- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

মণিপুর মায়ানমার সীমান্তে হচ্ছেটা কী?

সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ১১ জুন#

ভারত মায়ানমার সীমান্ত।
ভারত মায়ানমার সীমান্ত।

মণিপুর মায়ানমার সীমান্ত ফের অশান্ত। আপাতদৃষ্টিতে ঘটনার সূত্রপাত ৪ জুন যখন নাগা সংগঠন এনএসসিএন (খাপলাং), কেওয়াইকেএল এবং কেসিপি — যারা মূলত মণিপুর উপত্যকার মৈতেই জনগোষ্ঠীর সংগঠন — তাদের একটি মিলিত সশস্ত্র দল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৬ ডোগরা রেজিমেন্ট-এর ওপর হামলা চালিয়ে ১৮ জন সৈন্যকে মেরে ফেলে। ওই সশস্ত্র দলটিরও ২ জন নিহত হয়। ঘটনাটি ঘটে চাণ্ডেল জেলায় পারাওলন গ্রামের কাছে। সংগঠনগুলি একটি প্রেস বিবৃতিতে দাবি করে, এই হামলা নাগা মৈতেই এই দুটি জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ ‘ভারতীয় উপনিবেশবাদ’ বিরোধী অভিযান এবং এই অভিযান এই দুটি সম্প্রদায়ের ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে।
এই হামলার পরদিনই সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল দলবীর সিং-এর নেতৃত্বে চাণ্ডেল জেলাকে ঘিরে ফেলে অভিযান চালাতে শুরু করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই জেলায় যে সীমান্ত, তার পাশেই মায়ানমার দেশের সাগায়িং ডিভিশন। এই অভিযানে জেলাটিকে সিল করে দেওয়া হয় এবং কোনো মিডিয়ার লোককে ওই জেলায় ঢুকতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের হাত থেকে জেলার ক্ষমতা চলে যায় সেনাবাহিনীর হাতে। মণিপুরের ২৩টি মানবাধিকার সংগঠনের জোট ‘সিভিল সোসাইটি কোয়ালিশন’ এই অভিযানের নিন্দা জানায় ৯ জুন একটি বিবৃতিতে, এবং মণিপুরের নির্বাচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো ভূমিকা ছাড়াই দিল্লি থেকে উড়ে আসা সেনাপ্রধানদের এই অভিযানের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ১৯৮৭ সালে সেনাপতি জেলার ঐনাম-এ সেনাবাহিনীর হাতে সাধারণ গ্রামবাসীর ব্যাপক অত্যাচারের ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কোয়ালিশন আজকের চাণ্ডেল অভিযানে কী কী ঘটছে, কত লোক ঘর বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে ইত্যাদি নিয়ে মণিপুর রাজ্যের পুলিশ প্রধানকে বিবৃতি দিতে বলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা-র কারণে মণিপুরে সেনাবাহিনী কার্যত যা খুশি তাই করতে পারে। হুয়েইয়েন লানপাও-এ ৯ জুন একটি রিপোর্টে জানা যায়, সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হতেই বহু মহিলা এবং যুবক চাণ্ডেল জেলা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সেনাবাহিনী ডুথাং, চালোং, পারাওলন এবং লিবুং গ্রামের স্কুল এবং কমিউনিটি হলগুলিকে আর্মি চৌকিতে পরিণত করে ফেলেছে। ওই এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পদাতিক বাহিনীকে মদত জোগাতে হেলিকপ্টার উড়ে বেড়াচ্ছে। সেনাবাহিনী সার্চ অপারেশন চালাচ্ছে। একদম সীমান্তের গ্রাম গামফাজল, ইয়াংগৌবুং, জালেনবুং, টিভংমল, চোজাং, টি খোনোজাং, লেইশেন, চালশান, তেংবৌপাল, জলদাম, ওল্ড চাংপোল, নিউ চাংপোল, মাওজাং গ্রামগুলিতে তল্লাশি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী — সশস্ত্র দলটির খোঁজে, যারা ৪ তারিখ হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে খবর।
অপরদিকে ৯ জুন সকালে মায়ানমার সীমান্তে ঢুকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল দুটি জঙ্গী শিবির ধ্বংস করেছে বলে দিল্লির মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে মায়ানমার সেনা সাহায্য করেছে বলেও জানানো হয়েছে। ভারত সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, ৪ জুন যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেকেই এই হামলায় মারা গেছে। কিন্তু নাগা সংগঠন এনএসসিএন (খাপলাং) দাবি করেছে, তাদের কেউ এই হামলায় মারা যায়নি এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী ইজ্জত বাঁচাতে মিথ্যে কথা বলছে। অপরদিকে মায়ানমার দেশটির সামরিক কর্তাদের তরফে একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, সেই দেশের সীমানার মধ্যে ঢুকে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। নিষিদ্ধ সংগঠন আরপিএফ এর তরফে একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, উরখুল জেলায় মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে তাদের একটি ক্যাম্পে হামলা চালাতে এসেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী, ৯ জুন ভোর সাতটায়। কিন্তু পাল্টা প্রতিরোধে তারা পালিয়ে গেছে তাদের গোলাবারুদ ফেলে রেখে।