- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘তোরা তো জানিস ও কেমন। তবু যদি ওকে মেরে ফেলতে চাস, তবে মেরে ফেল’

বঙ্কিম, অশোকনগর, ২৮ জুন#

ষাটের দশকের আলফ্রেড হিচককের সিনেমা 'সাইকো'র দর্শকামের দৃশ্য
ষাটের দশকে আলফ্রেড হিচককের সিনেমা ‘সাইকো’তে দর্শকামের দৃশ্য

একটি রোগা পটকা ছেলেকে মারতে মারতে রাস্তা দিয়ে নিয়ে চলেছে কয়েকজন লোক। পথের ধারে মানুষ বলছে, এভাবে মারবেন না, ওযে মরেই যাবে। তবুও বাইগাছী থেকে মারতে মারতে তাকে অশোকনগর থানায় নিয়ে চলেছে, প্রায় আধা ঘন্টার পথ। অসহায় ভাবে মার খাচ্ছে চিঁড়ে চ্যাপটা ছেলেটা। রাজিবুল মোড়ল। বয়েস পনেরো ষোলো বলে মনে হলেও বিশ বছর হবে। এমন নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে কারণ, সে পাশে বাড়ির মহিলা স্নান করে যখন কাপড় ছাড়ছিলেন, লুকিয়ে দেখেছিল। ও মাঝে মাঝেই এমনই করে। উঁকি মেরে মহিলাদের বাথরুমে অথবা স্নান করার সময় লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করে। এরজন্য প্রথম যখন ধরা পড়ে তখন ওর বয়স পনেরো বছর হবে। প্রচুর মারধোর করা হয়। এরপরও কয়েকবার ধরা পড়ে। এবং গ্রামের মানুষ মেয়েদের রক্ষা করতে আর তার অসভ্যতা দূর করার জন্য বেধড়ক ধোলাই দেয়। তবুও বদলায় না তার এই অভ্যাস। এরপর এলাকার সমাজকর্মী দীপক চক্রবর্তী ও তোজাম্মেল হকের উদ্যোগে বছর দুই আগে মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছি।
ওর মা জামিলা বিবি বলেন, যাওয় আসার খরচ বাদেও মাসে ওষুধের জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচশ টাকা রেগেছি। আর রাজিবুল বলে, ওষুধ খেয়ে ঠিকমতো সেলাই-এর কাজ করতে পারছিলাম না, কেমন ঘুমঘুম পেত। ফলে চিকিৎসা শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে। রাজিবুল এমনিতেও কোনও একটা কাজে লেগে থাকতে পারে না। কখনও সেলাই কখনও মাঠে কখনও বা লরির খালাসির কাজও করেছে। ওর মা বলে, ছেলে যখন এমন করে তো ভাবলাম, বিয়ে দিইয়ে দেখি তো যদি ঠিক হয়ে যায়। বিয়ে দিয়েছেনও। সতেরো বছরের পুত্র বধূ ময়রম বিবি সুশ্রী ও বুদ্ধিমতী, সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেনও। সে বোঝে সবকিছুই। ওদের বছর দুয়ের একটা শিশুকন্যা আছে। আর স্বামী স্ত্রীর বেশ সুসম্পর্ক। আজ স্বামীকে নিয়ে সালতে বাপের বাড়ি যাচ্ছে।
রাজিবুল বলে, অন্য সময় কোনও ব্যাপার না/ ঠিকই থাকি। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন হয়, যে কোনও কিছু ভাবতে পারি না। গা গরম হয়ে যায়। মাথা কেমন করে। লুকিয়ে মহিলাদের নগ্ন অবস্থায় দেখার চেষ্টা করি। কখনও কাউকে ছুঁই না বা ধরিও না। সে ইচ্ছাও হয় না। আর আমার স্ত্রী পাশে কাপড় ছাড়লেও ফিরেও তাকাই না। ইচ্ছে করে না। বন্ধুদের মোবাইল ফোনে কত নগ্ন ছবি দেখি, কিন্তু আমার সেসব দেখতেও ইচ্ছে করে না। কত কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে বাথরুমের ছাদের থেকে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করি। যখন ধরা পরি, প্রচণ্ড মার খাই। যেন তখন কিছু বুঝতে পারি না। এমনও হয়েছে, আমায় তুলে আছাড় মেরেছে। তবুও বেঁচে আছি। কি যে হয়!
ওর মা বলল, রবিবার ২৩ জুন যখন ও পাশের বাড়ি উঁকি দিয়েছিল, তারপর আমার মেজো ছেলে ওকে মেরে ঘরে বন্ধ করে রাখল। পরে কখন ও লুকিয়ে পড়েছিল। কিন্তু পাশের বাড়ির লোক ওকে খুঁজে না পেয়ে আমাকে, আমার ছেলে ও স্বামীকে ধরে মারল। কী করব বলুন। আমি ওদের বললাম, তোরা তো জানিস ও কেমন। তবু যদি ওকে মেরে ফেলতে চাস, তবে মেরে ফেল। এরপর ওকে খুঁজে বার করে পাশের বাড়ির লোক দুই ছেলে দুই মেয়ে বাবা মা সবাই মিলে পেটালো। মারতে মারতে থানায় নিয়ে গেল।
এরপর-ও জামিলা বিবি থানায় গিয়ে পুলিশকে সব কথা বলে। পুলিশ তার কথা শুনে রাজিবুলের সাথে কথা বলে রাতের বেলা রাজিবুলকে ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলে। মাঝখান থেকে থানায় কোনও একজন জামিনের জন্য তাদের কাছ থেকে তিনশ’ টাকা নিয়ে নেয়। ২৩ তারিখ এমন ঘটনা ঘটেছে, আজ ২৭ তারিখ পর্যন্ত রাজিবুলকে ডাক্তার দেখানো হয়নি। আজ রাজিবুল তাদের অন্ধকার খুপড়ি স্যাঁতসেঁতে ঘরের মধ্যে মাটিতে শুয়ে পড়েছিল। শরীরে মনে বিধ্বস্ত রাজিবুল।
দর্শকাম বা ভয়ারিজম : সাধারণত নিজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন (মূলত) বিপরীত লিঙ্গের কোনও মানুষের নগ্ন দেহ বা যৌন কার্যকলাপ লুকিয়ে দেখার অভ্যাসকে বলে দর্শকাম বা ভয়ারিজম। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্তত ৫০ শতাংশ পুরুষ দর্শকামী। মনোবিজ্ঞান মতে এটি একধরণের যৌন বিকার। মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটা অনেক কমিয়ে আনা যায়। সাধারণ আইনে এটা অপরাধ নয়, তবে কিছু দেশ দর্শকাম-কে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সাম্প্রতিকতম সংযোজন ভারত। তবে বেশিরভাগ সমাজেই দর্শকাম-কে যৌন অপরাধ হিসেবে ধরা হয়।