- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বিশিষ্ট লালন গবেষিকা তৃপ্তি ব্রহ্ম নিঃশব্দে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন

সঞ্জয় ঘোষ, জয়নগর, ৩০ জুলাই##

লালন গবেষিকা তৃপ্তি ব্রহ্ম নিঃশব্দে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। গত ২৫ জুলাই কলকাতার বেলেঘাটার কবি সুকান্ত সরণির অস্থায়ী আবাসে কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর তিনি মারা যান। পিতা শৈলেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম এবং মা কমলা ব্রহ্ম-র পাঁচ মেয়ে তিন ছেলের মধ্যে বড়ো মেয়ে তৃপ্তির জন্ম ১৯৩৭ সালের ৬ জুলাই, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার দক্ষিণ বারাসাতের একটি গ্রামে। সেসময় দক্ষিণ বারাসাত অঞ্চলে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল থাকায় তিনি ১২ বছর বয়স থেকে জয়নগর বালিকা বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি স্কুল ফাইনাল পাশ করেন। পরে বালিগঞ্জে মুরলিধর গার্লস কলেজ থেকে স্নাতক হন। জীবনের বহু চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে পড়ে চাকুরিরত অবস্থায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে বিএ এমএ পাশ করেন এবং বিনা গাইডে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলার লৌকিক ধর্ম সংগীত নিয়ে পিএইচডি লাভ করেন। চাকুরি জীবনে ২৯ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ বিভাগে কাজ করেন। এর আগে তিনি বাঁকুড়ায় ৬ বছর স্কুলে পড়িয়েছেন। পরবর্তীকালে তিনি দক্ষিণ বারাসাত কলেজে প্রায় ৬ বছর অতিথি অধ্যাপক হিসাবে শিক্ষাদান করেন। মূলত লালন ও লোকসংস্কৃতির ওপরে গবেষণা করলেও আবৃত্তি, কবিতা, প্রবন্ধ রচনা, ছোটো গল্প, কবিতা, রম্য রচনা, ছড়া এসব বিষয়ে তাঁর অনায়াস দক্ষতা ছিল। সব মিলিয়ে তাঁর লিখিত এবং সম্পাদিত পুস্তকের সংখ্যা প্রায় ৫৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ণ্ণলোকজীবনে বাংলার লৌকিক ধর্ম সংগীত ও ধর্মীয় মেলা’। এই বইটিতে তিনি পিএইচডি লাভ করেন। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ণ্ণবাংলার ইসলামি সংস্কৃতি’, ণ্ণঅমর একুশে’, ণ্ণবাংলাদেশের সংস্কৃতি ঐতিহ্য এবং মহম্মদ মসুরুদ্দিন’। ছয় খণ্ডে লালন পরিক্রমা’ তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। এছাড়া ণ্ণলালন নাটক’, ণ্ণমরমী ব্যক্তিত্ব লালন ফকির’, তাঁর সম্পাদিত প্রবন্ধ সংকলন উল্লেখযোগ্য। তাঁর লেখা ইংরেজি গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল Lalan, his Melodies, The Faith of Love, তাঁর লিখিত আরেকটি গ্রন্থ হল, ণ্ণভারতীয় সাহিত্য সংস্কৃতিতে নভেম্বর বিপ্লবের প্রভাব’।
বাংলাদেশের বহু সম্মান তিনি পেয়েছেন এবং প্রায় ৪০-৪৫ বার তিনি বাংলাদেশে গেছেন লালন ও লোকসংস্কৃতি সম্পর্কিত গবেষণার প্রয়োজনে এবং বিভিন্ন সংস্থার থেকে পেয়েছেন বহু সম্মান। কুষ্ঠিয়ার শেহরিয়ার যে লালন অ্যাকাডেমি ছিল, তিনি তার আজীবন সদস্যা ছিলেন। তবে নিজ ভূমি পশ্চিমবঙ্গে তাঁর কাজ বিশেষ কোনো সমাদর পায়নি বলে তাঁর মনে ক্ষোভ ছিল।