- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

পরিবেশ দিবস পালনে উৎসাহ, স্ববিরোধও

অনিন্দ্য মোদক, শান্তিপুর, ১৬ জুন#

world-environment-day-5th-june_2011

পরিবেশ দিবস পালনের উদ্দেশ্যে শান্তিপুর ও ফুলিয়াতে কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়। সকালে শান্তিপুর পৌরসভার এক বর্ণাঢ্য পদযাত্রা শান্তিপুর শহর পরিক্রমা করে। বিভিন্ন স্কুল, সাংস্কৃতিক সংস্থা ও কোচিং সেন্টার অংশগ্রহণ করে। এই দীর্ঘ পদযাত্রায় কিছু স্কুল ও সাংস্কৃতিক সংস্থার উদ্যোগে কিছু অভিনবত্ব ছিল। ছোটোদের বন ও বন্যপ্রাণের প্রতীকি সাজ নজর কাড়ে। এই প্রশংসনীয় আয়োজনে নজর কাড়ে বৈপরীত্য-ও। পদযাত্রায় শুরুতেই ছিল মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর বিশাল কাট আউট। বিশ্ব পরিবেশ রক্ষার মতো স্থানীয় রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও কি তাহলে সমান জরুরি? তাই হয়ত রাজনীতির হাত থেকে পাঁচ-ই জুনও রেহাই পায় না। চোখে পড়ল, পদযাত্রীদের মধ্যে প্লাস্টিকের জল ব্যবহারের দৃশ্য। এটুকু বাদ দিলে, প্রতি বছরের মতো পৌরসভার এবারের উদ্যোগও যে পুরবাসীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে পারল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রতি বছরের এই দিনটাতে ঝুড়ি কোদাল বালতি নিড়ানি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়া যাদের কাজ, তারা এবারও ছিল। শহরের রায় কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রীরা সকাল হতে না হতেই কে ডি প্রামাণিক স্ট্রীটের পূর্বপ্রান্ত্রের আগাছা ছেঁটে আবর্জনা তুলে রাস্তা ঝাঁট দিয়ে জল দিয়ে ধুয়ে ঝকঝকে করে তুলল। রাস্তার দু-পাশে রেখে গেল কিছু প্রশ্ন — প্ল্যাকার্ডে লিখে — বৃষ্টি নেই কেন, তাপমাত্রা বাড়ছে কেন, জল অপচয় গাছ কাটা বন্ধ হবে কবে? অপ্রয়োজনে মোবাইল কেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার বিকেলে এক আলোচনাচক্রে এই প্রশ্নগুলোরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল ছাত্রছাত্রীরা, সমাধানও বাতলাল তারাই।
দু-দিন বাদে সাতই জুন অন্যমন পত্রিকা গোষ্ঠী ফুলিয়ায় পরিবেশ দিবস পালন করে। সন্ধ্যেয় ফুলিয়া রঙ্গমঞ্চ সংলগ্ন প্রাঙ্গনে এক সভায় অংশ নেয় বেশ কিছু মানুষ। দূষণ ও তার প্রতিকার নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয় ওই সভায়। এলাকার বিশিষ্ট জন ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের বক্তব্যে উঠে আসে কৃষিকাজে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, জলদূষণ ও প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতার কথা। প্রতিকার হিসেবে জৈব সারের ব্যবহার, জল সংরক্ষণ, বনসৃজন ও বন সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়। প্রশ্ন ওঠে বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে পরিবেশ বিজ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে তা আদৌ কোনো কাজে আসছে কি না।
এরপর-ও থেকে যায় কিছু কথা — ধারে ভারে এই উদ্যোগগুলো কোনো অংশেই ছোটো নয়। তবে কি দায়িত্ব কি শুধু এদেরই? তাই এই বিপুল জনসংখ্যার নিরিখে তাকে কি আদৌ বড়ো বলা যায়? এই আয়োজনগুলোর বাইরে যে লক্ষ কোটি মানুষ তারা কি সত্যি জাগবেন? এ প্রশ্ন হতাশার, উদ্বেগেরও!