- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি তেলের ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনা বাংলাদেশের নদীপথে, বিপন্ন শুশুক-ম্যানগ্রোভ সহ সুন্দরবনের জীবন

সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ১১ ডিসেম্বর#

 

মৌগিজ এলিজাবেথ রুবাইয়াত-এর ছবিতে আন্ধারমাণিক নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল। ছবিসূত্র ফেসবুক।
মৌগিজ এলিজাবেথ রুবাইয়াত-এর ছবিতে আন্ধারমাণিক নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল। ছবিসূত্র ফেসবুক।

বাংলাদেশের অন্তর্গত সুন্দরবনের শেলা নদীতে ডুবে গেছে সাড়ে তিন লাখ লিটার জ্বালানি তেল সমেত একটি ট্যাংকার, নাম ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’। ৮ ডিসেম্বর সোমবার রাতে রাতে জাহাজটি চাঁদপাই রেঞ্জের জয়মনি ঘোলের কাছে শেলা নদীতে নোঙর করে ছিল। ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ ঘন কুয়াশার মধ্যে আবার চলতে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যে ‘টোটাল’ নামের একটি খালি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ট্যাঙ্কারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সাউদার্ন স্টারের একপাশের খোল ফেটে যায় এবং ডুবে যায়। একজন জাহাজ কর্মী মাস্টার মোখলেস নিখোঁজ হন। দুর্ঘটনার পর ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়েছে।
গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে সোমবার বিকালে রওনা হয়েছিল ট্যাঙ্কার জাহাজটি। অন্যদিকে টোটাল জাহাজটি মংলা বন্দরে মাল খালাসের পর চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল।
ঘটনার পরপরই নিখোঁজ ব্যক্তিকে খোঁজা শুরু হয়েছে। কিন্তু তেল ছড়িয়ে পড়া কীভাবে আটকানো যায়, তা নিয়ে সরকারি তরফে ব্যবস্থা নিতে টালবাহানা চলছে। জাহাজ মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, জাহাজ থেকে কেমিক্যাল ছড়িয়ে দেওয়া হবে নদীতে, যাতে তেল সরে যায় এবং জলের অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দিতে না পারে। নৌবাহিনীর তরফে বলা হয়েছে, বাঁশ ও কলাগাছ দিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে নদীর তেল নিষ্কাশনের চেষ্টা করা হবে। সরকার থেকে ওই প্রাইভেট জাহাজগুলিকে ১০০ কোটি বাংলাদেশি টাকা (৮১ কোটি ভারতীয় টাকা) ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে বাংলাদেশ সরকার। ১১ ডিসেম্বর জাহাজটি খুঁজে পাওয়া গেছে।
এদিকে তেল ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে সুন্দরবনের অন্যান্য এলাকায়। ওই দিন সন্ধ্যের মধ্যেই তেল জয়মণি, নন্দবালা, আন্ধারমানিক, মৃগমারি সহ সুন্দরবনের ২০ বর্গ কিমি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর। তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকাটি সরকার ঘোষিত ডলফিনের (সুন্দরবনের শুশুক) অভয়ারণ্য। তেল জমে জলের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের সঙ্গে সঙ্গে ওই শুশুকগুলোও মারা পড়বে।

table
টেবিলটি কল্লোল মুস্তাফা-র ফেসবুক পেজ থেকে পাওয়া।

ঘাসিয়াখালি চ্যানেল (ভারত-বাংলাদেশ জলপথ করিডর) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালে, মংলার নালা নদী এবং রামপাল-এর কুমার নদী বুঁজে যাওয়ার পর। তখন থেকে এই শেলা নদী ব্যবহার করা হচ্ছিল নৌপথ মাল পরিবহণের জন্য। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মধ্যের এই জলপথটি দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ তথা জলপথ পরিবহণ পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পরিবেশপ্রেমীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। সরকারের বনদপ্তর ২০১১ সালেই বারণ করেছিল, কিন্তু তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। ৩০ সেপ্টেম্বর একটি সিমেন্ট কারখানার কাঁচামাল নিয়ে আসা একটি জাহাজ ডুবে গেছিল এই জলপথেই। তার এক পক্ষ আগে আরেকটি মালবাহী জাহাজ ডুবি হয় এখানে। ওই দুটি জাহাজ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার সুন্দরবনের গুরুত্ব সম্পর্কে নির্লিপ্ত থেকে তার সুরক্ষার পরিবর্তে এর ভেতর দিয়ে বড় নৌযান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এই দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, বাংলাদেশের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ হলেও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন কতটা অরক্ষিত এবং এর কাছ দিয়ে তেল, কয়লা বা বিষাক্ত বর্জ্য পরিবহন কতটা বিপজ্জনক।
পরিবেশপ্রেমীরা অবিলম্বে এই জলপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা এবং সুন্দরবনের উপকূলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র গঠন না করার দাবি তুলেছে। কারণ রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গঠন হলে সুন্দরবনের জলপথ দিয়েই তার জন্য জ্বালানি পরিবহণ করতে হবে।