- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বাস, ট্রেনের ভাড়াবৃদ্ধির বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ ব্রাজিলে, সরকারের নতিস্বীকার

কুশল বসু, কলকাতা, ২৯ জুন, তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া। ছবিতে ‘নিখরচায় গণপরিবহণ’ পোস্টার#

im

বাস, ট্রেন, মেট্রোর মতো গণপরিবহণের ভাড়াবৃদ্ধির বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের সাক্ষী রইল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। সাও পাওলো শহরের মেয়র অনেকদিন আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ১ জুন থেকে বাড়তে চলেছে বাসের ভাড়া। কিন্তু সেই ঘোষণা ভালোভাবে নেয়নি বাসভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ‘মুভমিনতো পাসে লিভ্র’ সংগঠন, যারা নিখরচায় গণপরিবহণের দাবি করে আসছে অনেকদিন ধরে।
কিন্তু ১ জুন থেকে বাসভাড়া বেড়ে যাওয়ার (৬ শতাংশের মতো) পর থেকেই জনবিক্ষোভ শুরু হয় সাও পাওলো সহ ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি শহরে। প্রথম বড়ো প্রতিবাদ হয় ৬ জুন পলিস্তা অ্যাভেনিউতে। ১৩ জুন পুলিশ ওই বিক্ষোভের ওপর রাবার বুলেট নিয়ে চড়াও হতেই আন্দোলন ছড়িয়ে পরে ব্রাজিলের অন্যান্য শহরে। সবচেয়ে বড়ো বিক্ষোভ হয় ১৭-১৮ জুন। রিও ডি জেনেইরোতে সবচেয়ে বড়ো বিক্ষোভে এক লক্ষ মানুষ শরিক হয়। স্থানীয় প্রশাসন ওই বিক্ষোভের ওপর চড়াও হতে অস্বীকার করে। ২১ থেকে ২৩ জুনের মধ্যে ব্রাজিলে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো জমায়েত দেখা যায়। বাসসহ সমস্ত গণপরিবহণের ভাড়াবৃদ্ধি বাতিল করা ছাড়াও বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে উঠে আসে দুর্নীতির তদন্ত থেকে রাজনীতিকদের ছাড় দিতে চাওয়া একটি প্রস্তাবিত আইনের বিলোপ, জ্বালানি তেল রপ্তানি করে যে আয় হয় তার বেশিরভাগ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার। বিক্ষোভে শিক্ষিত সাদা চামড়ার যুবকদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
জুন মাসের শেষের দিকে সরকার বিক্ষোভকারীদের একের পর এক দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। বাস ট্রেন মেট্রো ভাড়াবৃদ্ধি প্রত্যাহারের ঘোষণা করে বিভিন্ন শহরের মেয়র। ভাড়ার ওপর সরকারি কর সম্পূর্ণ মকুব করা হয়। জ্বালানি তেল বেচে হওয়া আয়ের তিনের চার ভাগ শিক্ষা ও বাকিটা স্বাস্থ্য খাতে খরচের ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি তদন্তের ছাড় দিতে চাওয়ার প্রস্তাবিত আইনটি বাতিল করা হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ সংস্কার না হলেও সাংবিধানিক সংস্কার গণভোটে ফেলার কথা ঘোষণা করে সরকার।
ব্রাজিলের এই জনবিক্ষোভ যখন চলছে, তখন ব্রাজিলে চলছে ফুটবলের এক মহাযজ্ঞ, কনফেডারেশন কাপ। কিন্তু ফুটবলে না মেতে ব্রাজিলবাসীরা মেতেছে বিক্ষোভে। এবারের কনফেডারেশন কাপ, পরের বছরের ফুটবল বিশ্বকাপ এবং তার দু-বছর পরে অলিম্পিকের আসর বসতে চলেছে ব্রাজিলে এবং এসবের জন্য খরচ হচ্ছে বহু অর্থ। বিক্ষোভকারীরা আওয়াজ তোলে, দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এইসব খেলার মহাযজ্ঞ, নাকি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ?