- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বাইপাসে দোকানহারা হকারদের ওপর পুলিশি জুলুম, লাগাতার প্রতিবাদ

পূর্ব কলকাতার উপকন্ঠে পাটুলি-বাঘাযতীন বাইপাসের ধারে হকাররা, তাদের হকারির অধিকারের দাবি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পাটুলি থেকে রুবি অবধি রাস্তা চওড়া করার জন্য দু’পাশে যে ছোটো ঝুপড়ির দোকান বাজার বসত তা ভেঙে দেয় কেএমডিএ। তারপর থেকেই উচ্ছেদ হওয়া হকাররা নিয়মিত পুলিশের কাছে তাদের আইনসঙ্গত অধিকার নিয়ে সরব হচ্ছে।  বিগ বাজারের সামনে বসা ঝুপড়ি দোকানিদের কথায় উঠে এল পুলিশি জুলুমবাজির কথা। 

Picture
চা-দোকানি বিভা মণ্ডল,
Picture
মাংসের দোকানি মহম্মদ আলম

— সকাল ছ’টায় আসি আর রাত দশটা সাড়ে দশটায় বাড়ি যাই। এগারোটার পরে আর দোকান করতে পারি না রোদের তাপে, মাথায় কোনো ছাউনি নেই তো। — চা ঢালতে ঢালতে কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বললেন বিভা মণ্ডল। —আগে আমার দোকান ছিল ওই উঁচু জায়গাটায়, এখন এই গাছতলায় এসে বসেছি এই টুলের ওপর। এই গরমে এগারোটার পর আর দোকানদারি করা যায় না। আমরা কেউ কেউ এরকম ভাবে অথবা ভ্যানগাড়িতে বসছি। তার সাথে আবার প্রতিদিন পুলিশের ঝামেলা।

— এই গত মঙ্গলবার চারজনকে ভ্যানে করে তুলে নিয়ে গেল। আমরা তখন বিকেল তিনটের সময় মিটিঙে সবে বসেছি। চারশো টাকা নিয়ে তবে ছাড়ল ওদের। এভাবে প্রায় রোজই পুলিশ এসে যখন তখন কাউকে না কাউকে গাড়িতে উঠতে বলে। কেউ যদি বলে, কেন উঠব বা কিছু, তখন কেস দেবার ভয় দেখায়। আমার বাড়ি আপেক্স হসপিটালের পিছনে ডি ব্লকে। এখানে আমরা তো প্রতিদিনই মিছিল করছি, মিটিং করছি, আজও আছে সাতটার সময়। কোথায় যাব বলো তো? কী করব এই দোকান না করে?
পাশে বসা একজন বয়স্ক সিকিউরিটি গার্ড বললেন, লন্ডন হচ্ছে তো তাই গরিব তাড়ানো হচ্ছে। এই যে আমরা তিন হাজার টাকা পাই, তাতে করে সংসার চলে? বারো ঘন্টা ডিউটি করতে হয়। হোটেলে খেতে হলে ষাট-সত্তর টাকা বেরিয়ে যায়। আর ওদিকে আইপিএল-এর কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে আসছে? এ সবই আসছে আমাদের মতো গরিবদের পকেট থেকে। এই যে সব জিনিসপত্রের এত দাম তাতে সংসার চলে? এখানে তো বড়ো রাস্তাই আছে। আবার রাস্তা হবে, মেট্রো হবে। তাতে আমাদের কী হবে?
পাশেই মাংসের দোকান নিয়ে বসে আছেন মহম্মদ আলম। উনি এখানে প্রায় চার বছর ধরে দোকান করেন। বাড়ি পার্ক সার্কাসে। সাইকেলে আসেন।
— বাইপাস দিয়ে আসি না, পুলিশ ধরে, আমি ভিতর দিয়ে যাই। এভাবে দোকান করার অসুবিধে হয়। চা-পান-বিড়ি বা সিগারেট ছোট্ট টেবিলে বা টুলে নিয়ে বসা সম্ভব। মাথার ওপর প্লাস্টিক দিয়ে, এভাবে এই দোকান করতে অসুবিধে হয়। প্রথমে ভেঙে দিলে কয়েকদিন বসতে পারিনি, তাই অনেক খদ্দের চলে গেছে। এখন এখানে বসছি শুনে কেউ কেউ আবার আসছে।
বাঘাযতীন বিগ বাজারের দুপাশে রাস্তার ধার জুড়ে যে হকাররা বসে আছে তাদের সাথে কথা বলতে বলতে জানা গেল যে তারা তাদের জীবিকা রক্ষার তাগিদে নিয়মিত মিটিং মিছিল করে নিজেদের সংঘবদ্ধ রেখেছে। সার্ভে পার্ক থানায় তারা ডেপুটেশনও দিয়েছে পুলিশি জুলুম আর তোলাবাজির বিরুদ্ধে। আজ রবিবার ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা নাগাদ এরকমই একটি ছোট্ট মিছিল করল স্থানীয় হকাররা। নিয়মিত মিছিলে যাওয়া, মিটিঙের শেষ অবধি থেকে সকলের বক্তব্য শোনা এবং চাঁদা দিয়ে নিজেদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে বজায় রাখতে স্থানীয় হকারদের প্রতিনিধিদের তরফে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
শ্রীমান চক্রবর্তী, হাইল্যান্ড পার্ক, ২৯ এপ্রিল।