- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

হুগলী জেলার নর্থব্রুক চটকলে সিইও হত্যার নেপথ্যে : তথ্যানুসন্ধানকারী রিপোর্ট

১৫ জুন হুগলী জেলার নর্থব্রুক জুটমিলের সিইও এইচ কে মাহেশ্বরী মিলের মধ্যেই গনপিটুনিতে খুন হন। সঙ্গে মালিকরা রাগ দেখিয়ে রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিতে শুরু করে। মিল ম্যানেজমেন্ট প্রথমে বলে, বাইরে থেকে আসা কিছু লোক ঘটনাটি ঘটিয়েছে, যদিও পরে বারোজন শ্রমিকের নাম করে (এবং আরও ২০০ জন অনামা লোকের কথা বলে)। এখনও পর্যন্ত ন-জন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের ওপর খুন, দাঙ্গা এবং ষড়যন্ত্রের মামলা চাপানো হয়। ২০ জুন ‘ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস অব ইন্ডিয়া’র একটি অনুসন্ধানকারী দল ইংরেজিতে এই ঘটনাটির ওপর একটি রিপোর্ট তৈরি করে। রিপোর্টটি শর্মিষ্ঠা চৌধুরির থেকে পাওয়া। সম্পাদনা ও অনুবাদ শমীক সরকারের।#

nbjm

হুগলী নদীর তীরে চাপদানি এলাকার চটকলগুলির মধ্যে নর্থব্রুক অন্যতম, অন্য তিনটি কাছাকাছি চটকল হল ডালহৌসি, অ্যাঙ্গাস এবং ভিক্টোরিয়া। এই মিলগুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবারের রুটি রুজির জোগান হয়। নর্থব্রুক ১৯০৮ সালে তৈরি এবং তখন থেকে এর মালিক বদলেছে অনেকবার। এখন এর মালিকানা লিজ রয়েছে জনৈক প্রকাশ চৌরারিয়ার হাতে এবং মিলটিতে আনুমানিক হাজার পাঁচেক শ্রমিক কাজ করে।
অনুসন্ধানকারী দল যে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছে, তারা তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি। কারণ কী, তা জানিয়েছে একজন শ্রমিক, ‘খুনটা হওয়ার পরই টিভি আর কাগজের শতশত সাংবাদিক এসেছিল আমাদের কাছে, আমাদের বাইট নিতে। বিগত বছরগুলিতে আমরা কী অন্যায় ও অত্যাচার সহ্য করেছি, তার সমস্ত বর্ণনা দিলাম। তারপর আমরা যারা যারা তাদের সঙ্গে কথা বললাম, তাদের সবার নাম পুলিশকে দিয়ে দিল ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ তাদেরকেই গ্রেফতার করল আর খুনের কেস দিল। তা নাহলে এফআইআর-এ বেছে বেছে কয়েকজন শ্রমিকের নাম কীভাবে থাকে?’
এরই মধ্যে কোয়ার্টারগুলোতে পুলিশের রেইড চলছে, শ্রমিকরা পালিয়েছে বা অন্যত্র রাত কাটাচ্ছে, বেশিরভাগ কোয়ার্টারই তালাবন্ধ। এইচ কে মাহেশ্বরী, যিনি খুন হয়েছেন, তিনি সিইও হিসেবে এই মিল-এ যোগ দেন বছর দশেক আগে। তিনি প্রকাশ্যে মিলের ভিতর রিভলভার হাতে নিয়ে ঘুরতেন। পুলিশের কেউ বা সাংবাদিকদের কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলে তাঁর ডেস্কের ওপর সেই রিভলভার খোলাখুলি শোভা পেতে দেখত। তিনি নাকি মনে করতেন, শ্রমিকরা যদি অর্ধভুক্ত থাকে, তাহলেই তারা মাথা নিচু করে চলবে। সেই মতো বন্দোবস্তও করেছিলেন তিনি, যাতে কোনো শ্রমিক পাওনার পুরোটা না পায়।
একজন শ্রমিক বললেন, ‘যেদিন মাহেশ্বরী মারা গেলেন, সেদিন বোধহয় ভগবানও খুশি হয়েছিলেন। কদিন ধরে খুব গরম চলছিল। মাহেশ্বরী মারা যাওয়ার পর বৃষ্টি এল।’ শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলো এই মাহেশ্বরী মারা যাওয়াতে এত খুশি হয়েছে যে ‘বাইরের লোক এসে মেরেছে’ জাতীয় তত্ত্বের ভিত্তি যে তাদের কথাবার্তায় দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, সে খেয়াল তাদের নেই।

অর্থনীতি-অতিরিক্ত শোষণ
পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলিতে অর্থনীতি-অতিরিক্ত শোষণ বিগত বাম সরকারের আমল থেকেই চলছে, বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে তা আরও বেড়েছে। শ্রমিকরা নিয়মিত তাদের মৌলিক অধিকারগুলি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিরোধ করলেই ম্যানেজমেন্টের গুণ্ডারা তাদের ওপর আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে, অথবা তাদের চাকরি থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। নর্থব্রুকের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই আছে ভিক্টোরিয়া জুটমিল। ১৯৯৩ সালে সেখানে ভিখারি পাসোয়ান নামে একজন ইউনিয়নকর্মী শ্রমিককে আন্দোলন করার দায়ে, পুলিশ অপহরণ করে হত্যা করে। তার মৃত্যু এখনও পুলিশ ফাইলে নথিভুক্ত হয়নি, সেখানে আজও লেখা আছে, ‘নিখোঁজ’।
নর্থব্রুকের শ্রমিকরা জানাল, মাহেশ্বরী এই অর্থনীতি-অতিরিক্ত শোষণকে মাত্রাছাড়া করে ফেলেছিলেন, আর তার লাভ নিচ্ছিলেন।
শ্রমিকদের কোয়ার্টারে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার অনুমোদন ছিল না। কোম্পানি যা দেবে সেটুকুই। মাহেশ্বরী তাদের জন্য বন্দোবস্ত করেছিল — দুপুর বারোটা থেকে দুটো এবং সন্ধ্যে ছ-টা থেকে রাত দুটো। তাঁর ধারণা ছিল, এভাবেই শ্রমিকদের বশে রাখা যাবে। গ্রীষ্মকালে ছেলেরা রাত্রে বাইরে শুত, কিন্তু মেয়েরা বাধ্য হত দেশলাই বাক্স সাইজের কোয়ার্টারের ভেতরে শুতে। মাহেশ্বরী সমস্ত সাফাইকর্মীকে কোম্পানির পে-রোল থেকে ছাঁটাই করে দিয়েছিলেন। বদলে কজনকে রেখেছিল ৭০-১০০ টাকা ডেইলি রেট-এ। তার ফল, শ্রমিকদের কোয়ার্টারের পাবলিক শৌচাগারগুলো নোংরা এবং সেগুলো পরিষ্কার করার কেউ নেই। আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা আমদানি করার বিরোধী ছিলেন মাহেশ্বরী এবং মিউনিসিপ্যালিটিকেও তা করতে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। ফলে শৌচাগারগুলো মান্ধাতার আমলের, মলমূত্রে ভর্তি এবং রোগের আগার।
মাহেশ্বরী এমনকী কোম্পানির প্রাইমারি স্কুলটিকেও বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, সমস্ত শিক্ষকদের মিলের অন্যান্য কাজে বদলি করে দিয়ে। কিন্তু তার এতই বিরোধিতা হয়েছিল যে তার ফলে সব শিক্ষককে তিনি স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত দুজন শিক্ষক রয়ে গিয়েছিলেন স্কুলে, যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কোম্পানির জমিতে স্টাফ কোয়ার্টারগুলো খালি করে, সেগুলো ভেঙে ফেলে সেখানে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করতে শুরু করেছিলেন মাহেশ্বরী। বহুতল ফ্ল্যাট বানিয়ে বিক্রি করতেন তিনি, তার একটাতেই তিনি থাকতেন।
মিলের মধ্যেই তিনি একটা রিক্সা কারখানা খুলছিলেন। এর জন্য তিনি গোডাউন ফাঁকা করেছিলেন এক রাতের মধ্যে এবং ঠিকা শ্রমিক দিয়ে তা চালানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন। যদিও সেটা বেশিরভাগ সময়ই তালাবন্ধ থাকে।
মাহেশ্বরী শ্রমিকদের মারধোরও করতেন। একবার নয়, বারবার তিনি প্রতিবাদী শ্রমিকদের লোহার রড দিয়ে মেরেছেন। ২০১২ সালে লক্ষ্মণ নামে একজন শ্রমিক মেশিনে দুর্ঘটনায় মারা যান। মাহেশ্বরী ঘোষণা করেন, তাঁর পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না, কারণ শ্রমিকটি শিফট শুরু হওয়ার এক মিনিট আগে মেশিন চালিয়েছিলেন। এই অত্যন্ত জঘন্য কথার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয় শ্রমিকদের মধ্যে এবং স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মাহেশ্বরীকে বুঝিয়েসুঝিয়ে লাখ দেড়েক টাকা দিতে রাজি করান। বলাই বাহুল্য, এই টাকাটা খুবই কম।
এই মিলে ৪ ধরনের পারিশ্রমিক রয়েছে। স্থায়ী ও স্পেশ্যাল বদলিদের জন্য দৈনিক চারশো টাকা। আর ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের জন্য তিনশো, দুশো এবং দেড়শো টাকা, সিনিওরিটির ভিত্তিতে। প্রতি বছর স্থায়ী ও স্পেশ্যাল বদলি শ্রমিকরা অবসর নিচ্ছে। কিন্তু তাদের জায়গায় কাজ করছে ক্যাজুয়াল শ্রমিকরা। এখন ওই দৈনিক চারশো টাকার শ্রমিক মাত্র পাঁচ-ছশো আছে মিলে। কয়েক বছর আগে, বাম সরকারের আমলে চটকল শ্রমিকদের মজুরিকাঠামো ঠিক করার জুট ওয়েজ বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তারপর থেকেই মজুরির কোনো ঠিকঠিকানা নেই। একই কাজের জন্য অসমান মজুরির উদাহরণ তাই চটকলগুলোতে ভুরিভুরি। শ্রমিকদের কম মজুরি থেকে বেশি মজুরিতে যাওয়া পুরোপুরি নির্ভর করে ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছার ওপর। নর্থব্রুক তার ব্যতিক্রম নয়।

গ্র্যাচুইটি না মেটানো
একইভাবে, গ্র্যাচুইটি না মেটানোও এরাজ্যের চটকল গুলিতে চলতি প্রথা। টিটাগড়ের লুমটেক্স জুট মিলে এক দশক আগে অবসর নেওয়া শ্রমিকরা এখনও গ্র্যাচুইটি পায়নি। বদলে তাদের আমৃত্যু মিলে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মিল-এ এর রকমফের আছে। নর্থব্রুকে মাহেশ্বরী যে প্রথাটি চালু করেছিলেন, শ্রমিকদের অবসরের পর তিন বছর মিলে কাজ করতে দেওয়া হবে। তার পর সে একটা পোস্টডেটেড বা ভবিষ্যৎ তারিখের চেক পাবে গ্র্যাচুইটির। ওই পোস্টডেটেড চেকটি আরও তিনবছর পর ভাঙানো যাবে, যার মধ্যে সেই শ্রমিক তাঁর কোয়ার্টার ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিহার বা উত্তরপ্রদেশের কোনো গ্রামে। কিন্তু ওই তিন বছর পরও সে সোজা ব্যাঙ্কে গিয়ে চেকটি ভাঙাতে পারবে না। তাঁকে প্রথমে ম্যানেজমেন্টের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে, ওই চেকটি এখনই ভাঙানোর উপযুক্ত কিনা, নাকি তাকে আরও দু-এক বছর কি তারও বেশি অপেক্ষা করতে হবে। একজন শ্রমিক জানালেন, কয়েক বছর আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক মাহেশ্বরীর কাছে গিয়েছিলেন ওই তিন যোগ তিন, ছয় বছর পর এবং জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি এখন চেকটা ভাঙাতে পারেন কিনা, কারণ তাঁর মেয়ের বিয়ে সামনে। মাহেশ্বরী তাঁকে হালকাভাবে জানিয়েছিলেন, আরও বছর দুয়েকের আগে ওই চেক ভাঙানো যাবে না। ওই বৃদ্ধ শ্রমিকটি সেই ঝটকা সইতে পারেননি, ওইখানেই সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছিলেন। ‘ওটা খুনের চেয়ে কম কী?’ জিজ্ঞাসা করলেন এক শ্রমিক, ‘মাহেশ্বরী তাঁকে খুন করেছেন। কিন্তু তা নিয়ে কোনো মরাকান্না ওঠেনি। আরও অনেক শ্রমিক গ্র্যাচুইটি চেকের আশায় আশায় মারা গেছে। মাহেশ্বরী তাদের সবাইকে মেরেছেন।
হাতেগোনা যে কজন ভাগ্যবান শ্রমিক গ্র্যাচুইটি চেক ভাঙাতে পেরেছে, তারা যে টাকা পেয়েছে, তা অবাক করার মতো। চল্লিশ বছর বা তার বেশিদিন ধরে কাজ করা শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ হয়েছে সামান্য ক-টি টাকা। কেউ যদি অভিযোগ জানাতে যায়, তাকে বলে দেওয়া হয়, এক নয়া কায়দায় গ্র্যাচুইটি গণনা করা হয়েছে এবং সে যা পেয়েছে, সেটুকুই পাওয়ার যোগ্য। ১৯৭২ সালের পেমেন্ট অব গ্র্যাচুইটি অ্যাক্ট অনুযায়ী, পাঁচ বছর ধরে টানা কোনো সংস্থায় কাজ করলে যে কেউ গ্র্যাচুইটি পেতে পারে। যদিও মাহেশ্বরী সেই আইনের তোয়াক্কা করেননি। তিনি আইন করেছিলেন, যে শ্রমিকরা দশটি টানা স্ট্যাটুটরি লিভ অর্জন করেছে, তারা কেবল গ্র্যাচুইটি পাবে। চটকলে বছরে ২৪০ দিন কাজ করলে চৌদ্দটি স্ট্যাটুটরি লিভ হয়। কিন্তু মিলটি প্রতি বছর ১-২ মাস করে বন্ধ থাকত বা কম শ্রমিক দিয়ে চলত। ফলে ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের পক্ষে, যাদের ম্যানেজমেন্ট মাঝেমধ্যেই বসিয়ে দেয়, বছরে একটি স্ট্যাটুটরি লিভ অর্জন করাও খুবই কঠিন হয়।

বশংবদ ইউনিয়ন
এই মারাত্মক শোষণের কি কোনো প্রতিরোধ ছিল না? ইউনিয়নগুলো কী করছিল? মাহেশ্বরী সমস্ত ইউনিয়নগুলো কিনে রেখেছিলেন। একজন শ্রমিক বলেন, ‘সমস্ত ইউনিয়ন মাহেশ্বরী কিনে নিয়েছিল। নেতারা শ্রমিকদের স্বার্থের তোয়াক্কা করত না। যদি কখনও শ্রমিকরা প্রতিবাদ করত, ইউনিয়ন নেতারা তাদের ডিসমিস বা সাসপেন্ড করানোর ব্যবস্থা করত।’ এই মিলের সবচেয়ে বড়ো ইউনিয়ন আইএনটিটিইউসি-র (শাসক দলের)। কিন্তু শ্রমিকরা জানাল, সিটু (সিপিএম-এর), টিউসিসি (ফরওয়ার্ড ব্লকের), আইএনটিইউসি (কংগ্রেসের) — সবাই বড়ো ইউনিয়নটির সঙ্গে মিলেজুলে মাহেশ্বরী যাতে সবথেকে বেশি লাভ করতে পারেন, তার দেখভাল করত। ইদানীং শ্রমিকদের কাজের লোড অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
জুন মাসের ১৫ তারিখে এই ছাইচাপা আগুন ফেটে পড়ে। গত বছর থেকে এই মিলটি প্রায় আট মাস বন্ধ ছিল। মাঝখানে কয়েক মাসের জন্য খুলেছিল। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে মিলটি তড়িঘড়ি খোলা হয়, এবং পাঁচ ঘন্টার শিফট চলতে থাকে। নির্বাচনের পর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে এবং তিনটি আট ঘন্টার শিফট চালু হয়। বেশ কয়েক মাসের অনিশ্চয়তার পর শ্রমিকরা ফের কাজে মন বসাচ্ছিল। আশায় ছিল, গত এক বছর ধরে যা ধারকর্জ করেছে, এরপর ধীরে ধীরে তা শোধ করবে। দৈনিক ১৫৭ টাকা রোজগার করে পরিবারকে খাইয়েপরিয়ে ধার শোধ করা কষ্টকর, কিন্তু তারা চেষ্টা করবে। ঠিক এই সময়েই ধাক্কাটা খায় তারা। মাহেশ্বরী ইউনিয়ন নেতাদের ১৫ জুন মিটিঙে ডেকে বলেন, মিল সপ্তাহে তিনদিন করে চলবে পরদিন থেকে। শ্রমিকরা আর সহ্য করতে পারেনি। তারা ফেটে পড়ে। মাহেশ্বরী বেরিয়ে আসেন লোহার রড হাতে করে। তিনি ভেবেছিলেন, ওই রড কয়েকবার ঘোরালে শ্রমিকরা কেটে পড়বে। কিন্তু এবার তিনি ভুল করে ফেলেছিলেন হিসেবে। কয়েক ঘন্টা পরে মর্গে পড়ে থাকে তাঁর মৃতদেহ, ঘৃণার চিহ্ন গায়ে মেখে।
পুনশ্চ : রাজ্যের চটকলগুলিতে অরাজকতা চলছে। রাজ্যের মোট ৫২টি চটকলে লাখ তিনেক শ্রমিক কাজ করে, আরও কয়েক লক্ষ চাষি এই চটকলগুলির ওপর নির্ভরশীল। যদিও সরকারের কোনো নজর নেই এই বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবীর দুরবস্থার প্রতি। সরকারের সুসংহত কোনো চটনীতি নেই, তারা নিজেরাই অর্ডার কমাচ্ছে, সম্ভবত প্লাস্টিক লবির চাপে পড়ে। মিল মালিকরা শ্রম আইনের তোয়াক্কা করে না, মজুরি আটকে দেয়, গ্র্যাচুইটি ও অন্যান্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে সরকারের অর্ডার বাতিলের অজুহাত দেখিয়ে। মিল মালিকরা হাত তুলে নিচ্ছে, কাজ কমাচ্ছে, এমনকী মিল বন্ধ করে রাখছে নয়া অর্ডারের অভাবের অজুহাতে। গত বছরের শেষ পর্যায়ে খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে অবস্থাটা। বেশিরভাগ মিল উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। অকল্পনীয় কম ক্ষতিপূরণে ছাঁটাই করা হচ্ছে, যদিও চটশিল্প সংগঠিত শিল্প। অবস্থা এমন, চটশিল্প একটা বারুদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।