সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, সূত্র নীলা হার্ডিকর, ঘোঘোলগাঁও, মধ্যপ্রদেশ, ১৩ সেপ্টেম্বর, হরদা-তে জল সত্যাগ্রহের ছবি ইন্টারনেট সূত্রে পাওয়া#
নর্মদা নদীর ওপর বাঁধের জলস্তরের উচ্চতা বাড়ানোর বিরুদ্ধে জলে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবাদ করছে মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা।
গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশ রাজ্য জুড়ে বয়ে চলা নর্মদা নদীর ওপর অনেক জায়গায় বড়ো বড়ো বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ তৈরি করা এবং চাষের জমিতে সেচের বন্দোবস্ত করা শুরু হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকেই। ১৯৬১ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের বিরোধীতা করে এসেছে নদীর দুই পারে থাকা মানুষ, কারণ বাঁধ দিলে সেই বাঁধ থেকে জল ছাড়ার সময় আসেপাশের গ্রাম ভেসে যায়। ১৯৭৯ সালে শুরু হওয়া সর্দার সরোবর প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনের থেকেই গড়ে উঠেছে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন। প্রায় ৩০টি অতিকায় বাঁধ নির্মাণ, এবং প্রতি বছর সেই বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর এই প্রকল্প চলছে। বাঁধ দেওয়ার ফলে এবং দফায় দফায় বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে জলস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে উচ্ছেদ হয়েছে মানুষ। তাদের পুনর্বাসন দেওয়ার কথা সরকারি ঘোষণায় থাকা সত্ত্বেও প্রায় তার কিছুই পালন করা হয়নি।
সম্প্রতি এইরকমই একটি ওঙ্কারশ্বের বাঁধ, যা ২০০৭ সালে চালু হয়, তার উচ্চতা বাড়ানোর (১৮৯ মিটার থেকে ১৯৩ মিটার করার) তোড়জোড় চলছিল। এর ফলে ভেসে যেতে বসা দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশের খানদোয়া অঞ্চলের গ্রাম ঘোঘোলগাঁও-এর অধিবাসীরা ণ্ণজল সত্যাগ্রহ’-তে সামিল হয়। ২৫ আগস্ট সরকার বাঁধের জলের উচ্চতা বাড়াতে শুরু করে, সঙ্গে সঙ্গে ২৮ জন পুরুষ এবং ২৪ জন মহিলা ওই বাঁধের জলে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে আরও ১৫০ জন একটি মঞ্চ বানিয়ে ধর্নায় বসে। জলের উচ্চতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে জল সত্যাগ্রহীদের বুক অবধি পৌঁছে যায় জল। সরকার ততক্ষণে ততক্ষণে বাঁধের জলের উচ্চতা ১৮৯ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১৯০.৪ মিটার করে ফেলেছে।
একেকজন জল সত্যাগ্রহী গড়ে ২০ ঘন্টা করে জলে থাকছিলেন। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের বর্ষীয়ান নেত্রী চিত্ররূপা পালিত জানান, গ্রামবাসীরা বাঁশের সাহায্যে জলে দাঁড়িয়ে থাকছিলেন, দু’বেলা খাওয়া এবং শৌচাগারে যাওয়ার সময়টুকু বাদ দিয়ে। এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে তাদের পায়ের তলায় ঘা হয়ে যেতে শুরু করে।
ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর পিপলস মুভমেন্ট একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২০১১ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় দিয়ে বলে, জমির বদলে জমি দিতে হবে বাঁধের কারণে উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দাদের, এবং জমির ন্যুনতম পরিমাণ হবে ২ একর। কিন্তু একবছর পার হয়ে গেলেও ২৫০০ জমিহারা পরিবার কিচ্ছু পায়নি। অন্তত ১০০০ পরিবার, যাদের ঘর গেছে, তারা ঘরের জায়গাও পায়নি।
১০ সেপ্টেম্বর ১৭ দিন এই সত্যাগ্রহ চলার পর মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘোষণা করে, ওঙ্কারশ্বের বাঁধের জলস্তর ১৮৯ মিটার থেকে আর বাড়ানো হবে না। এবং উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের ণ্ণজমির বদলে জমি’ নীতিতে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। বাঁধের জল বাড়তে বাড়তে তখন সত্যাগ্রহীদের নাক অবধি পৌঁছে গেছে। সরকারের এই ঘোষণার পর ঘোঘোলগাঁও-এর জল সত্যাগ্রহ প্রত্যাহার করা হয়।
কিন্তু মধ্যপ্রদেশেরর আরেকটি অঞ্চল হরদা-তে ইন্দিরা সাগর বাঁধের উচ্চতা ২৬০ মিটার থেকে বাড়িয়ে ২৬২ মিটার করার বিরুদ্ধে জল সত্যাগ্রহ তখনও চলতে থাকে। ৪ সেপ্টেম্বর ইন্দিরা সাগর বাঁধের জল সত্যাগ্রহ শুরু হয় খারদানা, বাদখালিয়া এবং বাদগাঁও মাল গ্রামে। কয়েকশ’ মানুষ সামিল হয় এই সত্যাগ্রহে। ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশ সরকার এই সমস্ত গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করে। প্রায় ১২০০ পুলিশ পাঠিয়ে জোর করে জল সত্যাগ্রহ ভেঙে দেওয়া হয়। ২৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয় সত্যাগ্রহে অংশ নেওয়ার কারণে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালেও নর্মদা নদীর ওপর বাঁধের জলস্তরের উচ্চতা বাড়ানোর বিরুদ্ধে জল সত্যাগ্রহ সংগঠিত হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের গুনজারি, জুনাপানি এবং করনপুরা গ্রামে।