- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

তোমরা বাইরে থেকে নকল কাপড় এনে শুয়ালকুচি বলে বিক্রি করে আমাদের ভাত মেরে দিচ্ছ

৩১ মার্চ, তাপস দাস, গৌহাটি#

২৯-৩০ মার্চ আসামের কামরূপ (গ্রামীণ) জেলার শুয়ালকুচি বস্ত্রনগরীতে স্থানীয় তাঁতিদের মধ্যে এক ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। তারা হোলসেলার ও দোকানদারদের নকল বেনারসী শাড়ি রাস্তার ওপর জড়ো করে পুড়িয়ে দেয়। এই গণবিক্ষোভ দমন করতে ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়, জারি হয় কার্ফু ও ১৪৪ ধারা.
আসামের ঐতিহ্যবাহী শুয়ালকুচি সিল্ক যারা উৎপাদন করে, সেই তাঁতিরা অসংগঠিত, বিভিন্ন মালিকের অধীনে কাজ করে। এখানে ২০০৪ সাল অবধি সিপিকি (তাঁতি) ছিল ১৭,০০০। ২০১১-তে সেটা নেমে এসেছে ৭,০০০-এ। ১০,০০০ কমে যাওয়ার কারণ কী? কারণ হচ্ছে সুতোর দাম, মোগা টস কাপড় আর সাদা পাট কাপড়, দুটোই খুব দামি। এই সুতো থেকে শুধু অসমিয় মেখলা নয়, দামি শাড়িও হয়। ২০১১ সালে মোগা কাপড়ের প্রতি কিলোতে দাম ছিল ১৬০০ টাকা। ২০১২ সালে সেই দাম বেড়ে হয়েছে ৪২০০-৪৩০০ টাকা। আর পাট সুতোর দাম ছিল কিলো প্রতি ১৪০০ টাকা, সেটা হয়েছে ৩৭০০-৩৮০০ টাকা। এই মোগা টস সুতো বা পাট সুতো সবটাই আসাম প্রোডাক্ট নয়, এগুলো আসে কর্নাটক, মাইসোর, ব্যাঙ্গালোর ইত্যাদি জায়গা থেকে। আর নকল সুতো, যা আসল মোগা বা পাট নয়, তৈরি হয় হরিয়ানা মাদ্রাজ ইত্যাদি অঞ্চলে। নকল সুতো এখানে আসে না, সরাসরি প্রোডাক্ট বাজারে চলে আসছে। শুয়ালকুচির তাঁতিদের তৈরি একটা আসল মোগা কাপড়ের দাম যেখানে কম-সে-কম ১৬,০০০ টাকা, সেখানে ওরা দিচ্ছে ৩০০০-৩৫০০ টাকায়। স্বাভাবিকভাবে যারা আসল সুতোর প্রোডাকশন করছে, তারা মার খাচ্ছে। যে মালিকের আন্ডারে তাঁতীরা কাজ করছে, তার বিক্রি হচ্ছে না। ফলে সে ওয়ার্কারদের পেমেন্ট দিতে পারছে না। ২০০৪-১১ পর্যায়ে ওয়ার্কার কমে গেছে ৭০০০. সবই মহিলা শ্রমিক। এতে মালিক ও তাঁতী সবারই ক্ষোভ। তাদের বক্তব্য, তোমরা বাইরে থেকে নকল কাপড় এনে শুয়ালকুচি বলে বিক্রি করে আমাদের ভাত মেরে দিচ্ছ? রাজ্য সরকারের ভরতুকি হিসেবে একশো কোটি টাকা এসেছিল, তার এক টাকাও শুয়ালকুচিতে যায়নি। শুয়ালকুচি সিল্ক আসামে অত্যন্ত বিখ্যাত। এর হাই-স্কিল্‌ড মহিলা তাঁতিদের সিপিনি বলা হয়। তাদের সাঙ্ঘাতিক খারাপ অবস্থা এখন। এই অবস্থায় একটা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটছে। শুয়ালকুচি স্ট্যাম্প মেরে নকল কাপড় বাজারে বিক্রি হচ্ছে, নকল সেই বেনারসির স্টক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে পুলিশ এসে যেভাবে অত্যাচার করেছে সেটা অভাবনীয়। পুলিশের গুলিতে আহত দশজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, আন্দাজ করা যায়, এরা সবাই মারা যাবে।