- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

সাম্প্রদায়িক ফাঁসি

১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণে জড়িত থাকার দায়ে বাইশ বছর জেল খাটার পর ফাঁসি হয়ে গেল ইয়াকুব মেমন-এর। সাম্প্রতিক অতীতে আরও দুটি ফাঁসি হয়েছে। যথাক্রমে ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার দায়ে আজমল কাসভ এবং ২০০১ সালে পার্লামেন্ট ভবনে হামলার দায়ে আফজল গুরু। কিন্তু ওই দুটির মতো এবারেরটি সঙ্গোপনে করা হয়নি। তিল তিল করে, লোক জানিয়ে, আইন কানুন মাফিক সমস্ত বন্দোবস্ত করে তবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তার প্রাণভিক্ষার আবেদন একাধিক বার খারিজ করেছে রাষ্ট্রপতি বা সুপ্রিম কোর্ট। একদম শেষেরটির ক্ষেত্রে মাঝরাতে আদালত বসিয়ে। ঠান্ডা মাথায়, সাসপেন্স রেখে কোতল।
আফজল গুরুর দেহ তার পরিবারের হাতে দেওয়া হয়নি। ইয়াকুব মেমনের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তার মরদেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হয়েছে। তবে মরদেহ নিয়ে মিছিল বের করা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মুম্বইয়ে ইয়াকুবের বাড়ির আশেপাশে একশো চুয়াল্লিশ ধারা জারি করে দেওয়া হয়েছিল। মিডিয়াকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছিল — মরদেহ, মরদেহ নিয়ে শোভাযাত্রা, শেষকৃত্য ইত্যাদি টিভি চ্যানেলে দেখানো যাবে না। ফটো তোলা যাবে না। কারণ তাতে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হতে পারে। এই আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক তাও বলে দেওয়া যায় না।
কারণ রাষ্ট্র জানে, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনার বিচার হয়নি, দোষীরা সাজা পায়নি। ওই ঘটনার রেশ টেনে ১৯৯২-৯৩ সময়কালে মুম্বইয়ে ঘটে যাওয়া মুসলিম নিধন যজ্ঞের বিচার হয়নি, দোষীরা সাজা পায়নি। মুম্বই বিস্ফোরণ তার পরের ঘটনা। ওগুলোর জের ধরে। ইয়াকুবের সাজা কেবল সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সাদা চোখেই সাম্প্রদায়িকও বটে।
মুম্বইয়ের মুসলিম সম্প্রদায় রাষ্ট্রের কোনো বিধিনিষেধ মানেনি। হাজারে হাজারে কাতারে কাতারে তারা জড়ো হয়েছে ইয়াকুবের শেষযাত্রায়। শয়ে শয়ে মোবাইল ক্যামেরা ফটো তুলেছে। যদিও মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে এসমস্ত কিছু করতে বারণ করা হচ্ছিল বারবার।
টিভি বা খবরের কাগজে যাই বলা হোক বা না হোক, সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত, যেচে ধরা দেওয়া ইয়াকুব আজ মুসলমানদের চোখে হিরো।