক শুরু হওয়ার আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বলতে রয়াল গ্রুপ কোম্পনীস এর সদ্য প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতার বৃহৎ প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং প্রতিকৃতির সামনে রাখা পঞ্চ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করলেন মঞ্চে উপস্থিত দিনহাটা সদর হসপিতালের ডঃ উজ্জ্বল আচার্য্য (যাকে উত্তরের বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় বলে সঞ্চালক পরিচয় করিয়ে দিলেন) সহ সকল অতিথি বর্গ। হলের কানায় কানায় পূর্ণ দর্শককূল অর্থাৎ কোচবিহারের অন্যান্য নাট্য দলের কর্মী, স্কুল শিক্ষক/শিক্ষিকা সহ একেবারে সচেতন অংশ আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে মাল্যদান ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনকে সন্মানিত করে।
উদ্বোধনীর দিন অর্থাৎ ৩ এপ্রিল ২০১৩ তে নাটক ছিল কোলকাতার সোনারপুর কৃষ্টি-সংসদ এর ‘মুক্তি দীক্ষা’ যা প্যারি কমিউন এর মানব মুক্তির কাহিনী অবলম্বনে। রচনা উৎপল দত্ত, প্রয়োগ সংগ্রামজিৎ সেনগুপ্ত। ৫ এপ্রিল কলকাতার নাট্য আনন এর ণ্ণসীজার’। প্রয়োগ চন্দন সেন, অভিনয়ে তারকা অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। এপ্রিল ২০১৩-র শুরুতে কোম্পানি-র অনিশ্চিয়তা দূর হতে এই স্পন্সরশিপ নিশ্চিতই সাহায্য করলো। কোম্পানি আরো কিছু দিন গরিব মানুষের টাকা হাতিয়ে নিলো নিশ্চিন্তে। তারকা অভিনেতা সব্যসাচী ও বিখ্যাত নাট্যকার সংগ্রামজিৎ সেনগুপ্ত আমাদের মাঝে মানবমুক্তি-র শিক্ষা পৌছে দিলেন। আমরা মানবমুক্তির শিক্ষা পেলাম। আর গরিব মানুষদের প্রতারিত হওয়ার সময় আরও দীর্ঘায়িত হল।