- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

পইড়া কী হইবে? পইড়া কী হইবে

মহিদুল মণ্ডল, ভাতশালা, উত্তর ২৪-পরগনা#

পইড়া লোম হইবো …… কথাটা ঝাঁঝের সঙ্গেই বলে ফেলল সুদীপ্ত – সাত বছরের সুদীপ্ত, পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে, সরকারি ফ্রি প্রাইমারী স্কুলে, দেবীনগর নিম্ন বুনিয়াদী প্রাথমিক বিদ্যালয়। আমি ওর কথা শুনে চুপ মেরে গেলাম। আজ পড়াতে গিয়ে দেখলাম ও কিছুতেই পড়বে না। আজ পড়াতে গিয়ে দেখলাম ও কিছুতেই পড়বে না, কাঁদছে, রেগে বসে আছে, পড়বে না। আর বলছে, পইড়া কী হইবে? আমি বলি ‘পড়লে অনেককিছু জানতে পারবে। আর ‘পইড়া কি হইবে’ এটা জানার জন্যই তো পড়া দরকার। এরপরই রেগে গিয়ে সুদীপ্ত বলে, ‘পইড়া কী হইবে? ‘পইড়া লোম হইবো ….’।

গোঁড়াতেই সুদীপ্তর পড়তে ভালো লাগত না ও কিছুতেই পড়তে চায় না তাই মা-বাবা আর দিদিমনি ওকে মেরেছে খুব। কোনরকম দুষ্টামি করলেই ওকে কেউনা কেউ মারত। ও কোন কথাই শোনে না তা ওর মা লাঠি ধরেই আছে। পড়ার সময় সুদীপ্ত সর্বদা ঘরের কোনে বা চৌকির তলায় লুকিয়ে থাকে। গত আগস্ট মাস থেকে আমি ওর প্রাইভেট টিউটর। মাসিক দু’শো টাকা বেতনের গ্রাজুয়েট গৃহ শিক্ষক। সপ্তাহে পাঁচ দিন দৈনিক ঘন্টা দুই কখনও বা তার বেশি পড়ানোর চেষ্টা করি। মাঝে-মাঝে কাছাকাছি ঘুরতে নিয়ে যাই। প্রথমে যখন পড়ানো শুরু করি তখন ছাত্রর গলা থেকে স্বরও বেড়ত না, যেন চিঁ চিঁ করত। আমি আদর করতে কান্না করত, চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ত আর বলত আমায় কেউ ভালোবাসে না, আমাকে সবাই মারে। আমি বকাবকি করি না, মারধরও করি না তাতে প্রথম প্রথম সুদীপ্ত বেড়ে ওঠে, ওর বাবা-মার তাতে অসোন্তোষ, কেন মাস্টার মশাই মারে না! ধীরে –ধীরে সুদীপ্ত একটু একটু পড়তে শেখে আর বুলি ফোটে ও মাঝে মাঝে বলে ‘তুমি পোলাপানরে সুখে থাকতে দেবা না, শুধু পড়া শুনার কথা কও’। আসলে ও কিছুতেই পড়তে চায় না – পড়বে না – পড়বেইনা।

আমি কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইন দিয়ে হাজার হাজার প্রার্থীর সাথে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে নিয়োগের ফর্ম তুলেছি।