- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ষোলোবিঘার কোনো ঠিকানা নেই, সরকার অধিগ্রহণ করেছে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে

আমাদের পার্টির (সিপিএম) বক্তব্য ছিল — যে যার দায়িত্বে আসবে, বসবে, এটা তাদের ব্যাপার।
কাশীনাথ ব্যানার্জি

কাশীনাথ ব্যানার্জি, ১৯৮৮ সালে ষোলোবিঘা সংলগ্ন রামদাসহাটি ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান, ২২ নভেম্বর#

১৯৭৮ সালে এখানে পঞ্চায়েত হয়েছে। দুটো টার্ম্‌স পরে আমি প্রধান হয়ে এসেছি ১৯৮৮-তে। ১৯৮৩ সালে আমি পঞ্চায়েত সদস্য ছিলাম। তখন ষোলোবিঘায় তিনটে পরিবার ছিল। ১৯৯৩ সালে মহেশতলা মিউনিসিপ্যালিটি হয়েছে। ষোলোবিঘা আমাদের পঞ্চায়েতের মধ্যে ছিল না। ওটা ছিল মহেশতলার রামপুর-গণিপুর পঞ্চায়েতের মধ্যে। ওখানকার লোকেরা এসে আমাকে অনুরোধ করত — রিকশাওয়ালা ইত্যাদি যারা সন্তোষপুরে কাজকর্ম করে — আমরা ওখানে থাকতে চাই। আমি তাদের একটা কথাই বলতাম, ‘দেখো বাপু, তোমরা কোত্থেকে এসেছ, কীভাবে এসেছ জানি না। জানি তোমরা রিকশা চালাও, গরিব মানুষ, সাধারণ মানুষ। আমি কাউকে বসতেও বলব না। আমি কাউকে ওঠাতেও যাব না। তাহলেও যেহেতু সরকারি জায়গা, না বসাই ভালো।’ প্রথম থেকে আমাদের পার্টির বক্তব্য ছিল — আমি তখন সিপিএম পার্টি করতাম, এখন করি না — যে যার দায়িত্বে আসবে, বসবে, এটা তাদের ব্যাপার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে লোকজন আসত। কেউ রিকশাওয়ালা, কেউ মাছওয়ালা, জীবিকার জন্যই আসত। এদের সকলেরই বাড়ি আছে, দেশে জমি আছে, এখানে অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে ঘিরে মূলত এরা এসেছে। এরা গরিব মানুষ। আরও একটা কারণ, যেহেতু লাগোয়া প্রায় মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল, বেশিরভাগ মুসলমান লোকেরাই এখানে আসত। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অরিজিনাল যারা জমির মালিক — রামপুর, পাহাড়পুরের নস্কর বা মণ্ডলরা, বাজারপাড়ার ওদিকে মোল্লাপাড়ার কিছু লোকেরও জমি ছিল ষোলোবিঘার মধ্যে — তাদের জমি যখন সরকার অধিগ্রহণ করে, অনেকের জমি ওর মধ্যে গেছে, অনেকে হয়তো টাকাও পায়নি। কেএমডব্ল্যুএসএ-র সাব প্রোজেক্টের জন্য সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলেই অধিগ্রহণ হয়েছে, সাধারণ মানুষ কিছু জানেই না। এরকমভাবে জমিটা পড়ে ছিল, আমরা ওখানে ধান চাষ হতে দেখেছি। সন্তোষপুর রেলের কেবিন থেকে পাহাড়পুরের মোড় পর্যন্ত। ওখানে প্রথম একটা সাধুদের আখড়া দেখেছিলাম। সম্ভবত ওটাকে সোনার আখড়া বলত। সোনা সন্তোষপুরে মাছের ব্যবসা করে।
এখানকার খাটালগুলো হয়েছে বছর সাতেক আগে। ওখানে অমল বিশ্বাস বলে একজন আছে, সে খিদিরপুরের একজন খাটাল-মালিককে একটা অংশ বিক্রি করেছিল। সেখান থেকে খাটাল শুরু হয়েছিল।
ষোলোবিঘার মধ্যে আপনি সব পাবেন। স্ট্যাম্প পেপার, ম্যাজিস্ট্রেট সব পাবেন। অরিজিনাল মালিকরা কেউ নেই, চার-পাঁচ হাত ঘুরে গেছে। ষোলোবিঘার কোনো পোস্টাল অ্যাড্রেস নেই। আমার সময় পর্যন্ত কোনোরকম ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড বা রেসিডেনসিয়াল সার্টিফিকেট কাউকেই ইস্যু করা হয়নি। আমরা কোনোদিন এক গাড়ি রাবিশও ওখানে ফেলিনি। সরকারি জমি কেউ দখল করবে, এটাকে আমরা কখনোই উৎসাহিত করিনি। আমার পরেও বামফ্রন্টের আরও দুটো টার্ম্‌স গেছে।
তৃণমূলের শহিদ দিবসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওখান থেকে লোক তোলা হয়েছে। ঘরে ঘরে তৃণমূলের ঝান্ডা তোলা হয়েছে। আমাদের এখানে যারা সাধারণ মুসলমান, যারা বগ্‌গা মেশিন চালিয়ে দরজিগিরি করত, তারা না খেয়ে মরছে। আর ওখানে গিয়ে দেখুন, যারা রিকশা চালায় বা ডেলি লেবারের কাজ করে, তাদের বাড়িতে টিভি-ফ্রিজ সব আছে। আমরা জানি, শ্রমিকাঞ্চলে মদ মহিলা সাট্টা জুয়া থাকবেই।
এই ষোলোবিঘা নিয়েই আমার সঙ্গে বিরোধ। এই ষোলোবিঘাতে একসময় ঠিক হল, টেকনিকাল কলেজ করবে। এখানে একটা কমিটিও তৈরি হল। সেই কমিটির কনভেনর করল আমাকে। আমি, গোপাল পাঁচাল, মদন সিং, সিরাজুল ইসলাম, বিমল মিশ্রকে নিয়ে কমিটি হল। আমরা যখন বিষয়টা নিয়ে এগোচ্ছি, তখন ভোট এল। মোরসালিন মোল্লাকে ভোটে জেতাতে হবে, মুসলমান তোলা যাবে না। হয়ে গেল শেষ। এখানে কেএমডব্ল্যুএসএ-র একটা বড়ো প্রোজেক্ট আছে, সেটা মাদার ডেয়ারি নামে পরিচিত। আসলে ওটা ক্যাটেল রিসেটেলমেন্ট প্ল্যান্ট। কলকাতার যেসব খাটালগুলো ছিল, এটা যেহেতু ২৪ পরগনার মধ্যে, তার ক্যাটেলগুলো এনে এখানে রাখা হবে। এটা ডাচ্‌ বা ওলন্দাজ সরকারের পয়সা। হয়েছিল সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে। আমি ছিলাম দুটো প্রোজেক্টের দায়িত্বে। শেষ পর্যন্ত দালালি হয়ে গেল। ওখানে পদিরহাটির মুসলমানদের জমি ছিল। ৪০০-৫০০ টাকা বিঘেতে তাদের কাছ থেকে নিয়ে সেগুলো কোটি কোটি টাকায় বিক্রি করেছে।
দুই ২৪ পরগনার বড়ো বড়ো গুণ্ডারা এখানে এসে শেল্টার নেয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুজন সিপিএম করত বলে তৃণমূলরা তাড়া করেছে, এখানে পালিয়ে এসেছে। এখানে এসে টুপি লাগিয়ে জোব্বা লাগিয়ে বসে আছে, কে দেখতে যাবে? বড়ো বড়ো ক্রিমিনালরা এখানে থাকে।