- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

পূর্ণ লকডাউনের প্রথম দিনে তালাবন্ধই রইল আড়বান্দীর প্রাথমিক ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। বাচ্চার টীকা দেওয়াতে এসে ফিরে গেলেন কেউ কেউ

শমিত ও পর্ণব। শান্তিপুর। ২৩ জুলাই, ২০২০। #

করোনা সংক্রমণের হার কমাতে রাজ্যজুড়ে শুরু হওয়া ফি সপ্তাহে দু’দিন পূর্ণ লকডাউনের আজ প্রথমদিন। গতকাল শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হসপিটালের আরো একজন নার্স এবং একজন ডাক্তারের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসায় আজও খোলা গেলনা হাসপাতাল। বরং ওই ডাক্তারের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরীক্ষার জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন ব্লক ও পৌর এলাকা মিলিয়ে শান্তিপুরের আড়াই লক্ষ মানুষ। শান্তিপুরের পৌরপিতা ও রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অজয় দে’র সাথে আজও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, মতিগঞ্জের কাছে একটি পৌরক্লিনিকে জরুরী পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা হচ্ছে।

তালাবন্ধ আড়বান্দী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র

এমন অবস্থায় গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির কোনো ভূমিকা থাকতে পারে কিনা খতিয়ে দেখতে যাওয়া হয়েছিল ডংক্ষীরা, আড়বান্দী, বাথানগাছি, চাঁদড়া ইত্যাদি গ্রামীণ এলাকায়। বাথানগাছি হাইস্কুলের সামনে আড়বান্দী-২ গ্রাম পঞ্চায়েত কার্য্যালয়ের ভিতরে বাইরে তালা ঝুলতে দেখা গেল। উল্লেখ্য, আড়বান্দী অঞ্চলের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এই কার্য্যালয়ের ভিতরেই অবস্থিত। বন্ধ দোকানঘরের চালার নীচে অঝোর বৃষ্টিতে আটকে পরা স্থানীয় চাষী অচিন্ত্য সরকার বলছিলেন, দু’একজন মা তাদের বাচ্চা নিয়ে এসেছিলেন টীকা দেওয়ার জন্য। গেটে তালা দেখে এই বৃষ্টির মধ্যেই ঘুরতে হয়েছে তাদের। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক পূজা মৈত্রকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, হয়তো বাইরে কোনো ক্যাম্পে গেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বন্ধ থাকার তো কথা নয়। তখন বেলা একটা।

এরপর আমরা যাই দু’আড়াই কিলোমিটার দূরে আড়বান্দী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, চাঁদড়ায়। সেখানেও তালাবন্ধ দরজা। চত্বরে দেখা গেলনা কাউকে। পুনরায় ফোন করা হল বি.এম.ও.এইচ. পূজা মৈত্রকে। তিনি জানান, আজ ভি.এইচ.এন.ডি. গুলো হওয়ার কথা ছিল কোথাও কোথাও। লকডাউনের জন্য হয়তো হয়নি। যেহেতু মায়েরা আসতে পারবেনা, তাই বন্ধ আছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র তো খোলাই ছিল। কিন্তু বেনিফিসিয়ারিরা আসতে পারবেনা বলে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আজকের টীকাকরণ কর্মসূচী স্থগিত রাখা হয়েছে। ওগুলো কাল হবে। তিনি আরো বলেন, একটা ভায়াল খুলে হয়তো একটা বাচ্চাকে টীকা দেওয়া হল, আরো চারজন বাচ্চা না পেলে পুরো ভায়ালটাই নষ্ট। তাছাড়া বেলা দুটোর মধ্যে বেনিফিসিয়ারিরা না এলে স্বাস্থ্যকর্মীরা ফালতু বসে থেকে কী করবেন? কিন্তু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র কেন বন্ধ – সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া গেলনা।

এই অফিসের ভেতরেই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র।

খানেক বাদে পূজাদি নিজেই ফোন করে বলেন, আপনারা চাঁদড়া সাবসেন্টারে গেছেন তো, ওখানকার দিদি আমার এখানেই বসে আছেন। টি.বি.র ওষুধ নিতে এসেছেন। সেন্টার খোলা হয়েছিল। কোনো বেনিফিসিয়ারি না থাকায় উনি ডটসের ওষুধ নিতে এসেছেন। নিয়ে গিয়ে আশাকর্মীদের দেবেন। আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবেন। সাবসেন্টার সব জায়গাতেই খোলা আছে। আমাদের এখানে ফুলিয়া হাসপাতালের, নবলার, সব জায়গার সাবসেন্টারই খোলা হয়েছে।

অচিন্ত্য সরকার ও স্থানীয় আরো কয়েকজন বলছিলেন, চাঁদড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন পঞ্চায়েতের ডাক্তার আছেন। বেশ ভালো ওষুধ দেন। কিন্তু ছোটখাটো সমস্যার বাইরে আমাদের ছুটতে হয় শান্তিপুর হাসপাতাল, নয়তো বাদকুল্লা বা কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল। এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর হাল ফিরলে তো আমরা বেঁচেই যাই।

এই দাবী নিয়ে পুনরায় রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অজয় দে’র কাছে দাবিদাওয়া জানানো হবে এবং ব্লকের অন্যান্য গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর অবস্থাও সরেজমিনে দেখেশুনে আসা হবে।