- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েটা মায়ের বাড়িতে এসে বাজারহাট করে, রান্না করে’

আকড়া বেড়ারবাগানে নিগৃহিতা তরুণীর মায়ের বয়ান ,  ৪ আগস্ট, দুপুর ১২টা#

নিগৃহিতা তরুণীর দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে নিগৃহিতার মা
নিগৃহিতা তরুণীর দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে নিগৃহিতার মা

আমার স্বামী মারা গেছে ২০০৩ সালে। উনি দর্জির কাজ করতেন। আমার ছয় ছেলের মধ্যে তিন ছেলে আলাদা থাকে। বাবা মরে যাওয়ার পরে যে যার সব ভালোবাসা করে বিয়ে করে নিয়ে আলাদা থাকে। এই মেয়েটাকে আমি নিয়ে চলে এসেছিলাম। তখন ওর বাচ্চা পেটে ছিল। কাজ করার জন্য নিয়ে চলে এসেছিলাম। জামাই নাসির খান দুশো-একশো করে টাকা আমাকে খোরাকি দিত। দিতে দিতে একটা সময় চলে গেল। কাউকে কিছু বলল না, কিছু না, চলে গেছে, আর আসে না। আমি আর ওকে খুঁজতে যাইনি। শুনি বোম্বেতে গিয়ে টেলারের কাজ, ভালো কাজ করে। সে যাই করুক, আমি উকিলকে বলে রেখেছি, ঈদ পর ছাড়িয়ে নেব।

আমার দুটো ছোটো ছেলে, একটা বারো, একটা চোদ্দো বছর, ক্লাস ফাইভে পড়ত। ওদের ইস্কুল ছাড়িয়ে ঝুমির দুটো ছেলের জন্য ওদের প্রিন্টিংয়ে বসিয়ে দিয়েছি। বলি, দ্যাখ, এই দুটো ছেলে খাওয়ার অভাবে মরে যাবে? তোরা লেখাপড়া ছেড়ে কাজ কর, তোদের নেকি হবে। আমার আর একটা ছেলে ইস্কুল করে। তাহলে এই তিনটে ছেলে চলে গেলে বাজার করার লোক থাকে না। আমি বাপের বাড়ি কিছু কাজ-টাজ করে পয়সাকড়ি নিয়ে আসি। ওইজন্য আমি বলেছিলাম, তুই বাজারে যা। ওই মেয়েটা বাজারহাট করে, রান্না করে।
সেদিন আমি দুটো বাচ্চাকে নিয়ে রয়েছি। ফুচকা কিনতে যেত না। আমার বউমার বাপের বাড়ি থেকে কুটুম এয়েছিল, ওনারা সব আমার বউমার বাড়িতে চা-নাস্তা দিয়ে ফুচকা-ঘুগনি খেল। আর ওর বড়ো ছেলে হাবিব কাঁদছে, ‘আমি ঘুগনি খাব রে’, ‘আমি ঘুগনি খাব রে’ বলে খুব কাঁদছে। তখন আমি বলি, ‘যা তুই কিনে নিয়ে আয়, এখানে খাক। তোরা ভাইবোনে ছেলেকে নিয়ে খা।’ বলে ওই গেছে আর আমি ছেলেটাকে নিয়ে রয়েছি। ঈদের পরের দিন তার পরের দিন ঘটনাটা ঘটেছে। ওই মেয়ে গেছে আর আসে না। তা আমি বলি, একটু খুঁজি। এই ছেলেটাকে কোলে নিয়ে স্টেশন পর্যন্ত খুঁজে এসেছি। তারপর আমার মনের ভিতর যখন খুব ছটফট করছে, তখন ছেলে দুটোকে রেখে আবার আমি কসাইখানার সামনে এসেছি, ভাবছি থানায় যাই। ওনারা খুঁজবে খন, থানায় গিয়ে বলে আসি। আমার তো আর খোঁজার কেউ নেই।

বলে আমি এই থানায় আসতে যাচ্ছি, তখন বাইকওয়ালা দুটো লোক, ওনারা আকড়া থেকে যাচ্ছিল, ওরাই দেখতে পেয়েছে যে ধরে ফেলে দিয়ে ধাঁ করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। ওনারা এসে বলল, ‘এখান দিয়ে একটা সাদা মতো অটো গেছে?’ সবাই বলে, না যায়নি তো, কেন? বলে, ‘একটা বেড়ারবাগানের মেয়েকে ওই গাড়িতে করে ছুঁড়ে ফেলে চলে গেল।’ ওরা দেখেছে। আমি বলছি, বেড়ারবাগানের মেয়ে? তাহলে আমার মেয়ে তো আসে না। তখন আমি গিয়ে ওদের হাতেপায়ে ধরেছি, ‘চলো না কোথায় পড়ে আছে?’ বলতে ওই লোকগুলো আমায় নিয়ে এসেছে। ওকে কোলে করে নিয়ে দেখি, কী যে অবস্থা! জ্ঞান ছিল মেয়ের, ভুল বকতেছিল, মদ খেয়েছিল তো। গা দিয়ে কী গন্ধ বার হচ্ছে। আর সেই ভুলভাল বকছে, কোনো লজ্জাশরম করে না। বকেই যাচ্ছে। তারপরে আমি এই কোলে করে নিয়ে থানায় নিয়ে যাই। থানায় সব বলেছে। নেশার ঘোরে যা যা বলেছে, সব সত্য কথা।

তখন রাত সাড়ে এগারোটা-বারোটা হবে। থানায় ওরা লিখেছিল, দুটো পুলিশ। ওরা বলল, তোমরা ইএসআই হাসপাতালে গিয়ে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা চালাও, তারপর আমরা কাগজপত্র দিচ্ছি। বলে আমরা ওখানে নিয়ে গেলুম। ওখানে কাগজ নেই বলে ওরা বকছে। কাগজ নিয়ে আসোনি, এখানে হবে না। আমি বলি, একটু ব্যান্ডেজ-ট্যান্ডেজ করে দিন না। তারপর আমরা ইএসআই হাসপাতাল থেকে আবার থানায় নিয়ে এসেছি। আমার ছেলে বলল, কাগজ না দিলে ওরা ভর্তি নেবে না। তখন ওরা কাগজ দিল। সেটা নিয়ে আমরা বিদ্যাসাগরে এলাম। ওই কাগজটা পুলিশ গিয়ে নিয়ে চলে এসেছে। আমাদের হাতে কিচ্ছু কাগজ নেই। যা আছে ডাক্তারের কাছে আছে। আবার একবার বলেছি, বলে, টাকা জমা দাও, তবে কাগজ পাবে। কত টাকা বলেনি। তাও সে মঙ্গলবার বুধবার।

পার্টি থেকে বলেছে, তোদের বোনের ইজ্জত, চেপে যা
 তরুণীর মেজোভাইয়ের স্ত্রীর বক্তব্য, ৪ আগস্ট, দুপুর সাড়ে এগারোটা

পার্টির লোকেরা পরশু এরকম সময়ে এসেছিল। এসে বলে গেল, তোদের বোনের ইজ্জত, তোরা ঘাঁটাঘাঁটি করিসনি। তোরা চেপে যা। যা করবার মা করবে। আর রিপোর্টার এলে তাড়াবি। ওরা এসেছিল পাড়ার বাইরে থেকে।

তরুণীর সেজোভাইয়ের স্ত্রীর বক্তব্য, ৩ আগস্ট, রাত ৯টা
… আমরা ওকে তুলে নিয়ে থানায় গেলাম। একটা পুলিশ ছিল। ওকে জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কী? তারপর ছেলেপিলেদের নাম জিজ্ঞেস করেছে। নাম বলেছে। ওখানে আর কিছু বলল না। শাশুড়ি-মায়ের ফোনটা থানায় নিয়ে নিয়েছে। ওখানে ডায়েরির কাগজ কিছু দেয়নি। ওইসব লিখেছে।

ওরা বলল, তোমরা অটোয় চাপো, বজবজ ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাও ওকে। আমরা তিনজনে গেছি। ওখানে ডাক্তারবাবু বলল, কোনো কাগজ নিয়ে এসেছ? — না কোনো কাগজ দেয়নি। বলল, আমরা দেখতে পারব না। আমার ছোটো দেওর আর অটোওয়ালাটা ফের থানায় এসেছে। আসতে ফের বলতে একটা ছোটো মতো কাগজ দিয়েছিল। তারপর ওটা দেখাতে একটা মলম দিয়ে তুলো দিয়ে ইএসআইয়ের ডাক্তারবাবু ব্যান্ডেজ করে দিল। তারপর ওনারা বলল, এখানে হবে না, তোমরা বেহালা বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাও।

আমি চলে এলাম। আমার শাশুড়ি-মা, আমার একটা দেওর আর একটা ননদাই ওখানে গিয়েছিল। তারপর আমি জানি না।

মেয়েটির ছয় ভাই আর চার বোন। মেয়েটির দুটো ছেলে। একটা তিন বছরের, আর একটা এক বছরের।