- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘মাদ্রাসা এক আরবি শব্দ, যার অর্থ হল স্কুল’

২৭ অক্টোবর, জিতেন নন্দী#

খাগড়াগড়ের 'দ্বীনিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা'। এখানকার এক শিক্ষক অভিযোগ জানালেন, আনন্দবাজার পত্রিকা আরেকটি গ্রামের এক 'প্রশিক্ষণ কেন্দ্র'-এর ছবি দিতে গিয়ে এই মাদ্রাসার ছবি ব্যবহার করেছে। ছবি টু-সার্কেলস ডট নেট থেকে।
খাগড়াগড়ের ‘দ্বীনিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা’। এখানকার এক শিক্ষক অভিযোগ জানালেন, আনন্দবাজার পত্রিকা আরেকটি গ্রামের এক ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’-এর ছবি দিতে গিয়ে এই মাদ্রাসার ছবি ব্যবহার করেছে। ছবি টু-সার্কেলস ডট নেট থেকে।

২৭ অক্টোবর কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে ‘মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজক ছিল ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিশ-ই-মুশাওয়ারাত’ এবং ‘মিল্লি এত্তেহাদ পরিষদ’। আয়োজকেরা ইতিমধ্যেই বর্ধমানের খাগড়াগড় এবং শিমুলিয়ায় সরেজমিন অনুসন্ধান করে এসেছেন। তার বিবরণ পেশ করেন মওলানা শাহ মহম্মদ নুরুদ্দিন। এরপর বক্তব্য রাখেন সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার, ও পি শাহ, ছোটন দাস, মানিক সমাদ্দার এবং জিতেন নন্দী। প্রত্যেকেই মাদ্রাসার বিষয় থেকে কিছুটা সরে গিয়ে সাধারণভাবে মুসলমান সমাজের প্রতি বিদ্বেষ ও সন্দেহের যে বাতাবরণ সৃষ্টি করা হচ্ছে তা নিয়ে আলোকপাত করেন। সকলেই মিডিয়ার ভূমিকার নিন্দা করেন। এছাড়া অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে মুসলমান সম্প্রদায়কে জড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রক্ষণাত্মক মনোভঙ্গি নিয়েও সমালোচনা হয়। উপস্থিত শ্রোতাদের একজন বলেন, মাদ্রাসার কথা আলোচনায় আসছে না। ডঃ জাফরুল্লা এই বিষয়ে বিশদে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসা এক আরবি শব্দ, যার অর্থ হল স্কুল। যদি আপনি মধ্যপ্রাচ্যের তেইশটি দেশে যান, আপনি দেখতে পাবেন সর্বত্র স্কুল বলতে মাদ্রাসাই লেখা রয়েছে। … হিন্দুস্থানে আকবর বাদশার আমলে প্রথম মাদ্রাসা তৈরি হয়। … তবে আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন কব্জা করেছিল, সেই সময় আমেরিকা তাদের মোকাবিলা করা এবং হটিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটা প্ল্যান তৈরি করল। তাদের নিজেদের দেশের সৈন্য ওখানে পাঠানো মুশকিল, তাদের প্রত্যেকের জীবন খুব মূল্যবান। যুদ্ধ করতে গিয়ে তারা মরে গেলে মুশকিল, কিন্তু কোনো আফগানি মরলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই। হাজার বা লক্ষাধিক আফগানি মরলেও কোনো লোকসান নেই। সোভিয়েত কব্জার ফলে পঞ্চাশ লক্ষ আফগানি সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল। এরা ছিল খুবই দুর্দশাগ্রস্ত, গরিব। সিআইএ দেখল, এদের মাথায় সোভিয়েত বিদ্বেষ এবং জঙ্গী ভাবনা পয়দা করতে হলে মাদ্রাসা বানানো দরকার। এইভাবে সিআইএ-র মদতে হাজার হাজার মাদ্রাসা গড়ে উঠল সীমান্ত অঞ্চলে। সেখান থেকেই তালিবানের উৎপত্তি। কিন্তু সেই মাদ্রাসার সঙ্গে আসল মাদ্রাসার কোনো সম্পর্ক নেই। …’
তাঁর বিস্তারিত ইতিহাস ভিত্তিক আলোচনায় বোঝা গেল, আজ মিডিয়ার মাদ্রাসা নিয়ে প্রচার ওই আমেরিকান গুপ্তচর সংগঠন সিআইএ-র ঢঙেই হয়ে চলেছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার তাতে তাল দিয়ে চলেছে। এই প্রসঙ্গে ডঃ সঈদ ফজহুদ্দিন এবং উত্তর দিনাজপুরের মাদ্রাসা-শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের এলাকায় প্রতিটি মাদ্রাসায় মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু ছাত্রছাত্রীও কিছু আছে। এছাড়া, বেআইনি মাদ্রাসা বলতে মিডিয়া যে একটা ধোঁয়াশা তৈরি করেছে সেটাও আলোচনায় উঠে আসে। খারিজি মাদ্রাসাগুলি বেসরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত নয়। তার অর্থ নয় যে সেগুলো বেআইনি। তবে মাদ্রাসা-শিক্ষা যে আজকের সমাজের নতুন প্রজন্মের জন্য যথেষ্ট নয়, সেটাও স্পষ্টভাবে আলোচিত হয়।