- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়েছিল যে মেয়েটি

অরুণ পাল, বালি, হাওড়া, ২৯ আগস্ট#

আমাদের সামনে রয়েছে দুই আমেরিকার দুই বিপরীত ছবি। এক আমেরিকা তেলের লোভে সেনা পাঠিয়ে ইরাক দখল করে। আর এক আমেরিকা ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে বড়ো বড়ো শহরে লাখো লাখো মানুষের মিছিলে আওয়াজ তোলে, ‘ইরাক যুদ্ধ বন্ধ করো’। র‍্যাচেল কোরি এই দ্বিতীয় আমেরিকার মেয়ে।
প্যালেস্টাইনের জনগণের নিজেদের রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে ইজরায়েলের সরকারের বিরুদ্ধে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের লড়াই দীর্ঘদিনের। তবে পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির মদতপুষ্ট ইজরায়েল সরকারের তাতে কিছু এসে যায় না। তারা সামরিক শক্তির বলে প্যালেস্টাইনের মানুষের নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের লড়াইকে দমিয়ে রেখেছে। তেইশ বছরের আমেরিকান ছাত্রী র‍্যাচেল কোরি ছুটে গিয়েছিলেন প্যালেস্টাইনের গাজা স্ট্রীপে সেখানকার জনগণের লড়াইয়ের পাশে। র‍্যাচেল হাতে অস্ত্র তুলে নেননি। তিনি নির্ভয়ে অটল পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন ইজরায়েলি বুলডোজারের সামনে।
সেটা ছিল ২০০৩ সালের মার্চ মাসের ঘটনা। প্যালেস্টাইনবাসীর দ্বিতীয় ‘ইন্তিফাদা’ তখন এক শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছে। ইজরায়েলের শাসকদের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনবাসীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নাম ইন্তিফাদা। এই আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ইজরায়েলি সরকার গাজা স্ট্রীপে প্যালেস্টাইনবাসীদের বাড়িগুলি একের পর এক ভেঙে দিচ্ছিল এক প্রতিশোধমূলক মানসিকতা নিয়ে। বিশ্ব মানবতা রক্ষার এক বৃহত্তর তাগিদে রাচেল বুক ভরা সাহস নিয়ে সেই বুলডোজারের সামনে দাঁড়ালেন। তাঁর পরনে ছিল কমলা রঙের পোশাক। বুলডোজার পিষে দিল তাঁর শরীর। রচিত হল প্যালেস্টাইন আন্দোলনের এক আন্তর্জাতিক ইতিহাস।
র‍্যাচেলকে নিয়ে লেখা নাটক বিশ্বের দশটি দেশে অভিনীত হয়েছে, বই লেখা হয়েছে, তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। প্যালেস্টাইন আন্দোলনের সাহায্যকারী একটি জাহাজের নাম রাখা হয়েছে ‘র‍্যাচেল’। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ইজরায়েলের আদালতে ইজরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে একটি হত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছিল। দীর্ঘ নয় বছর মামলা চলার পর গত ২৮ আগস্ট ২০১২ বিচারক প্রত্যাশিতভাবেই রায় দিয়েছেন, র‍্যাচেলের মৃত্যুর জন্য ইজরায়েলি সরকার কোনোভাবেই দায়ী নয়। ভিড়ে ঠাসা আদালতকক্ষে দীর্ঘ রায়ে বিচারক র‍্যাচেলের মৃত্যুকে একটা দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। সেদিনের রায় ঘোষণার পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে র‍্যাচেলের পরিবারের আইনজীবী হুসেন আবু হুসেন আবেগদৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, ‘সারা বিশ্বের মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীদের কাছে আজকের দিনটা একটা কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত থাকবে।’