মনোজ পাণ্ডে, হিমালয় সেবা সঙ্ঘ, উত্তরকাশী, ১২ জুলাই#

উত্তরাখণ্ডে প্রতি বছরই ভূমিধ্বসে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। অন্যান্য বছর শ্রমিকরা মারা যায়, গ্রামবাসী মারা যায়, তাই খবর হয় না। কিন্তু এবার প্রচুর তীর্থযাত্রী মারা গেছে, যারা মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের। তাই জন্য চারদিকে শোরগোল পড়ে গেছে।
ত্রাণের কাজের মধ্যেই পড়ে উদ্ধারকার্য। সেটা চলছে। সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী এবং গ্রামবাসীদের সহায়তায় এই কাজটি চলছে, প্রায় শেষও হয়ে এসেছে। এখন চলছে আশু ত্রাণের কাজ। তাতে ওষুধপত্র এবং মূলত স্বাস্থ্যকর্মী লাগছে। তাই এখন যারা একটু দূরে (যেমন পশ্চিমবঙ্গে) ত্রাণ সংগ্রহ করছে উত্তরাখণ্ডের মানুষদের জন্য, তারা টাকা পয়সা সংগ্রহ করতে পারেন কেবলমাত্র। কারণ এতদূর থেকে অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী এখানে আনা ও বিতরণ করা খরচসাপেক্ষ। তাছাড়া এখনও বহু গ্রামেই কোনও গাড়ি যাচ্ছে না। ফলে ত্রাণ পাঠানোও যাচ্ছে না।
আমরা হিমালয় সেবা সংঘ-র তরফে একটি বা দুটি গ্রামে দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠনের কাজ হাতে নিতে চলেছি। যেভাবে ভূমিধ্বস নেমেছে, তাতে সেই ধ্বস পরিষ্কার করা, আবার যাতে ধ্বস না নামে তার জন্য ঝোপ জাতীয় গাছ লাগানো (কারণ বড়ো গাছ ভূমিধ্বস আটকাতে পারে না) প্রভৃতি কাজ। এছাড়া যেসব বাড়ি ভেঙে পড়েছে, সেখানে ঐতিহ্যবাহী প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলি পুনর্গঠন করা দরকার। কংক্রিটের বাড়ির কারণে ভূমিধ্বসের ফলে মানুষের মৃত্যু ও দুর্ভোগ বেশি হয়।
উত্তর-পূর্ব ভারতেও এইরকম দুর্যোগ হতে পারে। আমি দার্জিলিং বা তার আশেপাশে দেখেছি, এই ধরণের ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদীভাবে সরকারের নীতিগত কিছু দিকের বিরুদ্ধেও আমরা জনমত গড়ে তুলব, সেটা এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অঙ্গ। যেমন, প্রথমত নদীতে বাঁধ নির্মাণ; দ্বিতীয়ত বড়ো বড়ো কংক্রিটের বাড়ি নির্মাণ; তৃতীয়ত ধর্মীয় ট্যুরিজম। ধর্মীয় ট্যুরিজমে আসে মধ্যবিত্ত উচ্চমধ্যবিত্ত ট্যুরিস্টরা। স্থানীয় মানুষের তাদের খিদমৎ খাটে মাত্র। ট্যুরিস্টদের থাকা খাওয়া প্রভৃতি নিয়ে ব্যবসা করে চলে যায় বাইরের বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীরা। আর এই ধরণের ধর্মীয় পর্যটনের মধ্যে দিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীদেরও বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। এগুলোও আমাদের প্রচারসূচীতে থাকবে।
আপনারা যদি আমাদের এই দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠন প্রকল্পে অংশীদার হন, তাহলে আমরা খুবই খুশি হব।