- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

মৎস্যজীবী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, পরিবেশকর্মী ও পরমাণু প্রতিরোধ কর্মী টমাস কোচারি প্রয়াত

ন্যাশনাল ফিশ ওয়ার্কার্স ফোরামের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে, ৫ মে#

kocherry
দক্ষিণ ভারতের মৎস্যজীবীদের অধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ টমাস কোচারি কেরালার ত্রিবান্দ্রমের একটি চার্চে ৩ মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ১১ ভাই বোনের মধ্যে একজন কোচারি কেরালায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তারপর খ্রীষ্টান ধর্ম প্রতিষ্ঠানের হয়ে ১৯৭১ সালে তিরিশ বছর বয়সে রায়গঞ্জে বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের মধ্যে সেবামূলক কাজ শুরু করেন। পরে তিনি কেরালা ও তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীদের অধিকার এবং তামিলনাড়ু উপকূলে কুডানকুলাম পরমাণু প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হন। উদ্বাস্তুদের মধ্যে কাজ করার পর কোচারি ত্রিবান্দ্রমের ছোট্ট মৎস্যজীবী গ্রাম পুথুরা-তে কাজ করতে যান। সেখানে এবং উপকূলবর্তী অন্যান্য অঞ্চলে দরিদ্র ছোটো ছোটো নৌকা করে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের জনস্বাস্থ্য এবং ট্রেড ইউনিয়নের কাজ করেন। প্রসঙ্গত, মাছ ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের অত্যাচারে এই প্রবল পরিশ্রমী মৎস্যজীবীরা অত্যন্ত কম উপার্জন করত। কেরালার সমুদ্রের পাশের মিষ্টি জলের মৎস্যজীবী এলাকায় বড়ো হয়ে ওঠা কোচারির মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছিল চার্চ এবং কেরালার জঙ্গী বামপন্থী আন্দোলন।
কেরালার মৎস্যজীবীরা স্বাধীনভাবে সংগঠিত হতে শুরু করে ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিক থেকেই। ১৯৮১ সালে কেরালায় কোচারি এবং জয়াচান অ্যান্টনি বর্ষার শুরুতে মাছের ডিম দেওয়ার সময় ট্রলার নিষিদ্ধ করার দাবিতে ১১ দিনের অনশন করেন। কোচারিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিজের আইনি লড়াই লড়তে গিয়ে কোচারি কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে দেন। ১৯৮২ সালে মৎস্যজীবীদের আন্দোলন আরও বিস্তার লাভ করে এবং টমাস কোচারি ন্যাশনাল ফিশওয়ার্কার্স ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় ভারত সরকার ২৬০০ বিদেশি মাছ ধরা ট্রলারকে ছাড়পত্র দিতে চলেছিল। এতে দেশে প্রায় এক কোটি ছোটো মৎস্যজীবী সঙ্কটের সম্মুখীন হয়। কোচারির নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় এর বিরুদ্ধে। মিছিল, অনশন, দেশের বিভিন্ন মৎস্য বন্দর অবরোধ — এসবের মধ্যে দিয়ে ভারত সরকার বাধ্য হয় এই ছাড়পত্র তুলে নিতে। উদারিকরণের প্রয়াসের এটা ছিল বড়ো ধাক্কা। কোচারি বড়ো বড়ো ট্রলারে করে মাছ ধরার ব্যবসার তীব্র বিরোধী ছিলেন, কারণ সীমিত মৎস্যসম্পদের সহনশীল ব্যবহারে সবচেয়ে বড়ো অন্তরায় তারা।
১৯৮৯ সালে কুডানকুলাম পরমাণু প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই তিনি এর বিরোধিতা করে আন্দোলনে যুক্ত হন। পরমাণু বিদ্যুতের তীব্র বিরোধী ছিলেন একাধারে পরিবেশপ্রেমী, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কর্মী, পরমাণু প্রতিরোধী। পরের দিকে কোচারি মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি এবং প্রতিষ্ঠিত চার্চের বিরোধিতা করতেন, বলতেন, ওরা ক্ষমতালোভী, প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে উঠেছে, সংস্কার আর নিজেদের বানানো ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি স্থাপনে ব্যস্ত। তার মতে, ‘জন আন্দোলনকে নিচুতলা থেকে উঠে আসতে হবে। তাকে এমন বিপ্লবী কাঠামো তৈরি করতে হবে, যা কিছুতেই ক্ষমতা বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে না।’