- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

সংবিধানের রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারা বাতিলের দাবি

সংবিধানের রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারাটিকে বাতিল করার জন্য ভারতের সংসদে আবেদনের কর্মসূচি নিয়েছে নাগরিক অধিকার সংগঠন পিইউসিএল এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলি। লক্ষ্য, আগামী মার্চ মাসের বাজেট সেশনের মধ্যে দশ লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে পাঠানো। আরতি চোক্ষির প্রেরিত আবেদনটির বাংলা অনুবাদ। #

ভারতীয় পেনাল কোডের ১২৪এ ধারায় ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন রয়েছে, যা ভারতীয় আইন মেনে প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি ঘৃণা বা অবমাননা অথবা বিদ্রোহ করার দায়ে প্রযোজ্য। মুখের কথা, লেখা, বা যে কোনো দৃশ্যমান চিহ্নের মাধ্যমে করা এই বিদ্রোহ, ঘৃণা বা অবমাননা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য হবে এবং তা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তির যোগ্য। ভারতীয় পেনাল কোডের ছয় নম্বর অধ্যায়ের ণ্ণরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্যায়’ নিয়ে আলোচনার মধ্যে রয়েছে এই ধারাটি। ওই পরিচ্ছদে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা সহ গুরুতর সব অন্যায় নিয়ে কথা আছে।

১৮৭০ সালে ব্রিটিশ সরকার ১২৪এ ধারাটি এনেছিল। তারা ভেবেছিল এই রকম একটি দানবীয় আইন দরকার স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমিয়ে রাখার জন্য। এই ধারায় বিচার হওয়া খ্যাতনামা ব্যক্তিদের মধ্যে আছে বাল গঙ্গাধর তিলক, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এবং মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতো ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতারা। স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের ব্যবহৃত যাবতীয় আইন স্বাধীন ভারতে টিঁকিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও সংবিধানে সেগুলি পুনর্বিচারের অবকাশ ছিল।

জওহরলাল নেহরু সম্পূর্ণভাবে এগুলির বিরুদ্ধে ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতীয় পেনাল কোডের ১২৪(এ) ধারার কথা ধরা যাক। এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাস্তব এবং ঐতিহাসিক কারণে এটির কোনো আইনেই থাকা উচিত নয়। যত দ্রুত আমরা ধারাটি বাদ দিতে পারি, তত মঙ্গল।’

বস্তুত, প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার আছে, তার অপছন্দের সরকারের অপকর্মগুলি উন্মোচিত করার, লোকের মধ্যে বিদ্রোহ এবং অবাধ্যতা তৈরি করার; এবং সরকারটিকে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা থেকে তাড়ানোর কার্যক্রম নেওয়ার, অবশ্যই হিংসার পথে না গিয়ে। অতএব এই আইনটি গণতন্ত্রের পক্ষে মানানসই নয়, যেখানে কারোর বর্তমান সরকার সম্পর্কে অসন্তোষ থাকলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তৈরি করার এবং পরবর্তী নির্বাচনে তার অপসারণ চাওয়ার অধিকার আছে। সরকারের প্রতি অবাধ্যতা মানে রাষ্ট্রের প্রতি অবাধ্যতা নয়। আজকাল দেখা যাচ্ছে, এই আইন শান্তিপূর্ণ জন আন্দোলন এবং মানবাধিকার কর্মীদের দমন করার জন্য ব্যবহার করছে রাষ্ট্র।

শান্তিপূর্ণ সমালোচনার কন্ঠরোধ করার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনের ব্যবহার একটি দমনমূলক সরকারের প্রতীক। ভারতীয় সংসদের উচিত এই আইনকে অবিলম্বে রদ করা।