- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

লোককবি গুরুদাস পালের জন্মশতবর্ষে মেটিয়াব্রুজ বদরতলায় স্মৃতিচারণ সভা

ছবি তুলেছেন ফারুক উল ইসলাম

জিতেন নন্দী, মেটিয়াব্রুজ, ৭ অক্টোবর#

আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মেটিয়াব্রুজ বদরতলার মালোপাড়ার ঘাটে গুরুদাস পালের স্মৃতিচারণার জন্য এক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভার উদ্যোক্তা ছিল ‘মাটির কেল্লা’। তবে এতে সক্রিয় সহযোগিতা করেছে ‘বদরতলা মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতি’র সদস্যরা। সভায় অতিথির আসন গ্রহণ করেন গুরুদাস পালের ভাইঝি প্রভাবতী পাল, একসময়কার ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’র কর্মী গৌরী পাল এবং গুরুদাস পালের সঙ্গী যাত্রাশিল্পী গৌরমোহন দাস। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন গুরুদাস পালের ভাইপো, নাতি-নাতনিরা এবং তাঁর সান্নিধ্যে এসেছিলেন এমন বেশ কয়েকজন স্থানীয় মানুষ।
মাটির কেল্লার পক্ষে বিশ্বজিৎ রায় সভার সূচনা করেন। প্রথমে দুটি গান পরিবেশন করেন গণশিল্পী প্রবীর বল, তার মধ্যে ছিল গুরুদাস পালের জনপ্রিয় রচনা ‘থাকিলে ডোবাখানা হবে কচুরি পানা … স্বভাব তো কখনো যাবে না’ গানটি। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে গুরুদাস পালের আত্মজীবনী ‘জীবন ও শিল্প’ লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে। সেটি উদ্বোধন করেন প্রবীণ শিক্ষক কৃষ্ণচন্দ্র পাল। পুস্তিকাটি উপস্থিত সকলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আত্মজীবনীটি এই সভায় পাঠ করা হয়। এরপর শুরু হয় স্মৃতিচারণ।
যাঁরা গুরুদাস পালের সান্নিধ্যে এসেছিলেন, তাঁরা সকলেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগরুদ্ধ হয়ে পড়েন। প্রভাবতী পাল নিজের কাকার কথা বলতে গিয়ে প্রায় কিছুই বলে উঠতে পারেন না। গৌরী পাল বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন এবং লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। গৌরমোহন দাস গান রচনায় গুরুদাস পালের প্রতিভার কথা স্মরণ করেন — ‘দাদা রাস্তা দিয়ে যায়, দু-তিনখানা গান আমাকে শুনিয়ে যায়, সেখানে গিয়ে পাঁচ-ছখানা গান গায়। আমি বললাম, দাদা কী করে গাইলে? দাদা বলল, ওই যে রাস্তা দিয়ে গুনগুন করছিলাম, ওই করতে করতে গান বেঁধে ফেলেছি … কী জানি, গাইতে গাইতে মনে এসে যায়!’ গুরুদাস পালের দুটি গান পরিবেশন করেন তাঁর ভাইপো অঞ্জন পাল, সঙ্গে ছিলেন মিতালী পাল, উষা অধিকারী এবং গোপীনাথ পাল। এছাড়া বক্তব্য রাখেন পরেশ চন্দ্র নাথ, অসিত রঞ্জন জোয়ারদার এবং ঋষিকেশ পাল। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আনন্দ কিশোর পাল। সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষ্ণা সেন।
নিখিল রঞ্জন জোয়ারদার গুরুদাস পালের সাহচর্যের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আক্ষেপ করেন, ‘গুরুদাসদাকে অনেক রাত পর্যন্ত কেনাবেচা করে রাতে দোকানেই থাকতে হত। শীতের রাত, ঠান্ডায় তাঁর ম্যানিনজাইটিস হয়ে গেল। এই দুঃসময়ে আমিও কি পেরেছি তাঁকে দেখতে যাতে তাঁর অসুবিধার নিরসন হয়? আমিও পারিনি। এই ব্যথা যদি আমাদের মধ্যে না থাকে তাহলে ভবিষ্যতে বা বর্তমানে যে সমস্ত মানুষ অপরের জন্য চিন্তা করেন, তাঁদের অবদান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’ গঙ্গার তীরে বসে এই ছোট্ট স্মৃতিচারণ সভায় তাঁর এই বেদনাবোধ হয়তো অন্যদের মধ্যেও সঞ্চারিত হল।