- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বিদেশি বিনিয়োগে বাণিজ্যিক চাষ মেক্সিকানদের খাদ্যাভ্যাস বদলে দিচ্ছে

সুকুমার হোড় রায়, কলকাতা, ২৫ মে#

কৃষিতে বিদেশি পুঁজির অনুপ্রবেশ ও খুচরো ব্যবসায় বিনিয়োগ শুধু কৃষি ব্যবস্থা, কৃষি অর্থনীতি, কৃষিজমির মালিকানার পরিবর্তন ঘটিয়ে এবং কেবল সেই দেশ বা আভ্যন্তরীণ বাজার দখল করে থেমে থাকে না, সেই দেশের মানুষের খাদ্যাভাসেরও পরিবর্তন ঘটিয়ে দিতে পারে। লাতিন আমেরিকান দেশ মেক্সিকো হল তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোর অধিবাসীরা কানাডার বাসিন্দাদের তুলনায় মাথা পিছু বেশি খাদ্য গ্রহণ করত। কিন্তু ১৯৮৬ সালের পর থেকে চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে যায়। মেক্সিকানদের খাদ্যাভাস এবং খাদ্য গ্রহণের উপাদানও পরিবর্তিত হয়ে যায়। আগে তারা শাক-সবজি, ফল খেত বেশি। এখন তার পরিবর্তে বেশি বেশি করে মাংস খাচ্ছে। মেক্সিকোর ওটেরো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইমন ফারসেরের বক্তব্য, অনেক দেশে ২০০৯ সালের পর থেকে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন ঘটেছে। লোকে দুধ ও মাংস নির্ভর হয়ে গেছে।
কানাডায় উৎপাদিত কানোলা তেল ভাজা ও ফাস্ট ফুড খাওয়ার জন্য মেক্সিকোতে সবচেয়ে বেশি আমদানী হয়। এতে মেদ বাড়ে ও লোকে মোটা হয়ে যায়। মেক্সিকানরা তাদের চিরাচরিত খাবার টাকোস ও জামাইকা ফলের রস পান করা ত্যাগ করে। তার পরিবর্তে হামবার্গার ও পেপসি পান করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। আর এই ভাবে খাদ্যাভাস বদলে যাওয়ার দরুন মোটা হওয়া ও মেদ বৃদ্ধিতে মেক্সিকো বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম দেশ হিসাবে গণ্য। তা মেক্সিকানদের ডায়বেটিসে আক্রান্ত হবার অন্যতম কারণও বটে। এই কারণে মেক্সিকোতে শিশুর জন্ম দেবার পর হাসপাতালে মারা যাওয়ার সংখ্যাও বেশি।
১৯৯৪ সালে নর্থ আমেরিকান ফ্রি-ট্রেড এগ্রিমেন্ট ন্যাফটা সংস্থার সাথে মেক্সিকো সরকারের চুক্তির পর থেকে ন্যাফটা কৃষি বাণিজ্যে অগ্রাধিকারের সুবিধা আদায় করেছে। তার পরিণতিতে মেক্সিকোর ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা তাদের কৃষিজমি থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে কৃষিকাজ পরিত্যাগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা মেক্সিকোর শহরগুলিতে, খনিতে তারা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
মেক্সিকোর খনিগুলির বেশিরভাগ মালিকানা বিদেশিদের, তার মধ্যে অধিকাংশ খনির মালিক হল কানাডার কোম্পানিগুলি। ন্যাফটা মেক্সিকোর ভূমি আইনের পরিবর্তন ঘটিয়ে, নুতন ভূমি আইন বানিয়ে সরকারি বা সমষ্টি মালিকানাধীন কৃষিজমিকে বেসরকারিকরণ করে দিয়েছে। মেক্সিকোর বেশির ভাগ কৃষকই ৫ হেক্টর প্লটের কৃষিজমির মালিক ছিল। তারা সরকারি ঋণে, সার ও বীজের জন্য পাওয়া সরকারি সাহায্যের দৌলতে বছরে ৭৮ থেকে ১০২ ডলার পর্যন্ত উপার্জন করত। মেক্সিকোর ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের বর্তমানে এক কিলো ধান বা গম ইত্যাদি উৎপাদন করতে ৩.৭২ ডলার ব্যয় হয়, সেখানে বাণিজ্যিক কৃষিখামারগুলির উৎপাদন-ব্যয় হল ১.৬৭ ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার এই কৃষিবাণিজ্য কোম্পানিগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠা সম্ভব নয় বলে কৃষকরা ধান ও গম, ভুট্টা, বীন ইত্যাদি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।