- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

শান্তিপুরে চাষীদের সাথে কথাবার্তা : যা বোঝা গেল চাষে চাষীর লাভ প্রায় নেই

শমিত। শান্তিপুর। ১২ জুলাই ২০২০।#

মধ্যদুপুরে যখন বাথনা কদমপুর গ্রামের চাষী পরেশ মন্ডলের সঙ্গে দেখা করতে যাই, দেখা গেল পরেশ তার বাড়ির মাটির উঠানে নতুন তেরপলের ওপর তিল মাড়াইয়ে ব্যস্ত। এবছর পরেশ ১০ কাঠা জমিতে তিল চাষ করেছিলেন গায়ে গতরে খেটে। ঠিকঠাক তিল পাওয়া গেলে দেড় কুইন্টাল তিল পাওয়ার কথা। এবছর মেরেকেটে ৩০-৩৫ কেজি তিল পাবে বলে জানালেন পরেশ। আমফান ঝড় এবছর ফসলের খুব ক্ষতি করেছে। এছাড়াও চিটে রোগে তিলের দফারফা হয়েছে। প্রতি কিলো বড়জোর ৫০ টাকা দরে ১৫০০-২০০০ টাকা পাবেন তিলটুকুনি বেচে। অথচ চাষ বাবদ খরচ হয়েছে ৩২০০ টাকা। গতর খাটুনির মজুরি উঠবেনা। ১৫ কাঠা জমিতে বোরো ধান চাষ করে ১০ মণ ধান পাবেন – যাতে ক্ষতি প্রায় ৩ হাজার টাকা। পরেশ জানালেন আমফান ও তার পরবর্তী ঝড় এবার তিল ও ধানচাষীদের শুইয়ে দিয়েছে। কথা হল নন্দিতা মন্ডলের সঙ্গে। ১ বিঘা জমিতে তিল চাষ করে ২০-২৫ কিলো তিল পেয়েছেন। জানালেন চটা লেগে এবারে তিল নষ্ট হয়েছে প্রচুর। অথচ গত বছরে একই জমিতে আড়াই কুইন্টাল তিল পেয়েছিলেন। এবছরে তিল ও ধান চাষে ডাঁহা লস। পরিশ্রমটা জলে গেল। নন্দিতাদি জানালেন এবং অন্যান্য চাষীদের কাছেও জানা গেল, এবারে অনেক চাষী তিলগাছ কাটেননি।

নদিয়ার মুড়াগাছা, দোগাছিয়া অঞ্চলে ফুলচাষ করছেন চাষীরা

অপরদিকে শান্তিপুর ব্লকের আরেক প্রান্তের চাষী প্রসেনজিৎ হাজরা দু’বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছিলেন। প্রায় দেড় কুইন্টাল তিল পেয়েছেন। বেশ লাভ করতে পেরেছেন ব’লে জানালেন তিনি। চরপানপাড়ার এক সবজি চাষীর সঙ্গে চাষবাস নিয়ে কথাবার্তায় জানা গেল, বিরাট ঝড়ের পর বর্ষা এসে যাওয়ায় সবজির দাম আকাশছোঁয়া। তিনি জানালেন, এই ১ কুইন্টাল বেগুন নিয়ে গুপ্তিপাড়ার পাইকারি হাটে দিলে ১০ টাকা কিলোদর পাবেন। যার দাম খুচরো বাজারে কিলো প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যা বোঝা গেল চাষে চাষীর লাভ প্রায় নেই। শান্তিপুরের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেল পাটচাষীরা অনেকেই পাট তুলে ফেলেছেন। পাট ছাড়ানো, জলে জাক দেওয়ার জন্য তোড়জোড় করছেন। পাটচাষীরা জানালেন, আরো প্রায় দেড়-দু’মাস পরে পাট ওঠে। কিন্তু এবছরে আমফান ঝড় পাটের খুব ক্ষতি করেছে। যেকারণে পাটচাষও ভালো হলনা। সবমিলিয়ে চাষবাসের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রচুর খরচাখরচ করে এবং এত পরিশ্রমের পরে প্রতিবারেই চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এভাবে কতদিনই বা চলবে! বেশ হতাশ হতেই দেখা গেল চাষীদের।