- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বাজার-রাজনীতির উৎস : দল চলে কর্পোরেটের চাঁদায়

সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, কলকাতা, ৩০ সেপ্টেম্বর#

সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েসন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস্‌ তথ্য অধিকার আইন মারফত নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আয় ও সম্পদের পরিমাণ ও উৎস জানতে পেরেছে। সেগুলি তারা প্রকাশ করেছে ১০ সেপ্টেম্বর। তার তথ্য পাওয়া যাবে এখানে, http://adrindia.org/sites/default/files/Report donations.pdf
দলগুলির আয়ের উৎস কী, তা খতিয়ে দেখার সুযোগ নেই। তাই তারা যা জানিয়েছে কমিশনকে এবং যে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছে কমিশনে, তার ভিত্তিতেই এসব জানা যাচ্ছে।
কংগ্রেস সবচেয়ে বড়োলোক দল, ২০১০-১১ সালে তাদের আয় ৩০৭ কোটি টাকা। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির আয় প্রায় এর অর্ধেক (১৬৮ কোটি), তারপর আছে বিএসপি (১১৫ কোটি)। যাই হোক, কংগ্রেসের দাবি, এই আয়ের ৮৫ শতাংশই এসেছে কুপন বিক্রি করে। একইরকম দাবি এনসিপি দলেরও। অর্থাৎ কে ভালোবেসে ক-টা কুপন কিনল, তা জানানোর দায় তাদের নেই। বাকি চোদ্দ শতাংশ ডোনেশনের আয়। বিজেপি অবশ্য এই লুকোছাপা করেনি। তারা জানিয়েছে, তাদের আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে ডোনেশন থেকে। বিএসপি, এসপি, সিপিআই, সিপিএম দলগুলির আয়ের কমবেশি অর্ধেক ডোনেশন থেকে। এআইএডিএমকে, ডিএমকে, জেডিইউ, আরজেডি, তৃণমূল, শিবসেনা, লোকজনশক্তি দলগুলির অর্ধেকের অনেক বেশি ডোনেশন থেকে আয়। তবে কর্পোরেট ডোনেশন পাওয়ার ব্যাপারে দুই বড়ো পার্টি, কংগ্রেস এবং বিজেপি অনেক এগিয়ে। অবশ্যই, বিজেপির থেকেও অনেক এগিয়ে কংগ্রেস।
এই ডোনেশন দাতাদের মধ্যে আছে, আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর জেনারেল ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট, টোরেন্ট পাওয়ার গোষ্ঠী (১৯৯৭ সালে আমেদাবাদের বিদ্যুৎ নিগমে গুজরাট সরকারের ৩০ শতাংশের মতো শেয়ারের পুরোটা বাগিয়ে নিয়েই এই নয়া কর্পোরেটের উত্থান শুরু। খাতায় কলমে দেশি এই কর্পোরেটের প্রাথমিক পুঁজির প্রায় পুরোটাই মার্কিন দেশের এক লগ্নিসংস্থা, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের), ভারতী-র ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট (এদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে ওয়ালমার্ট অনেকদিন ধরেই ভারতের হোলসেলিং বাজারে ঢুকে পড়েছে), টাটা গোষ্ঠী, মিত্তাল গোষ্ঠীর ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট, বেদান্ত-স্টারলাইট গোষ্ঠী (আদিবাসী ভূমিতে বক্সাইট মাইনের কারণে কুখ্যাত), আইটিসি, আদানি গোষ্ঠী, জিন্দাল স্টিল, ভিডিওকন, এশিয়ানেট টিভি, অম্বুজা সিমেন্ট, মাহিন্দ্রা, এসইডবলু, লারসেন টুবরো, ভারত ফোর্জ, রোহন প্রোমোটার, কেএসকে এনার্জি, হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন, ক্রম্পটন গ্রিভস, ডেম্পো, সালগাওকর, ইউনাইটেড ফসফরাস, বালাজি অটো, কল্যাণী গ্রুপ, এসার, ডিসম্যান ফার্মাসি, ইনফিনা ফাইনান্স, মুন্দ্রা পোর্ট সেজ, বল্লারপুর ইন্ডাস্ট্রিজ, শ’ ওয়ালেশ, ক্যাডিলা, ভারত হোটেল, স্কাই অ্যাপ্লায়েন্স, বাজাজ অটো, নিপ্পন, জেপি ভেঞ্চার, কোটাক মাহীন্দ্রা প্রভৃতি। এর মধ্যে বেশিরভাগই একাধিক পার্টিকে ডোনেশন দেয়। বোঝাই যায়, সরকারি-বিরোধী রাজনীতিকে নিজেদের ব্যবসায়িক কাজে লাগানোর জন্যই এত তোড়জোড়।
এই তথ্য অধিকার আইনে আরও কিছু তথ্য পাওয়ার জন্য দলগুলিকে গত সপ্তাহে শুনানিতে ডেকেছিল কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন। এনসিপি এবং সিপিআই ছাড়া কেউ তাতে হাজির হয়নি।