- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

বর্ষায় ঝোঁপে-ঝাড়ে-উঠোনে গজানো আমের চারা খুঁজেই মেটে ক্ষুন্নিবৃত্তি

ধীমান বসাক। শান্তিপুর। ২৩ জুলাই, ২০২০। #

শান্তিপুরের যেখানে গঙ্গার ওপারে গুপ্তিপাড়া, সে জায়গাটা গুপ্তিপাড়া ঘাট নামেই পরিচিত। সেখানে এক বিকেলে দেখা গেল জনা চারেক মানুষ বস্তা থেকে ছোট ছোট চারাগাছ বের করে গোছ করে বাঁধছেন। খেয়াল করে বোঝা গেল ওগুলো আমের চারা, আঁটি সমেত। খানিকক্ষণের কথায় জানা গেল, ওরা মাটিতে পড়ে থাকা আমের আঁটি থেকে হওয়া চারাগাছ তুলে বেড়ান। বাড়ি চারজনেরই আড়ংঘাটা, ঐ ঘাট থেকে রাস্তা ধরে দূরত্ব প্রায় তিরিশ-বত্রিশ কিলোমিটার। তিনজন বেশ কয়েকবছর ধরে এই বর্ষার শুরুর সময়টা এই কাজ করেন, একজন এবছর থেকে করছেন।  
এদের কাজ হল কোথায় গেলে এরকম অনেক চারা মিলবে, সে জায়গা খুঁজে বের করা। পড়ে থাকা আঁটি থেকে নতুন গজানো চারা আঁটি আর শেকড় সমেত তুলে নেওয়া। যে গেরস্তের বাড়ি একটা কি দুটো এরকম চারা হয়েছে, তারা সাধারণত দিতে চান না, থাক একটাই তো, এরকমই ওদের অভিজ্ঞতা, আবার যেখানে কোন কারণে তিরিশ-চল্লিশটা চারা হয়েছে, সেখানে আবার পয়সা দিয়েও কিনতে হয়। এগুলো যায় ফুলিয়া বা বীরনগরের নার্সারিতে। মোটামুটি দর মেলে হাজার চারা পিছু হাজার টাকা। সেদিনকার সংগ্রহ যা দেখলাম চারা হাজারখানেকের বেশি হবে, কিন্তু দেড় হাজার হবে বলে মনে হল না। বারোশ হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে আজকের আয় বারো কি তেরোশ টাকা। যেখানে কিনতে হয়েছে, হয়তো শ’ছয়েক কিনতে হয়েছে, মোটামুটি ২০-২৫ পয়সা চারাপিছু, খরচ প্রায় একশো চল্লিশ টাকা। বেরিয়েছেন ভোরে। আড়ংঘাটা থেকে বেরিয়ে বাস টোটো অটো করে, ঘাট পেরিয়ে আজ গেছিলেন গুপ্তিপাড়ায়, তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। টোটো ভাড়া ঠিক করলেন, ঘাট থেকে বীরনগর পৌঁছে দেবে দরাদরি চলছে ২০০ থেকে আড়াইশো, হয়তো দুশো পঁচিশে ঠিক হবে, সেখান থেকে আবার টোটো ধরে আড়ংঘাটায় বাড়ি ফিরবেন, কম করেও রাত আটটা বাজবে, খরচ সব মিলিয়ে পাঁচশো তো বটেই, তারওপর খাওয়া, জলখাবার আছে, সারাদিনের খাটনি না হলে খাটবেন কী করে। আর এই চারজন নয়, এরকম আরও অনেকে আছেন।

আঁটিসহ আমের চারা গোছ করছেন কারবারীরা। ছবি প্রতিবেদক সূত্রে পাওয়া।


আগে বড় গাছে কলম বাঁধা হত, এখন আর তা হয় না। এখন এই আঁটি সমেত চারাগাছ নার্সারীতে মাটিতে পোঁতার পর, শেকড় মাটি ধরে নিলে, ফলদায়ী বড় গাছের কচি ডাল এনে এই গাছের সাথে কলম করা হয়, কলম জুড়ে গেলে আঁটির গাছের চারাটির ডগা কেটে বাদ দেওয়া হয়, তখন মূল গাছটা হয়ে দাঁড়ায় ঐ ফলদায়ী আমগাছেরই ফল দিতে সক্ষম একটি কলম আমগাছ। সেই চারা নার্সারি বিক্রী করে, সময় লাগে নাকি বছর তিনেক, ওঁরা বললেন। 
গুপ্তিপাড়ার কোন এক গাছের চারায় গুঁজে দেওয়া হবে হিমসাগর কি চৌসা কি ল্যাংড়ার কলম, তারপর সেই গাছ ছড়িয়ে যাবে আরো কোথাও, মানুষের হাত ধরে আমগাছের পরিযান। 
সকাল থেকে খেটে রাত আটটায় বাড়ি ফিরবেন চারজন, পকেটে দেড়শো বড়জোর দুশো করে টাকা নিয়ে। গুপ্তিপাড়া ঘাটের রাস্তায় ওরা তখনও চারা গোছ করছেন। ওদিকে তখন সন্ধে নেমে আসছে।