- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

মানি মার্কেটে ব্যবসা লাটে , এমপিএস দহিজুড়ির কৃষিফার্ম ও রিসর্ট শ্রমিকদের ওপর কোপ

অমিত মাহাত, ঝাড়গ্রাম, ১৫ মে#

MPS-wikimapia-2013May
ঝাড়গ্রামের দহিজুড়িতে এমপিএস-এর কৃষিফার্ম ও রিসর্ট। উইকিম্যাপিয়া থেকে ১৮ মে ২০১৩ তারিখের স্ক্রিনশট

 

যখন গোটা রাজ্য জুড়ে সারদা মানি মার্কেট বিজনেস নিয়ে যায় যায় আওয়াজ উঠছে, তখনও বেশ চলছিল ঝাড়গ্রামের এমপিএস-এর কাজকর্ম। পাশা উল্টে গেল পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় অবস্থিত এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্স নামে চিটফান্ড সংস্থার অফিসে আমানতকারী জনতার বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায়। ওই ঘটনার জেরে এমপিএস-এর কলকাতার অফিসে তালা পড়ে। এখন অর্থভাণ্ডারে টান পড়ায় ঝাড়গ্রামের দহিজুড়িতে অবস্থিত এমপিএসের কাজও বন্ধের দিকে।
গত ৭ মে রাত্রিবেলা এমপিএস-এর পাততাড়ি গোটানোর চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে। এমপিএস-এর দহিজুড়ি ফার্ম থেকে গবাদি পশু রাতের অন্ধকারে পাচার করে দেওয়া হচ্ছিল। স্থানীয় যারা দহিজুড়ি সংলগ্ন এমপিএস-এর কর্মী, ওদেরই একটা অংশ বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য গবাদি পশু বোঝাই গাড়িটি আটক করে। পরের দিন সকালে কাজ করতে আসা হাজার খানেক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের খবর শোনে। কাজ হারানোর জেরে এমপিএস রিসর্ট গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা।
এমপিএস-এর এই ফার্মে মোট তিন শ্রেণীর শ্রমিক কাজ করে। ক্যাটাগরি এ, বি ও অস্থায়ী শ্রমিক। এ ও বি ক্যাটাগরি মিলে মোট ছশো জন এবং অস্থায়ীভাবে মাঠে কাজ করা শ্রমিকের সংখ্যা চার-পাঁচশো জন। এছাড়াও রয়েছে ঠিকাদারদের শ্রমিক।
কেবল ছাঁটাই হওয়া বা কাজ হারানো নয়, শ্রমিকদের বেতনও কমিয়ে দৈনিক ষাট টাকা করা হয়েছে। অনেক শ্রমিক কাজ ধরে রাখার জন্য এই ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের বাজারে মাত্র ষাট টাকাতে কাজ করতে রাজি হয়েছে।
কথা বলছিলাম বিনপুরের আঁধারিয়ায় বাড়ি অনন্ত বাগরাই-এর সাথে। ছাঁটাই হয়ে গেছে সে। কাজ হারানোর কষ্ট ওর চোখেমুখে স্পষ্ট। কথার মধ্যেও কাজ হারানোর ক্ষোভ। ণ্ণকী যে হবেক বুঝতে পারছি লাই। এখানে তবু মাটি কাইটে খাইতাম। ইবার সিটাও গেল।’ অর্থাৎ মাথায় হাত পড়ে গেছে। ঝাড়গ্রামে বাড়ি দীপালি মাঝি-র। স্বামীর মতোই নিজেও সংসারে একটু বাড়তি সুরাহার জন্য এমপিএস-এ কাজ নিয়েছিলেন। মজুরি কমে গেছে তাঁর। এখন সামান্য মজুরিতে কীভাবে চলবে, দীর্ঘশ্বাসের মতোই এ প্রশ্নটা বেরিয়ে এল তাঁর মুখ দিয়ে।
এখানকার স্থায়ী বি ক্যাটাগরির কর্মী সিনরাই টুডু। ওঁর সাথে কথা বলে জানা গেল, ওদের দৈনিক বেতন ১৬৫ টাকা হলেও এখন মাসিক হাজার টাকা হিসেবে আরও তিন মাস ধরেই এই কাজটা করতে হবে। ফলে দেনার মধ্যে চলছে গোটা পরিবার। এইভাবে টানা আরও তিনমাস — কিন্তু তারপরে কী হবে তার উত্তর পাওয়া গেল না এমপিএস চত্বরের কোনো কর্মীর মুখেই।
আরও জানা গেল, এমপিএস-এর বেশিরভাগ কাজই বন্ধ। নতুন কনস্ট্রাকশনের জন্য সাত জন ঠিকাদারের মধ্যে এখন মাত্র তিনজন ঠিকাদার কাজ করছে। আর মাটি কাটার কাজে ডেলি লেবার যারা আসত, তারা দু-দিনে একদিন কাজ পাচ্ছে এখন।