- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ব্যাটারি-রিক্সার দাপটে রোজগারে টান, ‘বিদেশ খাটতে’ চলে যাচ্ছে কোচবিহারের রিকশাওয়ালারা

রামজীবন ভৌমিক, কোচবিহার, ১৬ নভেম্বর#

pa-risksaw

মোটরবাইকে সওয়ারি হয়ে জ্যামে আটকে পড়েছি ট্র্যাফিকের ভিড়ে। পাশের দাঁড়িয়ে আছে একটি ব্যাটারি চালিত টুকটুক অটো। দাদা, কোচবিহারের আপনাদের এই টুক অটোর সংখ্যা এখন কত? উত্তর এল, পাঁচশোর বেশি। অনেক ব্যাটারি চালিত অটোর পেছনে লেখা, দূষণহীন পক্ষীরাজ (ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার সময় যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে, সেটা যে কয়লা পুড়িয়ে, জলবিদ্যুৎ কিংবা পরমাণু বিদ্যুৎ থেকেই পাওয়া যায়, অর্থাৎ পরোক্ষে বিপুল পরিমাণ দূষণ তৈরি করেই পাওয়া যায়, তা হিসেবে না এনেই বলা হচ্ছে।) চড়লে সওয়ারির এমনটাই মনে হয় বুঝি। যাই হোক, মডেলারদের মতো স্লিম এই পক্ষীরাজে বেড়িয়ে এলাম। বিকেলে পথ চলতে চলতে এক বৈকালিক পথচারীকে বলতে শুনলাম, ‘টুক অটোতে কোচবিহারের রাজপথ ঘুরে সাজানো সাগরদীঘিতে এক চক্কর কাটলে মনে হবে, ট্রামে কলকাতা ভ্রমণ করে এলাম।’
উত্তরবঙ্গ জুড়ে কয়েক হাজার টুক অটো রাস্তায় নেমে পড়েছে। খানিক সো-ও-ও করে ছয় সাতজন যাত্রী নিয়ে দে ছুট। কোচবিহারে মাত্র দশ টাকায় শহরের এমাথা থেকে ওমাথা আপনাকে পৌঁছে দেবে। সময়ে হিট, টাকায় ফিট। সাইড সিন মুফতা। সব দিক থেকে ইকনমিক। রেজিস্ট্রেশন, ইনসুরেন্স, লাইসেন্স — এসব বিষয়ে সরকার বাহাদুর এখনো ভাববার সময় পায়নি। এর মধ্যেই শহরের অলিতে গলিতে ব্যাটারি চালিত অটোর পরিষেবা পৌঁছে যাচ্ছে। বিশেষত কোচবিহারের মতো শহরে যেখানে প্রায় সব রাস্তাই বেশ প্রশস্ত।
পায়ে টানা রিকশা এখন পুরো ভিলেন। কোচবিহারের গান্ধী কলোনির শিউলি দে বললেন, ‘কোচবিহারে রিকশায় চড়লেই ন্যুনতম পনেরো টাকা নেওয়া রেওয়াজ হয়ে উঠেছিল। দু-আড়াই কিলোমিটার পথ হলে পঞ্চাশ টাকা চেয়ে বসত। কী গা কচকচই না করত টাকাগুলো দিতে।’ সওয়ারির মাথায় সাক্ষাৎ ইন্দ্ররথ নেমে এসেছে আশীর্বাদ হিসেবে। আমিও এই সুখের শরিক।
কেন্দ্রীয় সরকার এরই মধ্যে এগুলোর জন্য কিছু বিধি তৈরি করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। সময়ের নির্দেশ কে আর উপেক্ষা করতে পারে। কিছুদিনের মধ্যেই জীবাশ্ম জ্বালানি সরাসরি পুড়িয়ে যে অটোগুলো চলছে, সেগুলোও উঠে যাবে আশা করা যায়।
কিন্তু হাজার হাজার প্যাডেল রিকশা চালক আর তাদের পরিবারের লাখো লোকের কাছে এই টুক অটোর চেহারাটা কেমন? রিক্সায় আসতে আসতেই প্রশ্ন করলাম রিকশাচালক আসলাম আলিকে, টুক অটো আসায় আপনাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে?
— হামার অসুবিধা মানে? খুব হচ্ছে। আগে দিলাং (প্রতিদিন) আড়াই তিনশো টাকা ইনকাম ছিল বান্দা। এনা একশো-দেড়শো টানা নামি আইসসে। হামার কথা কাউ ভাবে না।
একই প্রশ্ন অপর রিকশাচালক বিক্রম দাসকে করলাম, বললেন,
— পায়ে চালানো রিকশা শ্রমিকের প্রতি সরকারের কোনো দরদ নেই। আমরা কোচবিহারের ডিএম অফিসে দুইবার ডেপুটেশন দিলাম। ব্যাটারি রিকশা আর পায়ে টানা রিকশা — দুজনার সুষ্ঠ সমাধানের জন্য। তিনদিন রিকশা ধর্মঘট করলাম। কিন্তু সরকার দেখল না। কোনো পাট্টির নেতা আমাদের ভিতি (দিকে) দেখল না। এখন অনেক রিকশাওয়ালা রিকশা চালানো ছাড়ি বিদেশ (অন্য রাজ্যে) খাটতে যাইতেছে। আইজই (১৩ নভেম্বর ২০১৪) ২৫ জন রিকশাওয়ালা ছাওয়া পাওয়া ধরি (সন্তানসহ) দিল্লি গেল চলি। মোরও যাওয়ার লাইগব।