- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে গাজার জনগণের সমুদ্র ও ভূখণ্ডে অধিকার কায়েম

কুশল বসু, কলকাতা, ৩০ নভেম্বর, তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া#

রাষ্ট্রপুঞ্জে সাধারণ সভায় প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি

প্যালেস্তাইনের গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাতদিন অতিবাহিত হওয়ার পর মিশর রাষ্ট্রের সরাসরি মধ্যস্থতায় ইজরায়েল এবং গাজা ভূখণ্ডের শাসকদের মধ্যে ণ্ণযুদ্ধবিরতি’ হল। ১৪ নভেম্বর গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস-এর সামরিক বিভাগের প্রধান আহমেদ জাবারি-কে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে হত্যা করে ইজরায়েলের এই আক্রমণ শুরু হয়। চলে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। অজুহাত হিসেবে বলা হয়, গাজা থেকে ইজরায়েলের দিকে অবিরত রকেট ছোঁড়া হচ্ছে। এরপর শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। ইজরায়েলের তরফে বলা হয়, গাজার রকেট লঞ্চিং সাইট, হামাস-এর কার্যালয়ে আক্রমণ চালানো হচ্ছে, যাতে তারা ভবিষ্যতে কখনো ইজরায়েলের দিকে রকেট ছুঁড়তে না পারে। বাস্তবে মিডিয়ায় দেখা যায়, প্রচুর শিশু সহ সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে এই আক্রমণে। এর উত্তরে ইজরায়েলের মুখপাত্ররা বলে, এর জন্য ণ্ণসন্ত্রাসবাদী’ হামাস দলের জনবহুল এলাকায় সামরিক ঘাঁটি বানানোর কৌশলই দায়ী।
১৬ নভেম্বর মিশরের প্রধানমন্ত্রী হিসাম কান্দিল তিনঘণ্টার একটি ণ্ণযুদ্ধবিরতি’ সংগঠিত করিয়ে গাজায় যান। সেখানে গিয়ে তিনি গাজার মানুষদের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, গাজা ভূখণ্ডটির উত্তর পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ পশ্চিমে মিশর, বাকি দিকগুলি ইজরায়েল অধিকৃত। প্রায় শতাব্দী প্রাচীন ইজরায়েলি-প্যালেস্তানিয় দ্বন্দ্ব একটি অন্য মাত্রা পেয়েছিল পশ্চিমি দেশগুলির সাহায্যে ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর। ইজরায়েল অর্থনৈতিকভাবে এবং সামরিক শক্তিতে খুবই শক্তিশালী। এই রাষ্ট্র এবং বাকি দুনিয়ার বেশিরভাগ রাষ্ট্র প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের অস্তিত্বই স্বীকার করে না, যদিও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা ভূখণ্ড বাস্তবত শাসন করে প্যালেস্তাইনি জনতার প্রতিনিধিরা। অপরদিকে ইরান, সিরিয়া সহ কয়েকটি দেশ ইজরায়েলের কট্টর বিরোধী। প্যালেস্তানিয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, ইজরায়েল প্যালেস্তানিয়দের শেষ করে দিয়ে ওই এলাকার বাকি দুটি জায়গা গাজা ভূখণ্ড এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে দখলদারি কায়েম করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে প্যালেস্তানিয়দের স্বাধীনতার যুদ্ধ বা ইন্তিফাদাকে ইজরায়েল ণ্ণসন্ত্রাসবাদ’ বলে অভিহিত করে। এই ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন দ্বন্দ্ব আশেপাশের সমস্ত দেশের সমাজ-রাজনীতিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবিত করে চলেছে।
২০০৭ সালে গাজা ভূখণ্ডে প্যালেস্তানিয় সংগঠন হামাস ক্ষমতায় চলে এলে ইজরায়েলের আগ্রাসন আরও বেড়ে যায়। গাজার ভূ-সীমান্ত এবং সমুদ্র সীমান্ত সিল করে দেয় তারা। মিশরকে বাধ্য করে, তাদের সঙ্গে গাজার ভূ-সীমান্তও সিল করে দেওয়ার জন্য। এক অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে পড়ে যায় গাজার সমাজজীবন। মিশর সীমান্তে চোরাচালান চলতে থাকে। নিয়মিত প্যালেস্তানিয়দের খুন করতে থাকে ইজরায়েলের সীমান্তবাহিনী। অপরদিকে গাজা থেকে ইজরায়েলের মধ্যে চোরাগোপ্তা রকেট হানা শুরু হয়। সেগুলি অবশ্য খুব একটা শক্তিশালী নয়, বেশিরভাগ সময়েই সেগুলি গাজা ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ে গিয়ে প্যালেস্তানিয়দের দুর্দশার কারণ হয়, কখনো কখনো তা দক্ষিণ ইজরায়েলে যায়। কিন্তু এতেই দক্ষিণ ইজরায়েলের সাধারণ জীবনের মানুষ ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। রকেট প্রতিরোধে ইজরায়েলের বানানো ণ্ণআয়রন ডোম’ সুরক্ষা ব্যবস্থা কিছু রকেট প্রতিহত করতেও সক্ষম হয়। ২০০৮ এবং ২০১০ সালে কিছু দিনের জন্য গাজায় সশস্ত্র হামলা চালায় ইজরায়েল। অভিযোগ ওঠে, ইরান, সোমালিয়া প্রভৃতি কিছু রাষ্ট্র প্যালেস্তানিয় শাসকদের রকেট হানায় প্রযুক্তি সহায়তা করছে।
২১ নভেম্বর মিশরের রাষ্ট্রপ্রধানদের তৈরি করা একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে মিশরের বিদেশমন্ত্রী এবং মার্কিন বিদেশসচিব। ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এবং হামাস মিশরকে ধন্যবাদ জানায়। হামাস দাবি করে, তাদের জয় হয়েছে, কারণ ইজরায়েলের গাজা দখল করা পরিকল্পনা রুখে দেওয়া গেছে। ইজরায়েল দাবি করে তাদের জয় হয়েছে, কারণ গাজার রকেট ওড়ানোর ক্ষমতা ক্ষেপণাস্ত্র চালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া গেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী,
ইজরায়েল গাজা ভূখণ্ডে আকাশ, সমুদ্র বা ভূমিপথে সমস্ত ধরনের হানাদারি এবং ব্যক্তিহত্যা বন্ধ করবে; সমস্ত প্যালেস্তানিয় গোষ্ঠী গাজা থেকে রকেট হানা এবং সীমান্ত থেকে ইজরায়েলিদের লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ করবে; গাজার মানুষদের, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার মানুষদের স্বাধীন চলাচলের বন্দোবস্ত করা হবে। কেউ যদি অন্যথা করে, তাহলে মিশরের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে। পরে ঠিক হয়, গাজার মৎস্যজীবীরা ভূমধ্যসাগরে ৬ নটিক্যাল মাইল অবধি মাছ ধরতে যেতে পারবে।
এই সাতদিনের ণ্ণযুদ্ধ’ চলাকালীন গাজা থেকে প্রায় দেয় হাজার রকেট ইজরায়েলের দিকে ছোঁড়া হয়েছে বলে ইজরায়েল জানিয়েছে। তাতে ৬ জন মারা গেছে, ২৪০ জন আহত হয়েছে। আর ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হানায় ১০৫ জন মারা গেছে এবং ৯৭১ জন আহত হয়েছে বলে প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
৩০ নভেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জ সাধারণ সভা ভোটাভুটির মাধ্যমে প্যালেস্তাইনকে সদস্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে একে অমান্য করে ইজরায়েল জানিয়েছে, প্যালেস্তাইন বলে যে অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে ৩০০০ ইজরায়েলি সেটলমেন্ট তৈরি করবে তারা।