- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ভারতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভিমুখ শীর্ষক আলোচনা

শ্রীমান চক্রবর্তী, কলকাতা, ১৩ সেপ্টেম্বর#
ফ্রেন্ডস অফ ডেমোক্রেসি’র পক্ষ থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, কোলকাতার কলেজ স্কোয়ারে মহাবোধী সোসাইটির হলে বর্তমান ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভিমুখ নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বিশ্বের দুশ’টি দেশের মধ্যে একাদশতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির দেশ ভারতে প্রতি বছর পেটের অসুখেই কেবল মারা যায় ৮ লক্ষ শিশু। দেশের প্রসূতি মায়েদের মধ্যে ৬০% এবং তিন বছর পর্যন্ত ৭৪% শিশু অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার শিকার। বছরে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২১ লক্ষ যা মোট পৃথিবীর প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। আমাদের দেশের চিকিৎসায় খরচ মেটাতে প্রায় ৮৫% টাকাই রোগী নিজের পকেট থেকে বহন করে। সরকার ক্রমশ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য পরিষেবা ভিত্তিক ব্যবসাকে উৎসাহিত করে চলেছে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কীভাবে ধীরে ধীরে ব্যবসায়িকদের হাতে তুলে দিচ্ছে, সে বিষয়েই বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা করলেন ডাঃ হীরালাল কোনার, ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ, ডাঃ অর্ণব সেনগুপ্ত ও শ্রী ফণীভূষণ ভট্টাচার্য প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডাঃ সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়।

বক্তাদের মধ্যে প্রথমেই হীরালাল কোনার বলেন, ভারতে পাশ্চাত্য ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের সমস্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে। যে সমস্ত রোগে আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ আক্রান্ত হয়, তার অধিকাংশ নিয়েই আমাদের দেশে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কারণ আমাদের দেশের সম্পূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা পাশ্চাত্যের অনুরূপ। তাই যে যে বিষয়গুলি ওদেশে চর্চিত হয় সেগুলিকে ভিত্তি করেই আমাদের মূল চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। তাই ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া, ডাইরিয়া, শিশুদের অপুষ্টি জনিত রোগের মতো বিষয়গুলিতে বহু ক্ষেত্রেই পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। যেমন বছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব যখন বেশি হয় তখন বিশেষ কতগুলি ব্যবস্থা গ্রহণসহ কিছু স্থানিক সমস্যা নিরসনে পন্থা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে। মাতৃদুগ্ধই শিশুদের অপুষ্টি ও ভবিষ্যৎ রোগ প্রতিরোধের প্রধান প্রতিষেধক, এই তথ্য সরকার প্রচারিত গণমাধ্যম গুলিতেই উপেক্ষিত। সরকারি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনে নামি কোম্পানির বেবি ফুডের সম্প্রচারের মধ্যে দিয়ে আমরাই নিজেদেরকে ঠেলে দিচ্ছি অন্ধকারের দিকে। অনুষ্ঠানে ড্রাগ কোম্পানিগুলির সাথে চিকিৎসকদের একাংশের অনৈতিক যোগাযোগের সমালোচনা করা হয়। এ বিষয়ে ছোটো ছোটো সামাজিক উদ্যোগ গড়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির, হারিয়ে যেতে বসা দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিকে আরো বেশি করে ফিরিয়ে আনার কথাও বলা হয়।