- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

থ্যালাসেমিয়ার সঙ্গে লড়াই

দিলীপ মণ্ডল, রবীন্দ্রনগর, মহেশতলা, ৩ অক্টোবর#

আমার ছেলের নাম সৌমিত্র মণ্ডল। দেড় বছর বয়সে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। ওর মাথাটা বড়ো ছিল, হাঁটতে জানত না, খেতে চাইত না। আমাদের আঙ্কেল (প্রতিবেশী) ছোটাছুটি করে অনেক জায়গায় ওকে নিয়ে গেলেন। বেহালা ট্রামডিপোর ওখানে এক জায়গায় বলল, ওকে ব্লাড দিতে হবে। ওরাই বলল, তুমি মারোয়ারি হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করো। সোসাইটি আমাদের মেম্বার হতে বলল। আমরা পাঁচছয়শো টাকা দিয়েছিলাম। প্রথমে ব্লাড কিনেই দিয়েছিলাম। নিজেদের আত্মীয়স্বজন কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। পাড়ার ছেলেরা আমায় অনেক সাহায্য করেছে। প্রথমে আশুতোষ স্পোর্টিং দুবছর ক্যাম্প (ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প) করেছে। একবার ২০ জন (রক্তদাতা), আর একবার ২২ জন হল। ওরা বন্ধ করে দিল। অনেককে বললে ব্লাডের কার্ড দেয়। রবীন্দ্রনগর স্কুলের পাশে চন্দনদার বাড়িতেও ক্যাম্প হয়েছিল। ওখানে ৩৫ জন হল। সেটা দশ বছর আগেকার কথা।

এরপর আমাদের ক্লাব হল। নেতাজি সুভাষ রিক্রিয়েশন ক্লাব। সেই ক্লাব থেকে ক্যাম্প হচ্ছে। এবছর (গত রবিবার) ৫০ জন ব্লাড দিয়েছে। গতবছরও ৫০ জন হয়েছিল। আরও বেশি হত, প্রচার হয়নি। আমার গাড়িটা (অটো) নেই। আজ তিনবছর বসে আছি। কাগজপত্র নিয়ে ঝামেলা চলছে, গাড়ির রুট পারমিট দিচ্ছে না সরকার। আমার পুরোনো গাড়িটা দিয়ে দিয়েছি একজনকে, কারবালা রোডে চালায়। আমি ঘুরে ঘুরে রঙের কাজ করি। তারাতলা রুটে যেদিন পাই অন্যের গাড়ি চালাই।

এখন ছেলের বয়স তেরো বছর। মাসে দুবার রক্ত দিতে হয়। গরমকালে ক্রাইসিস পড়ে। ওর বিনেগেটিভ লাগে। এই যে ক্যাম্প হল, আমাকে সমস্ত কার্ড দেওয়া হবে। সেই কার্ড আর দুশো টাকা সোসাইটিকে দিলে ওরা রক্ত, ওষুধ, টিফিন সব বন্দোবস্ত করবে। ওরা বিনেগেটিভ ব্লাড না পেলে তখন আমাদের ডোনার জোগাড় করতে বলে। তখন সবার কাছে যাই। এখানে কারো বিনেগেটিভ নেই। সামনের বাড়িতে একজনের বিনেগেটিভ আছে বটে, কিন্তু ওর ইউরিক অ্যাসিড আছে বলে ওর রক্ত চলবে না। আর একজন আছে, সে দেয় না। ঘোষপাড়ায় একজনের আছে, যতবার যাই, সে আসানসোলে কাজ করে, তাকে পাওয়া যায় না। গত রবিবার ক্যাম্পে যে ডাক্তারবাবু ছিলেন, ওঁর কাছ থেকে একবার বিনেগেটিভ ব্লাড পেয়েছিলাম। এইভাবে চলছে।

ছেলেটা পড়াশুনো বেশি করে না। খেলাধুলো করে। সাইকেল চালায়। আমরা বেশি চাপ দিই না। আমাদের ডাক্তার বলে দিয়েছে, চাপ দেওয়া যাবে না। এই ছেলের ওপরে মেয়ে আছে আমার। সে কলেজে পড়েছে, এখন চাকরির চেষ্টা করছে। তবে বাড়িতে বিনেগেটিভ ব্লাড কারো নেই।