- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

মারুতি সুজুকি মানেসর ডায়েরি (৬)

শের সিং সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা ‘ফরিদাবাদ মজদুর সমাচার’ থেকে#

আজ থেকে একবছর আগে ৭ অক্টোবর ২০১১, আইএমটি-মানেসরে এগারোটি কারখানা শ্রমিকেরা দখল করে নিয়েছিল। এটা ঘটেছিল শুধুমাত্র মারুতি-সুজুকির মানেসর ইউনিটে নয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডেল টাউন (আইএমটি) মানেসর জুড়ে মোট এগারোটি কারখানায়। এটা ছিল শ্রমিকদের দিক থেকে এক ‘অবাস্তব’ পদক্ষেপ। একবছরের মধ্যে দু-দুবার ঘটল শ্রমিকদের এই কারখানা দখল (তার আগে ২০১১ সালের ৪ জুন প্রথমবার ১৩ দিন যাবৎ মারুতি-সুজুকির এই মানেসর ইউনিটটা দখল করে নিয়েছিল।)। ‘বাস্তব’ জগতে ফিরে এসে শ্রমিকেরা পরদিন ৮ তারিখ সাতটি কারখানার ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়। সেগুলিতে কোম্পানিদের দখল ফিরে আসে। সেদিন থেকে সুজুকি গোষ্ঠীর বাকি চারটি কারখানায় শ্রমিকদের দখল চলতে থাকে। এক শ্রমিকের ভাষায় : ৭ থেকে ১৪ অক্টোবর (২০১১) মারুতি-সুজুকি কারখানার ভিতর এক দারুণ সময় ছিল। না ছিল কোনো কাজের টেনশন, না ছিল আসা-যাওয়ার হয়রানি। বাস ধরবার চিন্তা ছিল না। খাবার তৈরির টেনশন ছিল না। এমনকী খাবার খাওয়ার চিন্তাও ছিল না যে ৭টা বা ৯টায় খেয়ে নিতে হবে। এ নিয়ে কোনো টেনশন ছিল না যে আজ কী বার, কত তারিখ। নিজেদের মধ্যে কত কথা তখন হত। পরস্পর এত কাছাকাছি আর কখনো আসা হয়নি, যা এই সাতদিনে হয়েছিল।
কোম্পানি আর সরকারের বাস্তবতা এই সাতদিনের জন্য পিছনে চলে গিয়েছিল। কায়েম হয়েছিল শ্রমিকদের অবাস্তবতা! ১৯ অক্টোবর ২০১১ তৃতীয় চুক্তি হল। ঠিকেদারের অধীনস্থ সমস্ত শ্রমিককে কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হল। স্থির হল, আগের ৪৫ সেকেন্ডে একটি গাড়ি তৈরির (অ্যাসেম্বলি করা) বদলে এখন ১ মিনিটে হবে।
কোম্পানি প্রচলিত বাস্তবতার নতুন ঘেরাটোপ তৈরিতে লেগে গেল। অক্টোবরের দিনগুলোতে সুজুকি পাওয়ারট্রেন কারখানার তিনজন শ্রমিক মারুতি-সুজুকির শ্রমিকদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির কাজে বিশেষ আগুয়ান ভূমিকা নিয়েছিলেন। যেহেতু এই তিনজন একটা দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন এবং ১৯ অক্টোবর চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন, তাই এদের বাদ দিয়ে ২১ অক্টোবর চুক্তি সেরে নেওয়া হল। যারা তাতে স্বাক্ষর করল, তাদের কর্তৃত্ব রাখতে তিনবছরের চুক্তি করা হল এবং প্রতিবাদী তিনজনকে সাসপেন্ড করা হল। কোম্পানি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ মজবুত করার জন্য পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ওই তিনজনকে বরখাস্ত করল। চুক্তিকারী ম্যানেজমেন্ট এবং শ্রমিকনেতারা শিল্পে শান্তি বজায় রাখলেন। সুজুকি পাওয়ারট্রেন আর মারুতি-সুজুকির সাহেবরা দুই কোম্পানিকে সংযুক্ত করে মিলিতভাবে বিদ্রোহী শ্রমিকদের চিহ্নিত করল। সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হল বি-প্ল্যান্ট। নতুন ইউনিয়নকে রেজিস্ট্রেশন দিল সরকার। ম্যানেজমেন্টও এই ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দিল। ফলস্বরূপ, স্থায়ী শ্রমিক এবং অন্য শ্রমিকদের আলাদা করে ফেলার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে ফেলা হল। অথচ গতবছর এগারোটা কারখানা দখলের সময় ঠিকা শ্রমিকদের কাজের দাবিতে স্থায়ী, ঠিকা, ট্রেনি আর অ্যাপ্রেন্টিসরা সকলে একত্রিত হয়েছিল, বাস্তবে যা ছিল নজিরবিহীন।
এরকম এক পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হতে থাকল। শ্রমিকরা বিদ্রোহের দিনগুলোতে আদায় করে নেওয়া সম্মান হারাতে থাকল। আবার শুরু হল গালিগালাজ, ইউনিয়নকে শ্রমিকদের কাছে অপদস্থ করা। শ্রমিকদের সংগঠিতভাবে প্ররোচিত করা এবং শ্রমিকদের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটলে তাকে দমন করার ব্যবস্থাও ফের কায়েম করল কোম্পানি।
শ্রমিকদের মধ্যে ফের পুরোনো স্থিতাবস্থা ফিরে এল। এখন তাদের কাছে স্থিতাবস্থার দুই প্রতীক — কারখানা ও ম্যানেজমেন্ট — টার্গেট হল। এইরকম পরিস্থিতিতেই ঘটে গেল ১৮ জুলাই ২০১২-র ঘটনা। শ্রমিকদের হাতে নিগৃহীত হল ম্যানেজারেরা, একজনকে পুড়িয়ে মারা হল।