- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ফলতা সেজ-এর হকিকত ২

ক্যাচরা কারখানার ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক কোনো কন্ট্রাক্টর বাগিয়ে নিয়ে সেগুলি থেকে কাগজের স্টিকার ছাড়ানোর জন্য সেজ-এর আশেপাশে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে দিয়ে দেয়। গ্রামের মেয়ে বউরা রান্না করতে করতে সেই স্টিকার ছাড়ায়, কেজি পিছু দশ টাকা হিসেবে। কন্ট্রাক্টর কাগজ ছাড়ানো প্লাস্টিক নিয়ে যায়, গলিয়ে বিক্রি করার জন্য। আর সেই ছাড়ানো কাগজের স্টিকার উনুনে দিয়ে হয় রান্না। কাগজের স্টিকারে প্লাস্টিকের টুকরো লেগে থাকে, উনুনে দিলে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভরে যায় ঘর। ওপরের ছবিতে ফলতার গ্রামের ঘরে স্টিকার ছাড়ানো চলছে। ছবি প্রতিবেদকের তোলা

২০১২ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই এইরকম একটা কথা লেবারদের কানে আসতে থাকে, জোনে (ফলতা এসইজেড-এ) ডিসি-র (ডেভেলপমেন্ট কমিশনার) অফিসে বসে আলোচনা হয়েছে ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হবে। কিন্তু এইসব কথা কাজে পরিণত হয়নি। সাধারণভাবে প্রোমোজিন প্লাস্টিক কারখানায় সবচেয়ে আগে (১১-১২ তারিখ) লেবার পেমেন্টের ডেট থাকে। গতমাসে এই দিনে ১৬০ টাকা দেবার কথা লেবাররা শুনলেও যখন টাকা হাতে আসে দেখা যায় ১৪৫ টাকাই দিচ্ছে। এতে কিছু লেবার টাকা হাতে নিলেও লেবারে লেবারে ঝামেলা বেধে যায়, যারা ১৪৫ টাকা নিয়ে নেয় তাদের সাথে অন্য লেবারদের মারপিট বাধে, কারণ লেবাররা জানত জোনের প্লাস্টিক কারখানায় রোজ বেড়ে ১৬০ টাকা হবে। আবার এটাও হাওয়ায় ভাসতে থাকে যে, ১৬০-এর থেকে ১৫ টাকা পিএফ, ইএসআই বাবদ কেটে নেওয়া হবে। প্লাস্টিক কারখানায় সমস্ত জোনে যত লেবার তার অর্ধেকেরও বেশি লেবার কাজ করে। এখানে যারা কাজ করে তার প্রায় ৯০% লেবারের কোন দক্ষতা লাগে না কাজ করার জন্য। কারণ কেবল প্লাস্টিক ঝাড়াইবাছাই-এর কাজ, এখানে মহিলা লেবারদের সংখ্যাটাও সবচেয়ে বেশি। আর পরিশ্রমটাও প্রচণ্ড। তাই লেবারটা যেমন চাইলেই পাওয়া যায়, আবার বছরভর এরা প্রত্যেকে যে কাজ করে তা নয়। তাই পিএফ, ইএসআই কাটাটা তাদের কাছে লাভজনক নয়, আর আগে কোথাও কোথাও এটা চালু হলেও তার কাগজপত্র তারা কেউ হাতে পায়নি। এইসব কারণে তারা আর ঠকতে রাজি ছিল না। ওইদিন অনেকে পেমেন্ট না নিলেও আর তেমন কিছু ঘটার আঁচ বাইরে থেকে পাওয়া যায়নি। পরদিন ছিল শনিবার ১২ তারিখ। সেদিন সকাল থেকেই প্রোমোজিনের সাথে অন্যান্য কিছু কারখানার লেবার মিলে আর  প্লাস্টিক কারখানায় বলে পেমেন্ট না নেওয়ার কথা। এই মাগগি-গণ্ডার বাজারে তাতে আর সবাই রাজি হয়ে কারখানার গেট বন্ধ করে দেয় এবং ফলতা স্পেশাল ইকনমিক জোনের ১ আর ২নং মেন গেট, যা আর সব কারখানার প্রবেশপথ, সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পুলিশ অনুরোধ করে, আজ শনিবারের বাজার। অফিসারেরা সব নেই, বেকার আজ এসব করে কী লাভ, কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। এদিকে গেটে এই লেবাররা ওই প্রচণ্ড গরমে যাতে জলটুকুও না পায় সেই ব্যবস্থা করে জোন কর্তৃপক্ষ জল বন্ধ করে দেয়। তখন স্থানীয় মিষ্টির দোকান থেকে ২০ লিটারের ড্রাম ভাড়া করে লেবাররা তেষ্টা মেটায়। অন্যদিকে বেলা যত গড়ায় লেবাররা ভাবে যে, কারখানা তো বন্ধ করে দেওয়া গেছে, সুতরাং আর গেটে থেকে দরকার নেই। আস্তে আস্তে দুপুর দুটোর কাজে ঢোকার সময়টুকু গেট আটকে রেখে তারপর বাড়ি চলে যেতে থাকে। ৩-৩.৩০টের দিকে কলাতলাহাটের উপপ্রধান সহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা গেটে আসে এবং চেঁচায় ‘কার এত সাহস যে সরকারি গেট আটকে রেখেছে?’
পুনশ্চ : এমাসের ১৩ তারিখে প্রোমোজিনে আর অনিতায় লেবার পেমেন্টের ডেট ছিল, শোনা যাচ্ছে লেবারদের এবারেও কোম্পানি ১৪৫ টাকা দিয়েছে, লেবাররা টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে, ১৪ তারিখে মালিকরা পরবর্তী কী করা যায় তাই নিয়ে কলকাতায় মিটিং করেছে।

সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ফলতা, ৩০ মে