- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ফের জনবিক্ষোভে উত্তাল কাশ্মীর

গ্রেটার কাশ্মীর খবরের কাগজের বিভিন্ন রিপোর্টের সূত্র ধরে সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ৭ মার্চ। ছবি কাশ্মীর টাইমস থেকে#
kashmirআজ তিনদিন ধরে কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্বতস্ফুর্ত হরতাল ও বিক্ষোভ চলছে। কোনও দল, সরকারি বা বিচ্ছিন্নতাবাদী — কেউই এই বিক্ষোভ ডাকেনি। ২০১০ সালের গ্রীষ্মকালের পর ফের বিক্ষোভে কেঁপে উঠছে কাশ্মীর উপত্যকা। রাস্তায় রাস্তায় শোনা যাচ্ছে ভারত বিরোধী এবং স্বাধীনতার দাবি নিয়ে স্লোগান।
কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার খানপোরা সেতুর কাছে কয়েকজন প্রতিবাদী যুবক আফজল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদ করছিল ৫ মার্চ মঙ্গলবার। সেই সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্রাক যাচ্ছিল পাশ দিয়ে। সেই ট্রাকে উত্তেজনার বশে দুটো পাথর ছোঁড়া হয়েছিল সেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাক থেকে নেমে গোটা এলাকায় অত্যাচার শুরু করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। প্রতিবাদে আবার বিক্ষোভ হলে সেনাবাহিনী পরপর গুলি চালায় ওই প্রতিবাদী সমাবেশকে উদ্দেশ্য করে। লুটিয়ে পড়ে বেশ কয়েকজন কিশোর যুবক। চব্বিশ বছর বয়সী তাহির আহমেদ সফি-র মাথায় গুলি লাগে। মারা যায় সে। আহত হয় ক্লাস নাইনের ছাত্র পনেরো বছরের আবাস। গুলি লেগেছে তার ডান পায়ে। সে জানায়, ‘আমার গায়ে একটা গুলি লাগলে আমি পড়ে যাই। তাহির আমাকে বাঁচাতে আসে। তখন তার গায়ে অনেকগুলি গুলি লাগে।’ হত্যাকাণ্ড চালানোর পর গোটা গ্রামে অত্যাচার চালায় সেনাবাহিনী।
এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে স্বতস্ফুর্তভাবে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা। কোনও দল, সংগঠন — কেউই হরতাল বা বনধ ডাকেনি, কিন্তু স্বতস্ফুর্তভাবে বনধ চলতে থাকে। বারামুল্লা শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দাবি জানায়, অবিলম্বে যারা গুলি চালিয়েছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। মঙ্গলবার রাত থেকে সারা কাশ্মীর উপত্যকার বিভিন্ন থানা এলাকায় কার্ফু জারী হয়। শ্রীনগর শহরে রাইনাওয়ারি, নোহাট্টা, এসআরগঞ্জ, সারাফ কাদাল, জাদিবল, মাইসুমা, ক্রালখুদ থানা এলাকায় কার্ফু জারি হয়। বারামুল্লা, সোপোর, পুলওয়ামা এবং কুলগাও শহরেও কার্ফু জারি হয়। এই সমস্ত জায়গায় ৬ মার্চ বুধবার কার্ফু ভেঙ্গে মানূষ প্রতিবাদ বিক্ষোভে রাস্তায় নামে। আলি কাদালে সিআরপিএফ এমনকি অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে দিতে থাকে। ক্ষুদ্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। সিআরপিএফ তখন ওই এলাকার বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে, ভাঙচুর চালায়, জানলার কাঁচ ভেঙে দেয়, গাড়ি নষ্ট করে। এতে আরও ক্ষুদ্ধ হয়ে বিশাল সংখ্যক মানুষ নোহাট্টা চক-এ জড় হতে থাকে। পুলিশ ও সিআরপিএফ সেই জমায়েতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে, বেত চালায়। অন্তত ২৪ জন আহত হয়। এই প্রতিবাদ জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পর ফের পুলিশ ও সিআরপিএফ ঘরে ঘরে ঢুকে হামলা চালায়।
মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে বিক্ষোভ দেখায় খানিয়ার, লালবাজার, কানিতার, হাওয়াল, করণ নগর, যাকুরা, চানাপুরা, এবং বারজুলাতে। অন্তত চারটি জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মানুষ। কার্ফু অগ্রাহ্য করে চাট্টাবাল এলাকায় লোকে রাস্তায় নামে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর ছোঁড়ে।
গোটা শ্রীনগর, বুদগাঁও শহরে সম্পূর্ণ হরতাল চলে।
উত্তর কাশ্মীরে কূপওয়ারা, বারামুল্লা, হান্দওয়ারা, বান্দিপোরাতে স্বতস্ফুর্ত হরতালের পাশাপাশি মানূষ রাস্তায় নেমে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ত্রেঘাম শহরে একটি প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে। একটি সংগঠন ৬ তারিখ ত্রেঘাম চলোর ডাক দিয়েছিল। সেই প্রতিবাদ বানচাল করতে ত্রেঘাম শহরটিকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় নিরাপত্তাবাহিনী।
দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা ও কুলগাও জেলায় কার্ফু বলবৎ করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। পুলওয়ামা, কাকাপোরা শহরে বিক্ষোভ হয়। কাকাপোরায় ঘরে ঘরে ঢুকে আক্রমণ চালায় নিরাপত্তাবাহিনী। একজন বাসিন্দা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী যা শুরু করেছে তাতে ২০১০ সালে গ্রীষ্মকালে পরপর নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কাশ্মীরি যুবকের মৃত্যু, পালটা বিক্ষোভ, সেখানে গুলি চালনা ও ফের মৃত্যুর যে চক্র, তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে এবারও। উল্লেখ্য ২০১০ সালে কাশ্মীরি যুবকদের পাথর ছোঁড়ার বিক্ষোভে কয়েক মাস ধরে গুলি চালিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী শতাধিক যুবক ও কিশোরকে মেরে ফেলেছিল। কয়েক হাজার কিশোর যুবক জেলে গেছিল।
রাজ্য সরকার পুরো একদিন ইন্টারনেট ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার পর বুধবার ৬ মার্চ রাতে তা ফের চালু করে। এর আগে আফজল গুরুর ফাঁসির পর সাতদিন ধরে কাশ্মীর উপত্যকায় ইন্টারনেট ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল।
৭ মার্চ বৃহস্পতিবারও কার্ফু বলবত রাখে কর্তৃপক্ষ। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সপ্তাহের সমস্ত পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়।
সেনাবাহিনী নিজেদের সাফাই দিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে বলে, তারা প্রাণ বাঁচাতে আকাশ এগুলি ছুঁড়েছিল। তাতে কি করে কারোর গায়ে গুলি লাগতে পারে? প্রসঙ্গত, আফস্পা জারি থাকায় কাশ্মীরে সশস্ত্র বাহিনী শত অপরাধ করলেও পার পেয়ে যায়।