- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘রাষ্ট্র-নির্ভর অধিকার থেকে বেরিয়ে অন্য একটা ধারণা গড়ে তোলা যায় কি না ভাবতে হবে’

শমিত, মহাবোধি সোসাইটি হল, কলকাতা, ২০ সেপ্টেম্বর#

‘আমি রাষ্ট্র অনুগত হলে অধিকার পাব। রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত না থাকলে অধিকার খর্ব হবে আমার। অধিকারের ধারণা বদলাচ্ছে।’ শহীদ শচীন সেন স্মরণে এক বক্তৃতায় এমন ধারণার কথা উঠে এল গণ আন্দোলনের অগ্রণীsachin-sen কর্মী শুভেন্দু দাশগুপ্তের বক্তব্যে। ‘শাসকের অধিকার, শাসিতের অধিকার একটি বিরোধের সন্ধান’ — এই বিষয়ে বলতে গিয়ে শুভেন্দুবাবু জানান, রাষ্ট্র নাগরিকের নাগরিক অধিকার স্বীকার করছে, বা রাজনীতির অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার স্বীকার করেছে, আবার মানছে না। রাষ্ট্র-নাগরিক সম্পর্ক বদলাচ্ছে এখন পুঁজি-নাগরিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে। নাগরিক অধিকার খর্ব করে নতুন নতুন আইন পাশ হচ্ছে। ইউ.এ.পি.এ, সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা), অপারেশন গ্রীন হান্ট — এ সমস্ত আইনের মধ্যে দিয়েই নাগরিক অধিকারকে অস্বীকার করা। নাগরিকের অর্থনৈতিক দায়িত্বে আর রাষ্ট্র নিজের কাঁধে রাখতে চাইছে না। এগুলো এখন দেবে পুঁজি। রাষ্ট্র ও পুঁজির যৌথ উদ্যোগ বদলাচ্ছে, এখন শুধুই পুঁজির উদ্যোগ। রাষ্ট্রের আইনে বলা ছিল, আদিবাসীদের জমি রাষ্ট্র দখল করতে পারবে না। ‘বীজ আইন’ কৃষকের বীজের অধিকার খর্ব করল। নদী, পর্বত, পানীয় জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য — এসব নাগরিক অধিকার এখন পুঁজি দখল করল। পুঁজি আদিবাসীদের জমি দখল করতে নামল। রাষ্ট্র ‘পুঁজি’র অধিকার স্থাপন করে দিল। রাজনৈতিক ধারণা যেটা ছিল তা অর্থনৈতিক ধারণায় বদলিয়ে গেল। এখন ‘খাদ্য সুরক্ষা আইন’, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ — নাগরিকের অধিকার আর এগুলো থাকল না। তা আইনে পর্যবসিত হল। অধিকারের ধারণাটা রাষ্ট্রনির্ভরতা ছেড়ে পুঁজি নির্ভরতায় পাল্টে গেল।
শুভেন্দুবাবু আরও বলেন, রাষ্ট্রনির্ভর নাগরিক অধিকার থেকে বেরিয়ে অন্য একটা ধারণা গড়ে তোলা যায় কি না, তা ভাবার অবকাশ থাকল। বক্তৃতার আগে শহীদ শচীন সেনের স্মৃতিচারণ করেন গণআন্দোলনের ও বাম আন্দোলনের কর্মী সন্তোষ রাণা, কৌশিক ও শচীন সেনের বড়ো ছেলে মিহির সেন। কবিতাপাঠ করেন সৃজন সেন ও কিশোর চক্রবর্তী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পর্যালোচনা করেন গৌতম সেন। শচীন সেনের পরিবারের পক্ষ থেকে ‘শহীদ শচীন সেন স্মরণে’ একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয় এদিন। পুস্তিকাটি সম্পাদনা করেছেন গৌতম সেন। পুস্তিকাটি এদিন সকলের মধ্যে বিতরিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৭ জুলাই কলকাতা পুলিশ শচীন সেনকে গ্রেফতার করে। তাঁর অপরাধ ছিল নকশাল আন্দোলনের সমর্থক হওয়া।
১৯৭২ সালের ২ অক্টোবর শচীন সেন এন আর এস হাসপাতালে শহীদ হন। নকশাল রাজনীতির বহু গোপন তথ্য তাঁর জানা থাকলেও পুলিশি অত্যাচারে তা প্রকাশিত হয়ে পড়েনি তাঁর কাছ থেকে। এবছরটা শহীদ শচীন সেনের শতবর্ষ।