- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’

 

শিশু কিশোর মেলার ছবি ফারুক-উল ইসলামের তোলা।
শিশু কিশোর মেলার ছবি ফারুক-উল ইসলামের তোলা।

 

 

শিশু কিশোর মেলার ছবি ফারুক-উল ইসলামের তোলা।
শিশু কিশোর মেলার ছবি ফারুক-উল ইসলামের তোলা।

 

শিশু কিশোর মেলার ছবি ফারুক-উল ইসলামের তোলা।
শিশু কিশোর মেলার ছবি ফারুক-উল ইসলামের তোলা।

সুব্রত ঘোষ, পাণ্ডুয়া, ২২ অক্টোবর#

স্বপ্নকে পরিপার্শ্বের কাঠ-খড়-রোদের সঙ্গে বারংবার মিলিয়ে নিতে হয়। তাই উৎসব ফিরে আসে, ফিরে আসে ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’। এবার ১৬তম শিশুমেলা অনুষ্ঠিত হলো হুগলীর পাণ্ডুয়ায় ইলছোবা মন্ডলাই বালিকা বিদ্যালয়ে, ১৬ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর, ৭ দিনের জন্য। মেলায় পশ্চিমবঙ্গের ১৬টি জেলা ও প্রতিবেশী রাজ্য আসাম থেকে মোট ১২০ জন অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে ৬৮ জন ছিল শিশু-কিশোর। বাকিরা ছিল বড়ো বা মেজ — যারা এই কর্মযজ্ঞ সামাল দেন প্রতিবছর। কেউ নাটক শেখান, কেউ গান। কেউ রান্নার আয়োজনের ব্যবস্থা করেন, টাকা পয়সার হিসেব রাখেন, প্রতিদিনের হাটবাজার সামলান। আর যারা থাকেন, তারা করেন পর্যবেক্ষকের কাজ।

সাতদিনের এই কর্মশালায় প্রাতঃভ্রমণ, ব্যায়াম, গান, থিয়েটার, গেমস, ছবি আঁকা, লেখা, ফেলে দেওয়া কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস দিয়ে তৈরি হাতের কাজ, আমন্ত্রিত নাট্যাভিনয়, বিশিষ্টজনের সাথে মতবিনিময় ইত্যাদি প্রত্যেকবারের মতোই ছিল। আরো ছিল ছায়া নাটক নির্মাণ ও মুখোশ তৈরির দুইদিনের কর্মশালা। উদ্যোক্তারা জানান, এবারের মেলায় নবতম সংযোজন, ‘প্রকৃতির মধ্যে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় এরকম রঙ খুঁজে নিয়ে ছবি আঁকা, কোনো তুলি পেনসিল বা কৃত্রিম রং ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।’। এই ছবিগুলি শেষদিন সকলের জন্য প্রদর্শিত হয়। বলে না দিলে বোঝা যায় না, মাটি-ফুলের পাপড়ি, গাছের পাতা, রান্নার মশলা, চুন ইত্যাদি হাতের নাগালে থাকা নানা কিছুকে ক্ষুদে শিল্পীরা ব্যবহার করেছে আঁকার কাজে। ঝাড়গ্রাম থেকে এসেছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী সঞ্জীব মিত্র মহাশয়। তৃতীয় দিন সন্ধ্যেয় তিনিই ধাপে ধাপে ছায়া নাটক অভিনয় শেখান। ওইদিন কর্মশালার শেষে ছেলেমেয়েরা নাট্যকার কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি ছায়ানাটক দক্ষতার সঙ্গে পরিবেশন করে। পরদিন মুখোশের কাজ চলে সারাদিন।

সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে শ্রী তীর্থঙ্কর চন্দ জানান, ‘এখানে শিশুকিশোর বিকাশ মেলায় জড়ো হওয়া কিছু শিশু কিশোরের ভিতর শুধু এক অনাবিল স্মৃতির পুঁজি তুলে দেওয়ার কাজটাই করে যাচ্ছি আমরা। এর চেয়ে বেশি আর কি করার সাধ্য আছে আমাদের!’ ‘উন্নয়নকে চেনার উপায়’ — এই বিষয়কে সামনে রেখে এবারের মেলায় মোট তিনটি ছোটোদের নাটক ও একটি ছোটোবড়ো সকলের উপযোগী স্থানীয়-ইতিহাস-আশ্রয়ী নাটক বানানো হয়েছিল। ‘ব্যাথা’, ‘সম্মান’ ও ‘হৃদয়পুর’ — কর্মশালার নিজেদের বানানো গল্পে এই নাটকগুলি ছোটো বড়ো সবাই দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে। বড়োদের ইলছোবার কথা নাটকটি দেখে স্থানীয় মানুষরা আপ্লুত। তারা মেলার সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে যান নাটকের মাধ্যমে স্থান-নামের ইতিহাস সকলকে জানানোর জন্য।

এমন একটি উদ্যোগ নিঃশব্দে ষোলো বছর পথ হাঁটছে, একেবারেই সদস্যদের সম্মিলিত উদ্যোগ ও নিরলস পরিশ্রমে। বড়ো অর্থ-সাহায্য ও প্রচারের সুযোগকে তারা বারবার হেলায় সরিয়ে দেন একটাই আশঙ্কায়, ক্ষমতা আর সামর্থ্যমতো এতদিনের এগিয়ে চলা যদি শেষ পর্যন্ত কাজ ছেড়ে, শিকড় ছিঁড়ে প্রচারলোভী হয়ে ওঠে! স্বনির্ভরতা তাঁদের হিমালয় লঙ্ঘনের ক্ষমতা দিক। জয় হোক!