- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

রাজনৈতিক দলের তহবিলে কর্পোরেট চাঁদা দেওয়া বন্ধ করো

১৩ মে সমস্ত রাজনৈতিক দল একযোগে দিল্লির পার্লামেন্টে বসে ভারতীয় পার্লামেন্টের ষাটতম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন করল। তারা সকলেই নানা মত, নানা স্বরে মহান বহুত্ববাদী ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রশংসা করল। কিন্তু কেউই একবার এই গণতন্ত্রের কর্পোরেট-বন্দিদশার কথা উচ্চারণ করল না। কারণ সকলেই তো কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের আশীর্বাদ-ধন্য!
‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রাটিক রিফর্মস’ নামে একটি সংগঠন ৩৬টি কর্পোরেট ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এরা ২০০৯-১০ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ১ কোটি বা তারও বেশি টাকা দিয়েছিল। তালিকায় কংগ্রেস, বিজেপি এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস দলের নাম রয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর ‘জেনারেল ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট’। এরা কংগ্রেসকে ১৩.৯৫ কোটি এবং বিজেপিকে ১৬.৬ কোটি টাকা দিয়েছে।
এই তালিকা থেকে পরিষ্কার যে এইসব দল কাদের টাকায় নির্বাচনে লড়ে। আমরা সাধারণ মানুষ তো শুধু ভোটটুকুই দিতে পারি। ভোটের আগে যত প্রতিশ্রুতিই দিক না কেন, ভোটে জিতে দলগুলো তাহলে কাদের মন রাখবে? আমাদের, না যারা কোটি কোটি টাকা দেয়, তাদের? তাই আমাদের বুঝতে অসুবিধা থাকে না, কেন আজ বাজার দর এত চড়া; কেন আজ ন্যূনতম মজুরি না দিয়েও ফলতা এসইজেডে মহিলাদের দিব্যি খাটিয়ে নেওয়া যায়।
এই তালিকায় তিনটে দল আর ৩৬টা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নাম আছে। তার মানে এটা নয় যে অন্য দলগুলো ধোয়া তুলসিপাতা! ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রাটিক রিফর্মস’ তথ্য জানার আইনে দলগুলোর কাছে পার্টি-ফান্ডে কর্পোরেট চাঁদার পরিমাণ জানতে চেয়েছিল। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, বিএসপি কেউই জানায়নি। কিন্তু টাকা সকলেই পেয়েছে। আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর ‘জেনারেল ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট’-এর হরিভক্তি জানিয়েছিলেন, ‘আমরা কেরালায় কমিউনিস্টদেরও ফান্ড দিয়েছিলাম, কারণ স্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টের ম্যানেজমেন্ট সেটা চেয়েছিল।’
টাটাদের ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট যখন গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ২৭ লক্ষ টাকার চেক পাঠিয়েছিল, মমতা ব্যানার্জি তা ফেরত পাঠিয়েছিলেন। টাটার টাকাকে না হয় টাটা করা হল, কিন্তু অন্য রাঘব বোয়ালদের কে রোখে!
এই তো আমাদের গণতন্ত্রের নমুনা! যদি একে শুদ্ধ করতে হয়, যদি সাধারণ মানুষের ভোটকে মূল্য দিতে হয়, তবে দলীয় তহবিলে কর্পোরেট চাঁদা নিষিদ্ধ করতে হবে এবং সমস্ত প্রার্থীর নির্বাচনের প্রচার সরকারি ব্যবস্থাপনায় করতে হবে। গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী রাজনৈতিক দলগুলো কি এতে রাজি আছে?