- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

‘তুমি পড়ো, তুমি ভুলে যাও; তুমি দেখো, তুমি মনে রাখো; তুমি করো, তুমি বোঝো’

১৩ নভেম্বর, জিতেন নন্দী#

শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সমর বাগচি, ছবি প্রতিবেদকের তোলা, ১৩ নভেম্বর
শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সমর বাগচি, ছবি প্রতিবেদকের তোলা, ১৩ নভেম্বর

কলকাতা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে শ্রীরামপুর। সেখান থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে পেয়ারাপুর অঞ্চলের বড়বেলু গ্রামে গড়ে উঠেছে শ্রমজীবী হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট। ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজ শুরু হয়েছে। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে ইন্দোজাপান স্টীল্‌স লিমিটেড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ও পিপল্‌স হেল্‌থ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল ‘শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতি’র কাজ। গড়ে উঠেছিল বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল। আজ সেই প্রকল্প শ্রীরামপুরে প্রসারিত হয়েছে।
আজ আমরা গিয়েছিলাম বড়বেলু গ্রামের এই নতুন হাসপাতালটিতে। যখন বেলুড়ের কাজ শুরু হয়েছিল, তখন সেখানে জড়ো হয়েছিলেন বেশ কিছু হৃদয়বান চিকিৎসক, যাঁরা চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাকে নিছক একটি ব্যবসা হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। আজ বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম করে এক অতি লাভজনক এবং নৃশংস অমানবিক বাণিজ্য ডানা মেলেছে চতুর্দিকে। মিডিয়া বলছে এটাই এ যুগের দস্তুর! সত্তর-আশির দশকের জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই স্বাস্থ্য-বাণিজ্যের নির্মমতার বিরুদ্ধে একটা বিদ্রোহ প্রকাশ পেয়েছিল। তারই প্রতিফলন ঘটেছিল ‘শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প’-এর মতো প্রকল্পগুলোতে। আজ সেই আন্দোলন নেই। কিন্তু বেলুড়-শ্রীরামপুরের মতো উদ্যোগগুলো রয়েছে। এখানকার কর্মীরা ভেবেছেন, এই পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের কাজকে এগিয়ে নিতে হলে দরকার নতুন চিকিৎসক, দক্ষ সেবক-সেবিকা এবং স্বাস্থ্যকর্মী। তাই বড়বেলু গ্রামের এই প্রকল্পে হাসপাতালের পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে শ্রমজীবী বিদ্যালয়। সেখানে বেশ কিছু ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুরু হয়েছে শিক্ষাদান কর্মসূচি। নানান প্রান্ত থেকে আসছেন বহু অভিজ্ঞ মানুষ। তাঁরা এই শিক্ষাদানের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যোগদান করেছেন।
আজ প্রবীণ শিক্ষাকর্মী সমর বাগচি এখানে আসেন। সকাল এগারোটা থেকে একটা পর্যন্ত টানা দু-ঘন্টা তিনি ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেন। উপস্থিত ছিলেন এখানকার পড়ানোর কাজে যুক্ত আরও কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা।
প্রথমে ভূগোল দিয়ে শুরু হয়। নিজেদের শরীরকে ব্যবহার করে সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ ও তারাদের পারস্পরিক অবস্থান ও গতি বোঝানো হয়। এরপর হয় বিজ্ঞানের আলোচনা। পাস্কালের সূত্র, আর্কিমিদিসের নীতিকে হাতেকলমে অত্যন্ত সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝানো হয়। এত লম্বা সময় জুড়ে ছেলেমেয়েদের আগ্রহী অংশগ্রহণ ছিল সত্যিই উৎসাহব্যাঞ্জক। তারাও তাদের শিক্ষককে গান গেয়ে শোনায়, হাতে লেখা পত্রিকা দেখায়। সমর বাগচি বলেন একটা চীনা প্রবাদের কথা : ‘তুমি পড়ো, তুমি ভুলে যাও; তুমি দেখো, তুমি মনে রাখো; তুমি করো, তুমি বোঝো।’ অনুভব করি, সত্যিই হাতে-কলমে শেখার তুলনা নেই।