- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

মারুতি সুজুকি মানেসর ডায়েরি (১)

শের সিং সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা ণ্ণফরিদাবাদ মজদুর সমাচার’ থেকে##

সঞ্জয় গান্ধীর ছোটো গাড়ির প্রকল্প না চলায় মারুতি কোম্পানির সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এই কোম্পানির গুরগাঁও কারখানা থেকে প্রথম গাড়ি তৈরি হয়। সেই সময় ভারত সরকারের শেয়ার ছিল ৭৬% এবং জাপানের সুজুকি কোম্পানির ২৪%। ক্রমশ সুজুকির শেয়ার বাড়তে থাকে। ১৯৮৭ সালে তাদের ৪০%, ১৯৯২-তে আধাআধি এবং ১৯৯৮-তে ৫৪% হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারুতি কোম্পানির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুজুকির হাতে চলে যায়।
১৯৮৩ সালে দক্ষ স্থায়ী শ্রমিকদের নিয়ে উৎপাদন শুরু হয়েছিল। ১৯৯২ সালে এখানে ৪৫০০ স্থায়ী শ্রমিক এবং ২২০০ অন্যান্য কর্মচারী কাজ করত। ১৯৯৭ সাল থেকে ঠিকেদারদের মাধ্যমে ঠিকা শ্রমিক নেওয়া শুরু হয়। ২০০০ সালে যখন প্রথম ধর্মঘট হল, ঠিকা শ্রমিকদের দিয়ে কাজ চালু রাখা হল। ইউনিয়নকে হাত করে ধর্মঘট করানো হয়েছিল, যাতে শ্রমিকদের দুর্বল করে ফেলা যায়। ২০০১ সালে ১২৫০ জন স্থায়ী শ্রমিককে ছাঁটাই করা হল। ২০০৩ সালে আবার ১২৫০ জন ছাঁটাই হল। ২০০৭ সালে এসে মারুতি সুজুকির এই গুরগাঁও ফ্যাকট্রিতে ১৮০০ স্থায়ী এবং ৪০০০ ঠিকা শ্রমিক কাজ করত। তখন স্থায়ী শ্রমিকদের মাইনে ছিল ২৫০০০ টাকা, ঠিকা শ্রমিকরা পেত ৩৫০০-৫০০০ টাকা। এছাড়া ফরিদাবাদ, গুরগাঁও, ওখলা এবং নয়ডা শিল্পাঞ্চলে হাজারো জায়গায় মারুতি গাড়ির বেশিরভাগ কাজ করিয়ে নেওয়া হত। ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মাইনে দিয়ে মারুতি গাড়ি তৈরির বিভিন্ন কাজ করানো হয়ে এসেছে।
২০১১ সালে ৩০০ একর জায়গার ওপর পুরোনো গুরগাঁও ফ্যাকট্রির তিনটে প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল বছরে ৭ লক্ষ গাড়ি। ৬০০ একর জমির ওপর মানেসরের দ্বিতীয় ফ্যাকট্রিতে ২০০৭ সালে উৎপাদন শুরু হয়। এখানকার অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৩ লক্ষ গাড়ি। ২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে পঞ্চম অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টে আরও আড়াই লক্ষ গাড়ি তৈরি শুরু হয়। ২০১১ সালে এখানে স্থায়ী শ্রমিকেরা সব মিলিয়ে হাতে পেত মাসে ১৭০০০ থেকে ১৮০০০ টাকা। কিন্তু বিয়ে বা পারিবারিক কোনো সমস্যার জন্য চারদিন কাজে অনুপস্থিত থাকলে ৮৯০০ টাকা কেটে নেওয়া হত। একদিন না এলে ২২৫০ টাকা কেটে নেওয়া হত। ঠিকা শ্রমিকদের মধ্যে যারা আইটিআই পাশ, তারা মাইনে পায় কেটেকুটে ৭২০০ টাকা আর অন্যরা ৬২০০ টাকা। কিন্তু একদিন কাজ কামাই করলে ২০০০ টাকা কেটে নেওয়া হত। কোনো প্রতিবাদ করলেই ঠিকেদার কাজ থেকে বসিয়ে দিত। কথায় কথায় সুপারভাইজর আর ম্যানেজারেরা স্থায়ী শ্রমিকদের গালিগালাজ করত, কলার চেপে ধরত। বেয়াদব শ্রমিককে এক লাইন থেকে অন্য লাইনে সরিয়ে দেওয়া হত। একজন শ্রমিক বলেন, ণ্ণচায়ের জন্য সাত মিনিট বরাদ্দ সময়ে ৪০ গজ হেঁটে গিয়ে এক হাতে কাপ আর মুখে ব্রেড পকোড়া গুঁজে নিতে হত। প্যান্টের চেন খুলে পেচ্ছাপ করার জন্য দু-মিনিট হেঁটে গিয়ে লাইন লাগাও … কাজের এমন চাপ যে চুলকুনি থাকলেও চুলকানোর সময় নেই … কোম্পানি এক কোটি গাড়ি বানানোর পর মোবাইল ফোন উপহার দিয়েছে, কিন্তু কথা বলার ফুরসত তো দেয়নি … ১৭০০০ টাকা মাইনে বলে হাতে ১২০০০ দেয়। হাতে পেয়ে বউ সন্দেহ করে …’
এমন অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য স্থায়ী শ্রমিকেরা দু-হাজার করে টাকা চাঁদা দিয়ে নতুন ইউনিয়ন বানানোর তোড়জোড় শুরু করল।
(চলবে)