- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

পেড নিউজ খারাপ, পেড জনমত সমীক্ষা খারাপ আর ভোটের মুখে মিডিয়াতে সরকারি বিজ্ঞাপন?

আমরা সকলেই কমবেশি জানতাম যে টাকা দিয়ে খবর করানো হয়, জনমত সমীক্ষার ফলাফলকে বিকৃত করা হয়। সম্প্রতি একটি হিন্দি টিভি চ্যানেল তাদের স্টিং-অপারেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছে, মিডিয়ার সঙ্গে মিলেজুলে জনমত সমীক্ষা যারা করে, সেই এজেন্সিগুলির মধ্যে দু-একটি বাদ দিয়ে সবাই কোনো না কোনো দলের কাছ থেকে টাকা খেয়ে, সেই দল বেশি সিট পাবে বলে দেখাতে রাজি। একটি সমীক্ষা কোম্পানি ‘কিউআরএস’ এমন কথাও বলে দিয়েছে, তারা একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ২০০ সিট পাবে, আর একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে সমাজবাদী পার্টি ২০০ সিট পাবে! অর্থাৎ জনমত সমীক্ষাগুলি, যেগুলি এমনিতেই কতটা জনমতের প্রতিফলন ঘটায় তা নিয়ে সন্দেহ আছে, সেগুলি টাকার বিনিময়েও করা হয়। কর্পোরেট মিডিয়া ঘটনার দায় চাপিয়েছে সমীক্ষা কোম্পানিগুলির ঘাড়ে, তাদের শো-কজ নোটিস ধরিয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি, মিডিয়া ছাড়া ওই ধরনের সমীক্ষার কোনো অর্থ হয় না.
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ভোটের আগে বিভিন্ন পার্টিগুলো টাকা দিয়ে খবর করায়, সেকথা কয়েক বছর আগে মিডিয়াতেই এসেছিল। ধরাও পড়েছিল কেউ কেউ। ফের এবছর সে কথা তুলেছেন আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি স্বয়ং, ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘ইন্ডিয়ান নিউজপেপার সোসাইটি’র প্ল্যাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠানে।
তবে একটা কথা তিনি তোলেননি। বিভিন্ন সরকারগুলোর ঠিক ভোটের আগে সরকারি খরচে কাগজে বা টিভিতে পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন দেয়, সেই সরকারের ‘সাফল্য’র খতিয়ান দিয়ে। এবারও দিচ্ছে, দিল্লির কংগ্রেস সরকার, গুজরাতের মোদির সরকার, আমাদের রাজ্যে তৃণমূল সরকার। সরকারি টাকা, অর্থাৎ জনতার ট্যাক্সের টাকায় এই বিজ্ঞাপনে সরকারি দলটির ভোট-প্রচার হয়। ট্যাক্সের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মিডিয়ায় দলীয় প্রচার কতটা ন্যায্য, কতটা নৈতিক? আইএনএস-এ হাজির বড়ো মিডিয়ার সম্পাদকরা সম্ভবত এসব কথা তোলেনি। কারণ এই প্রচারে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ঘরে আসে। এতে মিডিয়া-পার্টি উভয়ের লাভ।
ক্ষতি সাধারণ মানুষের।
শুধু বেআইনি ‘পেড নিউজ’ বা ‘পেড জনমত সমীক্ষা’ নয়, নির্বাচনী গণতন্ত্রকে ধোঁকার টাটিতে পরিণত করার বন্দোবস্ত আছে আপাতভাবে আইনি সরকারি বিজ্ঞাপনের মধ্যেও। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের বড়াই করা বড়ো মিডিয়ার ভোটের মুখে সরকারি বিজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করার হিম্মত আছে কি?