- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

তিলুটিয়া আশ্রমে প্রয়াত শ্যামলী খাস্তগীরের কবরে খেলে বেড়াচ্ছে ছাগশিশু

শ্যামলী খাস্তগীরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁর বন্ধুদের পক্ষ থেকে দুটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। ২৩ জুন ছিল ওঁর জন্মদিন। সেইদিন শান্তিনিকেতনে ওঁর বাসভবন পলাশবাড়িতে ওঁর ওপর রচিত বাংলা ও ইংরেজিতে ৮০টি লেখা নিয়ে ণ্ণশ্যামলী’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এছাড়া, যে পরমাণু শক্তির বিরুদ্ধে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত শ্যামলী খাস্তগীর লড়াই করে গেছেন, সেই বিষয়ে বলবার জন্য গুজরাত থেকে এসেছিলেন ওঁরই বন্ধু সুরেন্দ্র ও সঙ্ঘমিত্রা গাডেকর। ২৩ জুন পলাশবাড়িতে এবং ২৬ জুন কলকাতার র‍্যাডিকাল হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাঘরে তাঁরা দুজন বক্তব্য রাখেন। নিছক বক্তৃতাই নয়, পরমাণু শক্তি বিরোধী আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতির ভালোমন্দ নিয়ে খুবই প্রয়োজনীয় পারস্পরিক আলাপ হয় এই দুটি সভায়। এখানে আমি তাঁদের কিছু দরকারি বক্তব্য উদ্ধৃত করব।

শ্যামলী খাস্তগীরের মাটির কবরের ওপর খেলছে ছাগশিশু।
শান্তিনিকেতনে পলাশবাড়ির বাগানে শ্যামলী খাস্তগীরের চিত্রকীর্তিতে বসুন্ধরা।
স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখছেন সুরেন্দ্র গাদেকর, ২৩ জুন, ছবি শমীক সরকার।


বড়োলোকেরা ডিজেলের ভর্তুকির ফয়দা নেবে বলে মার্সিডিজ-বেন্‌জের মতো গাড়ি ডিজেল মডেল বের করেছে

আমাদের ভাবা দরকার, কীভাবে লোকশিক্ষার মাধ্যমে মানুষ বুঝবে সরকারের শক্তি-নীতির (এনার্জি পলিসি) কী কী খারাপ। আমরা যদি এটা নিয়ে ভাবি, তাহলে দু-চারটে ব্যাপার দেখা দরকার। প্রথমত, যখন থেকে দেশ স্বাধীন হয়েছে অর্থাৎ গত ৬০ বছরের ব্যবধানে আজ দেশে ১৪০ গুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। খুব বড়ো মাপে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ হয়েছে। তা সত্ত্বেও ত্রিশ কোটির বেশি মানুষ — অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে জনসংখ্যা যা ছিল — আজও বিদ্যুতের ব্যবহার থেকে বঞ্চিত। আজকের জনআন্দোলনে এটা একটা বড়ো বিষয়। মানুষ দেখছে, এই বিদ্যুৎ আমার জন্য নয়। এটা সামাজিক ন্যায়ের একটি বিষয়। লোকে দেখছে, আমি জমি দিচ্ছি, আমার স্বাস্থ্যের ওপর এই উৎপাদনের খারাপ প্রভাব পড়ছে, অথচ এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমার কোনো লাভ নেই।
দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎ সকলে না পাওয়ার ফলে, সরকারি শক্তি-নীতিতে তার একটা খারাপ প্রভাব পড়েছে। সরকারকে আলাদা আলাদা জিনিসের ওপর ভর্তুকি দিতে হয়েছে। কেরোসিনের ওপর ভর্তুকি না দিলে দেশের এক-তৃতীয়াংশ লোক অন্ধকারে রয়ে যাবে। তার জন্য কেরোসিনে ভর্তুকি দেওয়া হল। কেরোসিনের ভর্তুকির কারণে ডিজেলের ওপর ভর্তুকি দিতে হয়েছে। না হলে কেরোসিন আর ডিজেলে ভেজাল দেওয়া হবে এবং বহু ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাবে। ডিজেলের ভর্তুকির ফলে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে দেশের অতি-ধনী সম্প্রদায়। মার্সিডিজ-বেন্‌জের মতো গাড়ি ডিজেল মডেল বের করেছে আর লোকে ডিজেলের ভর্তুকি নেওয়ার জন্য ওই গাড়ি কেনে। এই হল একটা গোলমাল।

দ্বিতীয় গোলমাল হল, আমি যদি এখান থেকে ১ টন মাল ট্রেনে করে গুজরাতে নিয়ে যাই, আমার ৯ গুণ কম শক্তি-খরচ হবে। কিন্তু ভারতে ডিজেলের ওপর ভর্তুকি থাকার কারণে ট্রাক ট্রেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবং লোকে সড়কপথে ট্রাকে করে মাল নিয়ে যায়। এর ফলে আমরা একটা অকার্যকর ব্যবস্থার মধ্যে আটকে গেছি। এর থেকে বেরোনোর কোনো রাস্তা দেখা যাচ্ছে না। এরকম আলাদা আলাদা করে দেখলে আমরা আমাদের শক্তি-নীতির বহু গোলমাল দেখতে পাব। কীভাবে এর থেকে বেরোব, সেটা একটা বড়ো বিষয়। 
আমরা যদি আগামীকাল সমস্ত পরমাণু কেন্দ্র বন্ধ করে দিই, কেউ টেরও পাবে না।
সুরেন্দ্র গাডেকর ব্যাখ্যা করেন, আমাদের দেশে কত বেশি হইচই করে আর কত বিপুল খরচ করে কত সামান্য পরমাণু বিদ্যুৎ তৈরি হয়। তিনি বলেন, ণ্ণভারতে বিদ্যুৎ (ইলেকট্রিসিটি) এবং শক্তিকে (এনার্জি) এক করে দেখা হয়। কিন্তু সেটা তো সত্যি নয়। বিদ্যুত শক্তির এক ছোটো অংশ মাত্র। দেশের মোট শক্তির ১১-১২% হল বিদ্যুৎ। বাকি ৮৮%-এর মধ্যে বিদ্যুৎ নেই। পেট্রোল, পেশি-শক্তি, কাঠের ব্যবহার হচ্ছে। এগুলোকে আমরা দেখি না। আমরা শক্তি বলতে বিদ্যুৎ ভেবে নিই। বিদ্যুৎ শক্তির এক সামান্য অংশ আর পরমাণু বিদ্যুৎ তো বিদ্যুতেরও এক সামান্য অংশ। আমাদের দেশে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তার আড়াই শতাংশ হল পরমাণু বিদ্যুৎ। … আমরা যদি আগামীকাল সমস্ত পরমাণু কেন্দ্র বন্ধ করে দিই, তাহলে কেউ টেরও পাবে না।’
সরকার এবং মিডিয়া পরমাণু শক্তি বিরোধী আন্দোলনকে কোনো আমল দিতে চাইছে না
‘শুধু তামিলনাড়ুর কুডানকুলামেই নয়, দেশের যেখানে যেখানে নতুন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কথা চলছে, হরিয়ানার ফতেহাবাদে বা মহারাষ্ট্রের জায়তাপুরে মানুষের প্রতিরোধ অন্তত জোরালোভাবেই চলছে। এদিক থেকে দেখলে আজ পরমাণু বিরোধী আন্দোলনের পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। আর খারাপ কোনদিক থেকে? এসব প্রতিরোধ হওয়া সত্ত্বেও সরকারের ওপর এর কোনো প্রভাব নেই। সরকার মনে করে নিয়েছে, এসবের ওপর আমল দেওয়ার কোনো দরকারই নেই। মিডিয়াও এই আন্দোলনকে কোনো আমল দিতে চাইছে না। কুডানকুলামে ২০,০০০ মানুষ জড়ো হয়েছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে তার কোনো প্রভাব নেই; মহারাষ্ট্রের সংবাদপত্রে এ নিয়ে একটা শব্দও নেই। তার ফলে এই প্রতিরোধ স্থানীয় বিষয় হয়ে রয়ে গেছে। স্থানীয় হিসেবে এগুলো বেশ বড়ো, কিন্তু জাতীয় স্তরে কোনো প্রভাব নেই।’
জিতেন নন্দী, কলকাতা ও শান্তিনিকেতন, ২৭ জুন