- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বায়ু দূষণে ফুসফুসের ক্যানসার বাড়ছে কলকাতায়, সমাধান নিরাপদে সাইকেল চালানোর বন্দোবস্ত

কলকাতা শহরের পরিবহণ নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কথোপকথনের মধ্যে ডা. সুস্মিতা রায় চৌধুরি এই কথাগুলি বলেন, ২ ডিসেম্বর#

India_traffic

আমি একজন বক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং শ্বাস বিশেষজ্ঞ হিসেবে বায়ু দূষণ নিয়ে খুবই চিন্তিত। গত সপ্তাহে আমি পাঁচখানা পেশেন্ট দেখেছি, যারা নিজেরা কক্ষনো ধূমপান করেনি, যাদের আশেপাশের কেউ কক্ষনো ধূমপান করেনি, কিন্তু তাদের ফুসফুসের ক্যানসার হয়েছে। এবং তাও হয়েছে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সে। যেটা সবথেকে প্রডাকটিভ বয়স। এটা কিসের জন্য হচ্ছে? অক্টোবর মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, ইন্ডিয়ান ক্যানসার রিসার্চ বলে। যেখানে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছিল, ঘরের বাইরের বায়ু দূষণকে সরাসরি ক্যানসার সৃষ্টিকারী।
আগে বলা হত, দিল্লি ফুসফুসের ক্যানসারের রাজধানী। প্রতি লাখে ১৫ জনের ফুসফুসের ক্যানসার। এখন দেখা যাচ্ছে, কলকাতা দিল্লিকে ছাপিয়ে গেছে। প্রতি লাখে ১৮ জন। এটা চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের তথ্য। এবং এমন একটা স্টেজ-এ এই ধরণের রোগীরা আসেন, যেখানে রোগীদের আমরা সারাতে পারি না, কেবল কিছুদিনের জন্য সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করতে পারি।
আমি ইংলন্ডে একটা ক্যানসার ইন্সটিটিউটে আট বছর কাজ করেছি। সেখানে দেখেছি, অ্যাসবেসটসের কারণে ক্যানসার। আমরা দেখতাম, অ্যাসবেসটসের সাথে সংশ্লিষ্ঠ থাকার ২৫-৩০ বছর পরে এই ক্যানসারগুলো হতো। আমরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য সবকিছু ভালো জিনিস দিতে চাই, ওদের ভালো লাইফ স্টাইল দিতে চাই। কিন্তু আপনারা জানেন কি আমরা ওদের কত দূষণ দিচ্ছি? সকালে যখন বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার জন্য রাস্তার ধারে দাঁড়ায়, তখন ধোঁয়াশার থেকে তাদের নাকে ঢুকছে ভাসমান কণা। অ্যাজমা হচ্ছে। চোদ্দ পনেরো বছরের বাচ্চাদের এতটা অ্যাজমা আমরা আগে কখনও দেখিনি। কেন চোদ্দ পনেরো বছরের বাচ্চাদের আমাকে ইনহেলার দিতে হবে? এদের বয়স যখন ২৫-৩০ হবে, তখন এরা সবাই ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস-এ ভুগতে থাকবে।
আমরা এখানে যারা বসে আছি, তাদের বেশিরভাগই সকালে উঠে সর্দি কাশিতে ভুগি। গলার কাছে দলা পেকে থাকে কফ। এটাও বায়ু দূষণের জন্য। হাজার হাজার পেশেন্ট আমার কাছে আসে, বলে যে আমরা যখন রাজস্থান বা গোয়া বেড়াতে যাই, অনেক ভালো থাকি। যেই কলকাতায় ফিরে আসি, সমস্যা শুরু হয়।
আমরা যখন সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরে যাই, একটা সাদা কাপড় নিয়ে মুখে লাগালে দেখব, কালো রঙ বেরোচ্ছে। আমরা এতে শুধু ত্বকে কী লাগল সেটা পাচ্ছি। আর সারাদিন ধরে এই কেমিক্যালগুলো, যার মধ্যে ক্যানসারের বীজ আছে, ফুসফুস ধ্বংসের উপাদান আছে, তা আমরা সারাদিন ধরে নাকের মধ্যে নিচ্ছি। এবং তাও আমরা করছি সাইকেলের মতো পরিবেশবান্ধব যান বাতিল করে।
ক’জন গরীব লোক আসে বলুন তো হার্টের অসুখ নিয়ে, মোটা হওয়া জনিত অসুখ নিয়ে? এগুলো সব উন্নত এলাকার মানুষেরা, যারা এক্সারসাইজ করে না। সাইক্লিং হলো এক্সারসাইজের সবথেকে ভালো রূপ। কতগুলো অসুখ থেকে এর মাধ্যমে দূরে থাকা যায়। আমরা যখন ছোটো ছিলাম, সকলে সাইকেল চালাতাম। আমরা কিন্তু আমাদের বাচ্চাদের তা সেখাতে পারছি না। আমরা ভাবছি, ওটা নিরাপদ নয়।
আমরা ভাবছি যত তাড়াতাড়ি ট্রাফিক সমস্যাটা সমাধান হয়ে যায়। আজ থেকে তিরিশ বছর পর কী হবে সেটা কি আমরা ভাবছি? আমরা পয়সা দিয়ে ট্রেড মিল করতে যাই। কিন্তু সাইকেল চালানোর মতো একটা নিরাপদ রাস্তা আমরা বানাতে পারছি না। এটা কিন্তু উন্নতি নয়। এটা পেছন দিকে হাঁটার সামিল। অদূরদৃষ্টি। এতে আশু সমস্যার সমাধান হয়ত হবে, কিন্তু আগামী দিনে সমস্যা বাড়বে। একটা অস্বাস্থ্যকর সমাজ তৈরি করার ব্যবস্থা করব।