- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ভোটার হলে ভালো, কিন্তু প্রার্থী হলে খারাপ

নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছিল, ভোট দিন, দেশ গড়ুন। হোর্ডিং পড়েছিল রাস্তায় রাস্তায়। টিভিতে বা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল। ইদানীং দেখছি, সরকারি বাস টার্মিনাসে, শিয়ালদার মতো বড়ো বড়ো রেলস্টেশনে সমস্ত মানুষকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তার সঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, দেশ গঠনের জন্য ভোট দিন, নিজের ভোট নিজে দিন। ওই বিজ্ঞাপনগুলির কোনো কোনোটাতে আবার বলে দেওয়া হচ্ছে, সচেতনভাবে ভোটটা দেওয়ার জন্য।
একথা ঠিক যে প্রতিবারের মতো এবারও অনেক জায়গাতেই ভোটের আগের রাতে টাকা-মদ-ঘড়ি দিয়ে ভোট ণ্ণকেনা’ হচ্ছে। কোথাও কোথাও ছাপ্পা ভোট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভোট দেওয়ার অধিকারটাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

জনগণ যাতে ভোট দেয় তার জন্য পার্টিগুলোর চেষ্টা রয়েছে। ণ্ণকাউকেই পছন্দ নয়’ বোতাম (নোটা বাটন) আমদানির পর বিজেপি নেতা আদবানি এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, এবার ভোটদান বাধ্যতামূলক করা হোক। অর্থাৎ ভোট না দিলে শাস্তি দেওয়া হোক জনগণকে। তা সে শাস্তি হোক অথবা না-হোক, যেভাবে বিজ্ঞাপনের প্রচার চলছে, তাতে মনে হচ্ছে হাতের আঙুলের ডগায় কালো ছাপটি না দেখাতে পারলে এমনিতেই মাথা কাটা যাবে, লজ্জায়।
যদিও তারই মধ্যেই ইতিউতি বিভিন্ন স্থানীয় দাবিদাওয়া অভাব-অভিযোগ নিয়ে সমবেতভাবে ভোট বয়কট, ভোটদানে বিরত থাকা প্রভৃতির কথাও শোনা যাচ্ছে। কেউ আবার বলেছে, নোটা বাটনে ভোট দিয়ে প্রতিবাদ জানাবে। তবু এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কাশ্মীরের কেন্দ্রগুলিতে ভোটের পরিমাণ ২৫ শতাংশ পেরোয়নি এবারও। মুম্বই সহ মহারাষ্ট্রে ভোট পঞ্চাশ শতাংশের এদিক ওদিকই ঘোরাফেরা করেছে।
তবে জনগণকে ভোট দেওয়ানোর জন্য চারপাশে যে অজস্র চাপ, জনগণকে ভোটে প্রার্থী হয়ে দাঁড়াতে কিন্তু কেউ বলছে না। বড়ো বড়ো পার্টি থেকে শুরু করে মিডিয়া — কেউই কিন্তু ভোট দেওয়ার মতো ভোটে দাঁড়ানোও যে সমান মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার ও দায়িত্ব — সেকথা জানাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনও এই নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে বলে শুনিনি। বরং এবার ভোটে দাঁড়ানোর জন্য জমা দিতে হচ্ছে পঁচিশ হাজার টাকা। জামানত জব্দ হলে সেই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না, তা বলাই বাহুল্য। শোনা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও প্রশাসন থেকে চাপ দেওয়াও হচ্ছে, নির্দল হিসেবে বা ছোটো দলের প্রার্থী হিসেবে ভোটে না দাঁড়ানোর জন্য। তাহলে ভোট দেওয়ার মতোই ভোটে দাঁড়ানোটা জনগণের অধিকার নয়? প্রতিনিধিত্ব করাটা কি মাতব্বরদেরই একচেটিয়া?